Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

আরও রক্ষণশীল হচ্ছে নাকি ভারত! পুরনো চুক্তি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্তে প্রশ্ন

মঙ্গলবারই বেজিং জানিয়েছিল, চুক্তি নিয়ে ভারতের সংশয় দূর করতে আগ্রহী তারা। বুধবার চিনের উপ বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং শুয়েনের দাবি, ‘‘আরসিইপি-তে যোগ দিলে লাভ ভারতেরই। কারণ, এতে রফতানির বিপুল বাজার খুলবে ভারতীয় পণ্যের জন্য।’’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:০৭
Share: Save:

ষোলো দেশের প্রস্তাবিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (আরসিইপি) ছেড়ে বেরিয়ে আসার পরে বাণিজ্যে আরও বেশি রক্ষণশীলতার খোলসে সেঁধিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে কেন্দ্র। প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মনমোহন জমানায় হওয়া যাবতীয় চুক্তি খতিয়ে দেখার। উল্টো দিকে, ভারতের বাজারকে পাখির চোখ করে তাকে চুক্তির টেবিলে টেনে আনতে দিল্লির তোলা সমস্ত সমস্যা মেটাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে চিন। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিনা পণ্যে দেশের বাজার ছেয়ে যাওয়ার আশঙ্কা যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু তা হলে আরও আগে দিল্লি তা নিয়ে সুর চড়াল না কেন? এ ভাবে হঠাৎ সমস্ত পুরনো চুক্তি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের ভাবমূর্তি মলিন করবে বলেও আশঙ্কা তাঁদের।

মঙ্গলবারই বেজিং জানিয়েছিল, চুক্তি নিয়ে ভারতের সংশয় দূর করতে আগ্রহী তারা। বুধবার চিনের উপ বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং শুয়েনের দাবি, ‘‘আরসিইপি-তে যোগ দিলে লাভ ভারতেরই। কারণ, এতে রফতানির বিপুল বাজার খুলবে ভারতীয় পণ্যের জন্য।’’ যুক্তি, শেষে ১৬টি দেশের এই চুক্তি হলে, এটিই হবে বিশ্বের বৃহত্তম অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল। যেখানে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক লোকের বাস। দুনিয়ার ২৫%-৩০% উৎপাদন হয় যে অঞ্চলে।

বিশেষজ্ঞরা মানছেন যে, এই চুক্তির জেরে চিনা পণ্যে ভারতের বাজার ছেয়ে গেলে বা নিউজ়িল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার দুগ্ধজাত পণ্য ঘরে-ঘরে ঢুকে পড়লে, বিপদে পড়বেন চাষিরা। মাথায় হাত পড়তে পারে ছোট শিল্প ও ব্যবসায়ীদের। কিন্তু যে ভাবে দিল্লি একেবারে শেষ মুহূর্তে চুক্তি থেকে বেঁকে বসেছে, তাতে বিশ্ব মঞ্চে ভারতের প্রতিশ্রুতির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।

দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের অর্থনীতির অধ্যাপক দিব্যেন্দু মাইতির কথায়, ‘‘ভারতের কৃষি বা শিল্প যে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যোঝার অবস্থায় নেই, তা কেন্দ্র জানে। কিন্তু এই বিশ্বায়নের জমানায় বিচ্ছিন্ন থেকে বড় অর্থনীতি বা উন্নত দেশ হয়ে ওঠা সম্ভব নয়। তা হলে আগামী দিনে কী ভাবে তাদের সেই লড়াইয়ে নামার উপযুক্ত করে তোলা হবে? যখন থেকে এই চুক্তির কথা শুরু, সেই ২০১২ সাল থেকেই বা ওই চেষ্টা করা হল না কেন? এখনও কোথায় তার রূপরেখা?’’ তাঁর আশঙ্কা, এ ভাবে প্রতিযোগিতা এড়াতে গিয়ে ভারত আন্তর্জাতিক পণ্য নির্মাণের ‘ভ্যালু চেনে’ ব্রাত্যই থাকবে।

আর এক অর্থনীতিবিদের প্রশ্ন, ‘‘এখন হঠাৎ পুরনো চুক্তি খতিয়ে দেখতে বসলে, কোন ভরসায় ভারতের সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তিতে হাত মেলাবে কোনও দেশ?’’ তাঁর মতে, কেন্দ্রে সরকার বদলায়। কিন্তু আগের সরকারের চুক্তি বা নীতি পরের সরকার এসে আমূল পাল্টে দিলে, আন্তর্জাতিক দুনিয়ার বিশ্বাস ধাক্কা খাবে। আস্থায় চিড় ধরবে বিদেশি লগ্নিকারীদের। তাই প্রতিযোগিতা না-এড়িয়ে আগামী দিনে বরং তাতে লড়ে বিশ্বের বাজার দখলের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি, পরিকাঠামো ইত্যাদি তৈরির পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।

যদিও প্রধানমন্ত্রী কেন এই চুক্তি ছেড়ে বেরিয়ে আসার ‘সাহসী সিদ্ধান্ত’ নিলেন, এ দিনও মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে তা ব্যাখ্যা করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। পরিকল্পনা রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে তা প্রচারেরও।

অন্য বিষয়গুলি:

RCEP India China UPA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy