Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Business

আশা-নিরাশার দ্বন্দ্বে শুরু নতুন অর্থবর্ষ

অর্থবর্ষের শেষ দিনে সমস্ত স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে বিপুল হারে সুদ ছাঁটাইয়ের বিজ্ঞপ্তি স্থির আয়ে লগ্নিকারীদের কাছে ছিল বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

অমিতাভ গুহ সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২১ ০৬:২৮
Share: Save:

গত বৃহস্পতিবার আমরা পা রেখেছি নতুন ২০২১-২২ অর্থবর্ষে। ফেলে এসেছি বেদনায় ভরা একটি বছর। অতিমারির প্রকোপে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। কোটি কোটি লোক কাজ হারিয়েছেন। কয়েক মাস কাজ-কারবার, ব্যবসাপত্তর স্তব্ধ হয়ে থাকার জের এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি অর্থনীতি। তবে ব্যাতিক্রম শেয়ার বাজার। বছর খানেক আগে যে সেনসেক্স ২৫ হাজারে তলিয়ে গিয়েছিল, তা-ই শেষ পর্যন্ত সব ক্ষতি পুষিয়ে আশাতীত লাভের খোঁজ দিয়েছে লগ্নিকারীদের। চরম প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই।

গত (২০২০-২১) অর্থবর্ষে নিফ্‌টি ৮৫৯৮ থেকে ৬০৯৩ পয়েন্ট বেড়ে পৌঁছেছে ১৪,৬৯১ অঙ্কে। শতাংশের হিসেবে লগ্নিকারীদের খাতায় যোগ হয়েছে ৭০.৮৬% লাভ। গত ১০ বছরে এই রিটার্ন নজিরবিহীন। করোনায় ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন অর্থনীতি ছন্দে ফিরবে এবং গোটা বিশ্ব অর্থনীতিকে টেক্কা দেবে, এমন আশাই জাঁকিয়ে বসেছিল লগ্নিকারীদের মনে। মুনাফা তোলার তাগিদ এবং বিশ্ব বাজারের অনিশ্চয়তায় মাঝে-মধ্যে পড়লেও, আশা ছাড়েনি বাজার। ১৫ ফেব্রুয়ারি সেনসেক্স ৫২,১৫৪ অঙ্কে উঠে গড়ে উচ্চতার নতুন রেকর্ড। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আতঙ্কে ৩১ মার্চ অর্থবর্ষ শেষ হয় পতন দিয়েই। সেনসেক্স ৬২৭ পয়েন্ট খুইয়ে থামে ৫০ হাজারের নীচে (৪৯,৫০৯)। ১৫৪ পয়েন্ট খুইয়ে নিফ্‌টি হয় ১৪,৬৯১।

নতুন বছরের প্রথম দিনে অবশ্য হতাশ হননি লগ্নিকারীরা। ১ এপ্রিল ৫২১ পয়েন্ট বেড়ে সেনসেক্স ফের ৫০ হাজার পেরিয়ে যায়। বছরের শুরুটা ভাল হলেও আবার অনিশ্চয়তা গ্রাস করতে পারে বাজারকে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এরই মধ্যে বড় আঘাত হেনেছে বেশ কিছু রাজ্যে। স্থানীয় ভাবে লকডাউনও শুরু হয়েছে কিছু শহরে। ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র মুম্বই তথা মহারাষ্ট্রের অবস্থা বেশ খারাপ। এমন পরিস্থিতি অশুভ শিল্প-বাণিজ্য এবং গোটা অর্থনীতির কাছে। ফলে বাজারের পক্ষে শক্তি ধরে রাখা শক্ত হতে পারে।

তার উপর অর্থবর্ষের শেষ দিনে সমস্ত স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে বিপুল হারে সুদ ছাঁটাইয়ের বিজ্ঞপ্তি স্থির আয়ে লগ্নিকারীদের কাছে ছিল বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। ঠিক যেমনটি হয়েছিল ২০২০ সালের ১ এপ্রিল, যখন বিস্তর সুদ কমানো হয়েছিল অতি জনপ্রিয় বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে এবং তা করা হয়েছিল লকডাউন শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যেই। ঠিক যে সময় গোটা দেশ চরম অনিশ্চয়তায় ডুবেছে। এ বার অবশ্য বিজ্ঞপ্তি জারির ২৪ ঘণ্টা পেরোনোর আগেই তা ফেরানো হয়, হয়তো পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোটের মধ্যে জনরোষের কথা ভেবেই।

এমন এক নির্দেশ অর্থ মন্ত্রকের বড় কর্তাদের নজর এড়িয়ে জারি হয়ে গিয়েছে, অর্থমন্ত্রীর এই যুক্তি অনেকেই মানতে নারাজ। বরং আশঙ্কা, ভোট পর্ব মিটলে জুলাইতেই কমবে সুদ। অথচ কত মানুষের রুজি কমেছে, কত জনের চাকরি নেই, প্রবীণেরা সুদ নির্ভর, চড়া তেল-গ্যাস-সহ বিভিন্ন পণ্যের দামে নাজেহাল মধ্যবিত্ত। বন্ড ইল্ড এবং পণ্যমূল্য বৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও সুদ ছাঁটাইয়ের কথা ভাবা হচ্ছে এমন এক সময়, যখন মানুষের মনে সুদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছিল। কিছু গৃহঋণ সংস্থা এবং ব্যাঙ্ক নয় এমন কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি সুদের হার বাড়িওয়েছে জন আমানত প্রকল্পে।

অদূর ভবিষ্যতে কী হারে সুদ কমানো হতে পারে তার ইঙ্গিত স্পষ্ট। সেটা সত্যি হলে তবে ঘোর বিপদে পড়বেন সুদ নির্ভর প্রবীণ নাগরিকেরা। আরও একটি প্রশ্ন, দু’একটি স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প বন্ড ইল্ডের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ইল্ড যখন এতটা বেড়েছে, তখন সেই সব প্রকল্পে সুদ কমানোর প্রশ্ন ওঠে কি করে? এনএসসি-তে সুদ কমানো হলে সুদের হার কমবে ভারত সরকারের সেভিংস বন্ডেও। এনএসসি-র তুলনায় ৩৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ দেওয়া হয় এই বন্ডে। সুদের ব্যাপারে দেওয়াল লিখন যখন স্পষ্ট, তখন পরিকল্পনা ছকে নিয়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে মানুষকে যতটা সম্ভব লগ্নি করে ফেলতে হবে নিত্য পরিবর্তনশীল নয় এমন সব প্রকল্পে। পাশাপাশি চোখ রাখতে হবে মিউচুয়াল ফান্ড এবং শেয়ারে লগ্নির দিকেও। সরকারি প্রকল্পে সুদ যত কমবে তত মানুষকে ঠকাতে ভুয়ো সংস্থা গজিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

অন্য বিষয়গুলি:

Share Market Business
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy