Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Share Market Tips for Beginners

স্টক মার্কেটে নতুন? অঙ্কেই লুকিয়ে সব হিসাব! বুঝতে পারলেই শেয়ার বাজার যেন জল-ভাত

বাজার আসলে অত্যন্ত জটিল আর ক্রমপরিবর্তনশীল দুনিয়া। বাজারের পরিভাষা ও কাঠামোর সম্পর্কে অবহিত না থাকলে নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য তা বিভ্রান্তিকর হতে পারে।

representative image of stock market

কী ভাবে কাজ করে স্টকগুলি? কোন কোন কারণে বদলে যায় স্টকের দাম? প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:৩৯
Share: Save:

বর্তমানে বিনিয়োগের দুনিয়ার সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে স্টক মার্কেট বা শেয়ার বাজার। অথচ বহু মানুষ এখনও বাজারে বিনিয়োগ করতে ভয় পান। ভাবেন, এই বুঝি লোকসান হল। এবং ভয় পাওয়াটাও স্বাভাবিক। একটু ভূল হলেই কষ্টার্জিত পয়সা অথৈ জলে। তা হলে উপায়? খানিক অঙ্ক কষে বিনিয়োগ করলেই এই ভয় কেটে যেতে পারে। এই প্রতিবেদনটিতে এমন কয়েকটি অঙ্ক বা হিসাব নিয়ে আলোচনা করা হল, যেগুলি সঠিকভাবে পর্যালোচনা করতে কোনও অপটু ব্যক্তিও বাজারে বিনিয়োগের পূর্বে সংশ্লিষ্ট স্টক সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা পেতে সক্ষম হবেন।

মনে রাখতে হবে, শেয়ার বাজার আসলে অত্যন্ত জটিল আর ক্রমপরিবর্তনশীল দুনিয়া। বাজারের পরিভাষা ও কাঠামোর সম্পর্কে অবহিত না থাকলে নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য তা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। শেয়ার বা স্টক ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য প্রথমেই সঠিক ফান্ডামেন্টালগুলি জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক জন তুখোর বিনিয়োগকারী সর্বদা অঙ্ক কষে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট মূল্যে শেয়ার ক্রয় করেন এবং পরে সেই শেয়ারগুলিকে আরও বেশি দামে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করতে পারেন। কী ভাবে কাজ করে স্টকগুলি? কোন কোন কারণে বদলে যায় স্টকের দাম? কী ভাবেই বা তথ্যযুক্ত বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবেন? চলুন দেখে নিন।

প্রাইস-টু-আর্নিং অনুপাত

একটি কোম্পানির শেয়ারের বর্তমান মূল্যের সঙ্গে তার শেয়ার প্রতি আয়ের অনুপাতই হল প্রাইস-টু-আর্নিং রেশিও। সহজ ভাষায় বলতে হলে, এটি আসলে একটি সংস্থা সম্পর্কে জনসাধারণ কী ভাবছেন বা অনুভব করছেন এবং সংস্থাটি আসলে কতটা ভাল করছে তার তুলনা। এক জন বিনিয়োগকারী এই অনুপাতের অঙ্ক কষে সহজেই বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট স্টক থেকে উপার্জন বিবেচনা করতে পারেন। এই অনুপাতের মান নির্ধারণ করতে বর্তমান স্টকের দামকে শেয়ার প্রতি আয় দ্বারা ভাগ করতে হবে। সাধারণত প্রাইস-টু-আর্নিং রেশিও ২০ বা তার নীচে থাকলে এটিকে আদর্শ হিসেবে ধরা হয়।

প্রাইস-টু-সেল্স অনুপাত

প্রাইস-টু-সেল্স রেশিও হল একটি মূল্যায়ন মেট্রিক। এর মাধ্যমে কোনও বিনিয়োগকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থার স্টকের দামকে তার আয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত দামের মূল্যায়ন করতে পারেন। এই অনুপাত নির্ণয় করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থার মোট বাজার মূলধনকে তার মোট আয় দ্বারা ভাগ করা হয়। অর্থাৎ কোন সংস্থার অবমূল্যায়ণ করা হয়েছে এবং কোন সংস্থার অতি মূল্যায়ণ করা হয়েছে, তা সহজেই হিসেব কষে বার করে নেওয়া যায় এর মাধ্যমে। ফলে কোনও ব্যক্তি আরও সঠিকভাবে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন।

প্রাইস টু বুক অনুপাত

বিনিয়োগকারীদের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মেট্রিক হল প্রাইসটুবুক রেশিও। এটি কোনও কোম্পানির মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। এই অনুপাত বেশি হওয়ার অর্থ হল বিনিয়োগকারীরা সংশ্লিষ্ট সংস্থার স্টকের জন্য তার বুক ভ্যালুর তুলনায় একটি প্রিমিয়াম দিতে ইচ্ছুক। অন্য দিকে, এই অনুপাত কম হওয়ার অর্থ হল সেই সংস্থার স্টকটি তার বুক ভ্যালু থেকে ডিসকাউন্টে ট্রেড করছে। এটি গণনা করতে হলে একটি কোম্পানির শেয়ারের বর্তমান মার্কেট ভ্যালুকে তার শেয়ার প্রতি বুক ভ্যালু দ্বারা ভাগ করতে হবে। কিছু মূল্যবান বিনিয়োগকারী এবং আর্থিক বিশ্লেষকরা ৩.০০ এর নীচে যে কোনও মানকে একটি ভাল প্রাইস টু বুক অনুপাত হিসাবে বিবেচনা করেন।

ডেট-টু-ইক্যুইটি অনুপাত

কোনও সংস্থা আর্থিক দিক থেকে কতটা শক্তিশালী তা বুঝতে সাহায্য করে এই অনুপাত। এটি একটি সংস্থার কাছে থাকা তার দায়গুলিকে, মোট শেয়ারহোল্ডারদের ইক্যুইটি দ্বারা ভাগ করে নির্ণয় করা হয়। ফলাফলের অনুপাতটি ইক্যুইটির প্রতি টাকার জন্য সংস্থার ঋণের পরিমাণকে বুঝতে সাহায্য করে। এই অনুপাতের মান যথা সম্ভব কম হলে তা ভাল হিসেবে বিবেচ্য হয়।

শেয়ার প্রতি আয়

অর্থাৎ একটি শেয়ারে বিনিয়োগকারীর আয় কত। এই অনুপাতটি একটি সংস্থার মোট লাভের পরিমাণ পরিমাপ করতে সাহায্য করে যা তার সাধারণ স্টকের প্রতিটি শেয়ারের জন্য দাম। সংশ্লিষ্ট সংস্থার মোট আয়কে বকেয়া শেয়ারের মোট সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে এটি গণনা করা হয়। কোনও সংস্থার কর্মক্ষমতা এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করার জন্য বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মেট্রিক।

রিটার্ন অন ইকুইটি

এর থেকে বোঝা যায় কোনও সংস্থা ব্যবসায় কতটা লাভ করেছে। এই প্রশ্নের উত্তর দেয় রিটার্ন অন ইকুইটি। এটি প্রায়ই একটি সংস্থাকে তার প্রতিযোগীদের এবং সামগ্রিক বাজারের সঙ্গে তুলনা করতে ব্যবহৃত হয়। সংক্ষেপে বলা যায়, এই অঙ্ক বিনিয়োগকারীদের বুঝতে সাহায্য করে যে তাঁরা তাঁদের প্রদেয় অর্থের উপর একটি ভাল রিটার্ন পাচ্ছেন কি না। রিটার্ন অন ইক্যুইটি গণনার প্রাথমিক সূত্র হল শেয়ারহোল্ডার ইক্যুইটি দ্বারা বার্ষিক নেট ইনকামকে ভাগ করতে হয়। এটি সবসময় শতকরা হিসেবে লেখা হয়।

মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন

মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন বা বাজার মূলধন হল একটি সংস্থার সামগ্রিক মূল্যের প্রতিফলন। যে সংস্থার বাজার মূলধন যত বেশি, সেই সংস্থা অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল এবং সুরক্ষিত। অন্য দিকে সংস্থার বাজার মূলধন কম হলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এটি সংশ্লিষ্ট সংস্থার বাজার মূল্য প্রতিনিধিত্ব করে এবং বকেয়া শেয়ারের সংখ্যা দ্বারা বর্তমান স্টক মূল্যকে গুণ করে গণনা করা হয়।

রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট

রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট অর্থাৎ বিনিয়োগে কতটা লাভ বা ক্ষতি হল তার একটি সহজ আর্থিক অনুপাত। যেহেতু এটি শতাংশ হিসাবে প্রকাশ করা হয়, তাই কোনও বিনিয়োগকারী পছন্দমতো বিভিন্ন বিনিয়োগের কার্যকরিতা বা লাভের তুলনা করতে পারেন। ফলাফলের শতাংশ বলে দেয় যে বিনিয়োগ করা পরিমাণের তুলনায় কত টাকা লাভ বা লোকসান হয়েছে। আর্থিক বিশ্লেষণ করা বা তার ঊর্ধ্বে যে কোনও মানকে একটি ভাল রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট অনুপাত হিসাবে বিবেচনা করেন।পাশাপাশি সংস্থার ব্যবসায়িক কাঠামোও বিশেষ ভাবে পর্যালোচনা করা উচিত।

অন্য বিষয়গুলি:

Share Market Indian Share Market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE