পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু করতে মরিয়া হয়ে ময়দানে নেমেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ বার তাই সেটির জন্য প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ করতে কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ একটি দাবি মেনে নিল তারা। জিএসটি-তে শিল্পোন্নত রাজ্যগুলির জন্য যে বাড়তি ১ শতাংশ কর বসানোর প্রস্তাব ছিল, কংগ্রেসের বিরোধিতায় তা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় সরকার।
গতকাল রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে এ বিষয়ে ঐকমত্য তৈরির পরে আর দেরি না করে আজই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তা ছাড়া, জিএসটি চালু হওয়ার পরে রাজ্যগুলির রাজস্ব ক্ষতি হলে পাঁচ বছর পর্যন্ত তার শতকরা ১০০ ভাগ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও জানিয়েছে কেন্দ্র। সংবিধান সংশোধনী বিলেই তার উল্লেখ থাকবে।
এতদিন কেন্দ্রের প্রস্তাব ছিল, প্রথম তিন বছর ১০০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ দিলেও চতুর্থ বছরে ৫০ শতাংশ এবং পঞ্চম বছরে ২৫ শতাংশ ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার। কিন্তু রাজ্যসভার সিলেক্ট কমিটি সুপারিশ করে, পাঁচ বছর পুরো ক্ষতিপূরণই দিক কেন্দ্র। গতকাল অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকেও সেই সিদ্ধান্ত হয়।
শিল্পোন্নত রাজ্যগুলির জন্য বাড়তি ১ শতাংশ কর তুলে দেওয়ার প্রস্তাবও সিলেক্ট কমিটি করেছিল। জিএসটি চালু হলে যে সব রাজ্যে বেশি কারখানা রয়েছে, অর্থাৎ উৎপাদন হয়, তাদের রাজস্ব ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কার কথা ভেবেই এই বাড়তি করের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কারণ, যেখানে পণ্য কেনা হবে, সেখানে জিএসটি বসবে। ফলে যে সব রাজ্যে উৎপাদনের তুলনায় পণ্য কেনার পরিমাণ বেশি, সেই রাজ্যগুলির লাভ। কংগ্রেস অবশ্য এর বিরোধিতা করে যুক্তি দেয়, এতে জিএসটি চালু করে অভিন্ন কর ব্যবস্থার লক্ষ্যপূরণ হবে না। কেন্দ্র পাঁচ বছর ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিতে রাজি হওয়ায় কোনও রাজ্যের অর্থমন্ত্রীই আর এ নিয়ে আপত্তি তোলেননি।
সংবিধান সংশোধনী বিলে এই বদলের পর বিরোধীদের রাজি করানো অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে বলে মনে করছে মোদী সরকার। রাজ্যসভায় এ নিয়ে আলোচনার জন্য পাঁচ ঘন্টার সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তবে দিনক্ষণ ঠিক হয়নি এখনও।
মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তের পর এ বার জেটলি ফের কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে দৌত্য শুরু করবেন। তবে জিএসটি-র হার ১৮ শতাংশে বেঁধে রাখার যে দাবি কংগ্রেস তুলেছে, তা নিয়ে অবশ্য এখনও কোনও ফয়সালা হয়নি। বিল পাশের পথে এখনও তা সবচেয়ে বড় কাঁটা। জেটলির পাশাপাশি সব রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরাই একমত, সংবিধানে করের হারের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া ঠিক নয়। সাধারণ মানুষের উপর করের বোঝা কমাতে তার হারের নিম্ন ও ঊর্ধ্বসীমা ঠিক করা নিয়ে অবশ্য অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে কংগ্রেস এখন সুর নরম করে কি না, এ বার সেটাই দেখার।
সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ হলেই যে জিএসটি চালু হয়ে যাচ্ছে, এমন নয়। কারণ এরপর মূল জিএসটি বিল পাশ করাতে হবে মোদী সরকারকে। যে বিলে কেন্দ্র ও রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মোদী সরকারের সঙ্গে রাজ্যগুলির নতুন করে বিবাদ শুরু হয়েছে। আজকেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অরুণ জেটলির সঙ্গে বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন, ছোট ব্যবসায়ীদের উপর শুধু রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। সেখানে কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ তাঁরা মেনে নেবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy