সেনসেক্স ৪৬১.২২ পয়েন্ট পড়ে ৬১,৩৩৭.৮১ অঙ্কে থেমেছে। গত দু’দিনে তা পড়ল ১৩৪০.১০। প্রতীকী ছবি।
ত্র্যহস্পর্শ!
আমেরিকার ফেডারাল রিজ়ার্ভ, ব্রিটেনের ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ড এবং ইউরো অঞ্চলের ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক— মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আরও এক দফা সুদের হার বাড়াল আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই তিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তার বিরূপ প্রভাব পড়ল বিশ্ব বাজারে। ব্যতিক্রম নয় ভারতও। শুক্রবার নিয়ে টানা দু’দিনে হাজার পয়েন্টের বেশি পড়ল সেনসেক্স। মাথা নামাল নিফ্টি। আর আশঙ্কা বেশি করে দানা বাঁধল উন্নয়নশীল অর্থনীতির উপরে এই সুদ বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে।
বুধবার থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে তিন শীর্ষ ব্যাঙ্কই ৫০ বেসিস পয়েন্ট করে সুদ বাড়িয়েছে। আমেরিকায় সুদ পৌঁছেছে ৪.২৫-৪.৫০ শতাংশে। অর্থনীতিবিদদের একাংশের বক্তব্য, সুদ বৃদ্ধি প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু অপ্রত্যাশিত ছিল ফেডারাল রিজ়ার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের বার্তা। তিনি পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, সে দেশে মূল্যবৃদ্ধির হার ২ শতাংশের কাছাকাছি নামা পর্যন্ত এই ‘লড়াই’ চলবে। হয়তো পরের বছরের শেষ পর্যন্ত। সে ক্ষেত্রে আমেরিকায় ইতিমধ্যেই শ্লথ হওয়া অর্থনীতির ফের মন্দার খাদে পড়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সেই আশঙ্কা বাড়ছে ইউরোপেও। অর্থনীতিবিদদের আরও বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে আমেরিকার থেকেও বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে উন্নয়নশীল দেশগুলি। কারণ, অতিমারি পরবর্তী সময়ে মূল্যবৃদ্ধির হার চড়তে থাকায় তখন থেকেই আমেরিকার বাজারে চাহিদা কমছিল। বড়দিনের ছুটি এগিয়ে এলেও খুচরো বাজারে বিক্রিবাটা যে ততটা বাড়েনি তা স্পষ্ট হয়েছে তাদের সাম্প্রতিকতম রিপোর্টে। এর মধ্যে সুদ বৃদ্ধির ফলে সে দেশের সাধারণ মানুষ এবং শিল্পের ঋণের খরচ আবারও বাড়তে চলেছে। আরও কমতে পারে চাহিদা। এর জেরে আমেরিকায় পণ্য রফতানিকারী দেশগুলির রফতানিও ক্রমাগত মাথা নামাচ্ছে। অক্টোবরেই যেমন ভারতে তা সরাসরি কমেছে। নভেম্বরে থেকেছে কার্যত অপরিবর্তিত। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে চলেছে। তাঁদের ব্যাখ্যা, আমেরিকার মতো উন্নত এবং বৃহত্তম অর্থনীতি তাদের মন্দার ধাক্কা হয়তো সুচারু ভাবে সামলে নেবে। কিন্তু সে দেশের মন্দার প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলির পক্ষে কাটিয়ে ওঠা সহজ নয়। ভারতের অভ্যন্তরীণ চাহিদা সন্তোষজনক জায়গায় থাকলেও বিশ্ব অর্থনীতি শ্লথ হলে জিডিপি প্রত্যাশা অনুযায়ী এগোতে পারবে না।
এ দিন সেনসেক্স ৪৬১.২২ পয়েন্ট পড়ে ৬১,৩৩৭.৮১ অঙ্কে থেমেছে। গত দু’দিনে তা পড়ল ১৩৪০.১০। নিফ্টি ১৪৫.৯০ পয়েন্ট নেমে হয়েছে ১৮,২৬৯। বাজার বিশেষজ্ঞদেরও বক্তব্য, ফেডারাল রিজ়ার্ভের বার্তায় এ দিন বিশ্ব বাজার ছিল নিম্নমুখী। তার প্রভাব পড়েছে ভারতেও। যদিও এ দেশের শেয়ার সূচকগুলি এমন উচ্চতায় রয়েছে, যা অর্থনীতির অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কিছুটা সংশোধন বাজারের পক্ষে ভালই।
আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্তের বক্তব্য, ‘‘মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলায় সারা বিশ্বে শীর্ষ ব্যাঙ্কগুলির আগ্রাসী ভাবে সুদ বৃদ্ধি বিশ্ব অর্থনীতির স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। অর্থনীতির অন্যান্য উপাদানকে উপেক্ষা করে শুধু সুদ বাড়িয়ে চললে তা কিন্তু অর্থনীতিকে সমস্যায় ফেলে দিতে পারে।’’ তবে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে ভারত ভাল জায়গায় আছে বলে বক্তব্য তাঁরও। তিনি মনে করেন, আর্থিক প্রক্রিয়াকে সচল রেখে মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলার দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নেবে ভারত।
অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির বিভাগীয় প্রধান সৈকত সিংহরায়ের ব্যাখ্যা, তাদের জন্য বিশ্ব অর্থনীতি শ্লথ হলে আমেরিকার সমস্যাও কম নয়। কারণ, তারা অনেকটাই বিদেশি পণ্য ও পরিষেবার উপরে নির্ভরশীল। যেমন, সে দেশে তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা রফতানিতে ভারতের বড় ভূমিকা আছে। ফলে আমেরিকায় মন্দা এলে সমস্যায় পড়বে ভারতও। তবে তাঁদের আরও বক্তব্য, আপাতত মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলা ছাড়া এখন আমেরিকার সামনে উপায় নেই। তার জন্য সুদ বৃদ্ধিকে অস্ত্র করেছে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy