Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Fuel Price

Economy: করোনার পর যুদ্ধ! পেট্রল-ডিজেলের দরে ছেঁকা, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দামও বাড়বে

পাঁচ রাজ্যে ভোটের কারণে বহু দিন এক জায়গায় বেঁধে রাখা হয়েছিল পেট্রল-ডিজ়েল এবং গৃহস্থের হেঁশেলে ব্যবহৃত রান্নার গ্যাসের দাম।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

অমিতাভ গুহ সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২২ ০৬:২৩
Share: Save:

করোনার ধাক্কা প্রায় কাটিয়ে উঠলেও চলতি অর্থবর্ষের এই শেষ মাসে অন্য সঙ্কট জাঁকিয়ে বসেছে ভারতের অর্থনীতিতে। সেই তালিকায় রয়েছে জ্বালানির বাড়তে থাকা খরচ, বিভিন্ন পণ্যের কাঁচামালের চড়া দর, বাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা, খাদ্যপণ্য এবং নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বেড়ে যাওয়া চাপে সামগ্রিক ভাবে চাহিদায় ধাক্কা। নতুন অর্থবর্ষ (২০২২-২৩) শুরু হতে আর মাত্র দিন তিনেক বাকি। এত সমস্যা সামলে অর্থনীতিকে সঠিক পথে চালিয়ে নিয়ে যাওয়াই এখন সরকারের মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ। সেই লক্ষ্যে তারা নতুন কোনও পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে কি না, সেই দিকেই এখন তাকিয়ে দেশবাসী।

বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল ঊর্ধ্বমুখী হওয়া সত্ত্বেও, পাঁচ রাজ্যে ভোটের কারণে বহু দিন এক জায়গায় বেঁধে রাখা হয়েছিল পেট্রল-ডিজ়েল এবং গৃহস্থের হেঁশেলে ব্যবহৃত রান্নার গ্যাসের দাম। ১৩৭ দিন পরে গত সপ্তাহ থেকে ফের বাড়ছে পেট্রল-ডিজ়েল। শুরুতে পাইকারি ডিজ়েল (যে তেল মূলত শিল্পের জন্য একসঙ্গে অনেকটা বিক্রি করা হয়) লিটারে ২৫ টাকা করে বাড়ানো হয়। এখন নাগাড়ে বাড়ছে পাম্পে খুচরো বিক্রির তেল। এই দুই বৃদ্ধির প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে কৃষি, শিল্প এবং পণ্যের দামে। ডিজ়েলের দাম বাড়ায় কৃষিতে ট্রাক্টরের এবং ট্রাকে পণ্য পরিবহণের খরচ বেড়েছে। মাথা তুলছে বাস, ট্যাক্সির মতো গণ-পরিবহণের খরচ। ৫০ টাকা করে বেড়েছে বাড়িতে ব্যবহৃত ১৪.২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডার। গৃহস্থকে তা কিনতে হচ্ছে ৯৭৬ টাকায়। হোটেল-রেস্তরাঁয় রান্নার গ্যাসও (১৯ কেজির সিলিন্ডার) পৌঁছেছে ২০৮৭ টাকায়। এর উপরে খাড়ার ঘা হয়ে নামতে চলেছে ওষুধের খরচ। ১ এপ্রিল থেকে বেশ কিছু অতি প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম বাড়ছে। সেই তালিকায় আছে প্যারাসিটামল, অ্যাজ়িথ্রোমাইসিন, বেশ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক, পেনকিলার, ডায়াবেটিস, প্রেশার ও হৃদরোগের ওষুধ ইত্যাদি।

সব মিলিয়ে বিরাট চাপে পণ্যের দাম এবং আমজনতা। এরই মধ্যে বাড়তে শুরু করেছে ভোজ্যতেল, চাল, পাঁউরুটি, দুধ, চা, কফি ইত্যাদি। দাম বাড়াতে শুরু করেছে বেশ কয়েকটি ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারী সংস্থাও। ফলে আশঙ্কায় দিন গুনছেন সাধারণ মানুষ।

ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণ করতেই বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল ব্যারেল পিছু ১৩৯ ডলারে উঠে গিয়েছিল। পরে নেমে আসে। কিন্তু এখনও তা যথেষ্ট উঁচুতে। ঘোরাফেরা করছে ১২০ ডলারের আশেপাশে। ভারতকে তার প্রয়োজনের ৮৫% তেলই আমদানি করতে হয়। ফলে বর্ধিত দাম এই দেশের খরচ বাড়িয়েছে। যা তেল সংস্থাগুলির সমস্যার কারণ। রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনতে শুরু করলেও, তা ভারতবাসীর প্রয়োজন কতটা মেটাতে পারে, সেটাই এখন দেখার।

দেশের খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হারও টানা দু’মাস হল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ সহনসীমার (৬%) উপরে। মার্চে তা আরও উঁচুতে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে এপ্রিলের ঋণনীতি বৈঠকে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই এখন দেখার। অনেকে মনে করছে মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরাতে তাদের সুদ হয়তো বাড়াতেই হবে। তবে সেটা শিল্প এবং শেয়ার বাজারের কাছে মোটেও কাম্য নয়। অন্য দিকে, পণ্যের দাম কমাতে না পারলে জমা টাকায় সুদ বাড়ানো হতে পারে, এই আশায় বসে আছেন সুদ নির্ভর অসংখ্য মানুষ। বিশেষত প্রবীণ নাগরিকেরা।

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের অবশ্য অন্য সুর। তারা চাইছে, এপ্রিল-জুনে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে সুদ কমানো হোক ১১৮ বেসিস পয়েন্ট। এখন মূল্যবৃদ্ধির বাজারে এই ধরনের প্রস্তাবে অশনি সঙ্কেত দেখছেন সাধারণ মানুষ, যাঁদের অনেকেই সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস স্কিম, মাসিক জমা প্রকল্প, পিপিএফ, এনএসসি, কিসান বিকাশপত্রের মতো স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা রাখেন। বিশেষত ইতিমধ্যেই যেখানে কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডে সুদের হার ৮.৫% থেকে কমিয়ে ৮.১% করার প্রস্তাব জমা পড়েছে অর্থ মন্ত্রকে। উল্লেখ্য, ৩১ মার্চ কেন্দ্র এপ্রিল-জুনে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির সুদের হার জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করবে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কোনও সমাধান সূত্র না মেলায় সারা বিশ্বের শেয়ার বাজার অস্থির। যুদ্ধি যদি থেমেও যায়, তার প্রতিকূল প্রভাব রয়ে যাবে বেশ কিছু দিন। বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার কারণেও দাম বাড়ছে। আমেরিকায় মূল্যবৃদ্ধির হার এখন ৪০ বছরের সর্বোচ্চ। ইউরোপে চলছে ভয়ানক জ্বালানি সঙ্কট। ব্রিটেনে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি জানুয়ারির ৫.৫% থেকে বেড়ে ফেব্রুয়ারিতে হয়েছে ৬.২%। এই হার ৩০ বছরের মধ্যে সর্বাধিক। জিনিসের দামে রাশ টানতে আমেরিকার পাশাপাশি ব্রিটেনও মার্চে সুদ বাড়িয়েছে ২৫ বেসিস পয়েন্ট হারে। মনে করা হচ্ছে, পণ্যমূল্য আরও বাড়বে এবং সেই কারণে থাকবে আরও সুদ বাড়ার আশঙ্কাও।

(মতামত ব্যক্তিগত)

অন্য বিষয়গুলি:

Fuel Price economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy