কোটাক মহিন্দ্রা ব্য়াঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর উদয় কোটাক। ছবি: সংগৃহীত।
বাইশ গজে একটা বাউন্সারেই ভেঙে গিয়েছিল পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন। তবে অস্ত্রোপচার করিয়ে প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলেন তিনি। ক্রিকেট মাঠে নয়। পা রেখেছিলেন ব্যাঙ্কিংয়ের ময়দানে। সে দিনের ২০ বছরের গুজরাতি যুবকই আজ বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যাঙ্কার উদয় কোটাক। ব্লুমবার্গ বিলিয়োনেয়ার্স ইন্ডেক্স-এ ৬১ বছরের উদয়ের সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা।
ক্রিকেটের কেরিয়ার শুরু না হতেই শেষ হওয়ার পর কিছু দিন পারিবারিক ব্যবসা সামলেছিলেন উদয়। তবে তাতে বেশি দিন টেকেননি। এর পর মুম্বইয়ের যমুনালাল বজাজ ইনস্টিটিউ অব ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ-এ ভর্তি হন। সেখান থেকেই এমবিএ ডিগ্রি। পড়াশোনা শেষ করে ফাইনান্স সেক্টরে মনোনিবেশ করেন ২৬ বছরের উদয়। ১৯৮৫-এ পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের কাছে ধারদেনা করে জুটিয়ে নেন ৩০ লক্ষ টাকা। সেই পুঁজি নিয়ে বিনিয়োগ সংস্থা খোলেন। পরের বছর পার্টনার হিসেবে হাত ধরেন মহিন্দ্রা গোষ্ঠীর। কোটাক মহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের পথচলার সেই শুরু। সালটা ১৯৮৬।
অতিমারিতে ধুঁকতে থাকা ভারতীয় অর্থনীতির এই মন্দায়ও কোটাক মহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের মুনাফা ঈর্ষণীয়। ব্যাঙ্কঋণ নিয়ে একের পর এক দুর্নীতিতে দেশের ব্যাঙ্কিং সেক্টর জর্জরিত হলেও তাতে উদয় বা তাঁর সংস্থার নাম এখনও পর্যন্ত জড়ায়নি। উল্টে গত দু’বছরেরও বেশি সময় বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করতে পেয়েছেন কোটাক মহিন্দ্রা ব্য়াঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর উদয়। অপেক্ষাকৃত ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টরে বিনিয়োগ কমিয়েছেন। সেই সঙ্গে কর্পোরেট সুশাসনের পরিচয়ও দিয়েছেন। অতিমারির আবহে ঋণ শোধ করাই যখন গ্রহীতাদের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, সে সময় ফাইনান্স ইন্ডাস্ট্রিতে যে সমস্ত সংস্থা পুঁজি জোগাড় করেছে, কোটাক মহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক তাদের মধ্যে অন্যতম। সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছে লোভনীয় হয়ে উঠেছে উদয়ের সংস্থার শেয়ার। এবং এই কৌশলে ফলও মিলেছে হাতেনাতে। চলতি বছরে কোটাক মহিন্দ্রার শেয়ারদর বেড়েছে ১৭ শতাংশ।
আরও পড়ুন: বাধ্যতামূলক নয়, ইচ্ছুকদেরই কোভিড টিকা দেওয়া হবে: কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক
আরও পড়ুন: আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়াতে মহারাষ্ট্র থেকে দিল্লি পাড়ি দেবেন ৩ হাজার কৃষক
২০১৫-তে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) ঋণশোধ করা নিয়ে অডিট শুরুর নির্দেশ দিলেই ব্যাঙ্কিং সেক্টরের একের পর এক দুর্নীতি প্রকাশ পেতে থাকে। তবে সে সময়ও কোটাক মহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের গায়ে আঁচ লাগেনি। ছোট এবং মাঝারি সংস্থায় বিনিয়োগ আগেই বন্ধ করেছিল সংস্থা। তার সুফলও পেতে থাকেন সংস্থার কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে মার্কেট ভ্যালুর ভিত্তিতে কোটাক মহিন্দ্রার মুনাফা অপ্রত্যাশিত ভাবে ২৭ শতাংশ বেড়েছে।
বিনিয়োগ সংস্থা হিসেবে পথচলা শুরু করলেও বিভিন্ন দিকে শাখা ছড়িয়েছে উদয়ের সংস্থা। লোন পোর্টফোলিয়ো থেকে স্টক ব্রোকিং, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিং, বিমা অথবা মিউচ্যুয়াল ফান্ড— বিনিয়োগকারীদের কাছে নানা পথ খুলে দিয়েছেন উদয়। উদয়ের সাফল্যে খুশি তাঁর ব্যবসার সঙ্গী মহিন্দ্রা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান আনন্দ মহিন্দ্রা। তিনি বলেন, “আমার মতে, বিশ্বের স্মার্ট ব্যাঙ্কারদের অন্যতম উদয়। বিশ্বের ধনীতম ব্যাঙ্কার হওয়ার পথে আমরা কেবল তাঁর হয়ে প্রক্সি ব্যাঙ্কার হিসেবে কাজ করেছি। সবচেয়ে বড় কথা, উদয় জানেন কী ভাবে সুশাসন আর স্মার্ট কৌশলের মাধ্যমে ব্যাঙ্ককে টিকিয়ে রাখতে হয়। ”
২৬ বছরের আনকোরা উদয়ের সঙ্গে হাত মেলানোর সময়ও তাঁর প্রতি আস্থা ছিল বলেও জানিয়েছেন আনন্দ। তিনি বলেন, “আমার পরিষ্কার মনে আছে, বাবা এবং কাকা দু’জনেই বলেছিলেন, কেন বিজনেস স্কুলফেরত এই আনকোরা ছোকরার উপর এত ভরসা করছি? আমি বলেছিলাম, আমার মন বলছে, এঁর সঙ্গে নিজেদের নাম জুড়তে পেরে এক দিন গর্ববোধ হবে। ওঁর সেই সম্ভাবনা নিয়ে একটা দৃঢ় আস্থা ছিল আমার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy