—প্রতীকী চিত্র।
দিওয়ালির সন্ধ্যায় এক ঘণ্টার বিশেষ মুরত লেনদেন পর্বে বাজারে যে উত্থান দেখা গিয়েছিল, তা বহাল থাকতে দেখা গেল সপ্তাহের শেষেও। গত রবিবার সন্ধ্যায় সেনসেক্স উঠেছিল ৩৫৫ পয়েন্ট। পরের কয়েক দিনে আরও ৫৩৫ এগিয়ে সপ্তাহ শেষ করেছে ৬৫,৭৯৪ অঙ্কে। মাস দুয়েক আগের সর্বোচ্চ উচ্চতা থেকে তা এখন ২০৪৫ পয়েন্ট নীচে থাকলেও, চলতি আর্থিক বছরের প্রথম লেনদেনের দিনের (৩ এপ্রিল) ৫৯,১০৬ অঙ্কের তুলনায় তা ৬৬৮৮ পয়েন্ট অর্থাৎ ১১.৩২% বেশি।
শুধু বড় মাপের শেয়ারগুলিতে নয়, এ বছর আরও বড় উত্থান দেখা গিয়েছে বাজারে মোট শেয়ার মূল্যের নিরিখে মাঝারি (মিড ক্যাপ) এবং ছোট (স্মল ক্যাপ) সংস্থার শেয়ার সূচকেও। এখনও পর্যন্ত বিএসই মিড ক্যাপ সূচক বেড়েছে ৩১.৮৬% এবং স্মল ক্যাপের উত্থান ৩৬.৮৯%।
সূচকের এমন লাফে সরাসরি বাজারে লগ্নিকারীরা তো খুশি বটেই। শেয়ার ভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ডের (একুইটি ফান্ড) বিনিয়োগকারীদের হাসিও চওড়া হয়েছে। কারণ, বিভিন্ন ফান্ড ইউনিটের ন্যাভ লাফিয়ে বাড়ছে। ফলে বহু মানুষ প্রবেশ করছেন ঘুরপথে শেয়ারে লগ্নির এই বৃত্তে। পুরনোরা পুঁজি ঢালার গতি বাড়াচ্ছেন। লাফিয়ে বাড়ছে অ্যাকাউন্টের সংখ্যা, সেই সঙ্গে ফান্ডে পরিচালনাধীন সম্পদ বা এইউএম। চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে মোটা লগ্নি এসেছে মিড ক্যাপ এবং স্মল ক্যাপ ফান্ডে। সার্বিক ভাবে শেয়ার ভিত্তিক (একুইটি) ফান্ডে নিট ৮০,২৭৬ কোটি টাকা লগ্নির মধ্যে মিড ও স্মল ক্যাপ ফান্ডে ঢুকেছে যথাক্রমে ১৩,২৮০ কোটি এবং ২৬,৫৪৪ কোটি। অর্থাৎ মোট লগ্নির প্রায় অর্ধেক।
ব্যাঙ্ক ও বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে সুদ বেশ খানিকটা বাড়লেও, বহু মানুষ শেয়ার ও ফান্ডের জগতে ভিড় করছেন। ঝুঁকি আছে জেনেও, বেশি আয়ের সম্ভাবনা ও করের সুবিধার জন্যেই ঝুঁকছেন এই পথে। কোভিড ও চড়া মূল্যবৃদ্ধি সওয়ার পরে যে কোনও উপায় সঞ্চয় বাড়াতে মরিয়া তাঁরা।
যাঁরা উঁচু করের অধীনে (৩১.২%) পড়েন, তাঁরা আমানতে ৮% সুদ পেলেও করের পরে প্রকৃত আয় দাঁড়ায় মাত্র ৫.৫%। অনেক সময়েই পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার এই আয়ের উপরে উঠে যায়। ফলে চড়া সুদের জমানাতেও পণ্যের বর্ধিত দামের কোপে লাভ বদলে যায় লোকসানে। অন্য দিকে, এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে রাখার পরে শেয়ার কিংবা শেয়ার ভিত্তিক ফান্ড বিক্রি করে কোনও লাভ হলে, তার প্রথম ১ লক্ষ টাকার উপরে কোনও কর দিতে হয় না লগ্নিকারীকে। লাভ এর বেশি হলে তার উপর কর বসে মাত্র ১০% হারে। বার্ষিক হিসাবে করের এই সুবিধা পাওয়া যায় শেয়ার এবং শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডের লগ্নিতে।
গত কয়েক দিন ধরে বন্ড বা ঋণপত্রের ইল্ড (প্রকৃত আয়) কমতে থাকায়, বাড়তে শুরু করেছে তার দাম ও বন্ড ফান্ডের ন্যাভ। ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ড ইল্ড গত তিন সপ্তাহে ৭.৩৬% থেকে ১৫ বেসিস পয়েন্ট কমে নেমেছে ৭.২১ শতাংশে। উল্লেখ্য, বন্ডের দাম বাড়লে ইল্ড কমে এবং তার দাম কমলে ইল্ড বাড়ে।
এ দিকে, অক্টোবরে দেশে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ৪.৮৭%। সেপ্টেম্বরে তা ছিল ৫.০২%। অর্থাৎ আপাতত সুদ ফের বাড়ার সম্ভাবনা রইল না। বরং মূল্যবৃদ্ধির হার এ ভাবে কমতে থাকলে সুদ কমানোর প্রশ্ন উঠবে, যা অর্থনীতির পক্ষে মঙ্গল। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক বলেই রেখেছে, কড়া নজরদারি চলছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে তারা। সে ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধি মাথা তুললে যেমন সুদ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকবে, তেমনই কমলে আর্থিক বৃদ্ধিতে গতি আনতে সুদের হার কমানো হতে পারে।
বিভিন্ন মূল্যায়ন সংস্থার অনুমান ২-৩ বছরে ভারতে জিডিপি বাড়তে পারে ৬%-৭%। বাস্তবে তা হলে ধরে নেওয়া যায় মাঝে-মধ্যে সংশোধন হলেও বড় মেয়াদে বাজার চাঙ্গা থাকবে এবং আগামী দিনে তা আরও এগোবে। প্রধানত এই কথা মাথায় রেখেই ভিড় বাড়ছে শেয়ার এবং ফান্ডের জগতে। বিএসই-তে নথিবদ্ধ লগ্নিকারীর সংখ্যা এখন ১৪.৮৭ কোটি, অর্থাৎ দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০%। নথিবদ্ধ সব শেয়ারের মোট বাজার দর ৩২৭.৫২ লক্ষ কোটি টাকা।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy