অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী করার সুপারিশে বহু দুর্নীতিগ্রস্তের নাম আসছে বলে নিজেই জানালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, ‘‘যে সব নাম আসছে, তার ৫০ শতাংশই বাতিলযোগ্য। এলাকায় এঁদের কারও নামে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল, কেউ এখনও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। আবার কেউ কেউ বিধানসভা ভোটে বিরোধীদের সাহায্য করেছেন। দল এ রকম কাউকে প্রার্থী করবে না।’’ এই প্রবণতাকে ‘করে খাওয়ার মানসিকতা’ হিসেবে উল্লেখ করেই এমন কাউকে প্রার্থী না করার কথা জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, পঞ্চায়েত নির্বাচনে গা-জোয়ারি বন্ধ করতে ১০০ শতাংশ আসনে বিরোধীদের মনোনয়ন নিশ্চিত করার দায়িত্ব তৃণমূল নেবে বলেও সোমবারের দলীয় বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের অবশ্য কটাক্ষ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে বীরভূমের দলীয় সংগঠনের দায়িত্ব নিয়েছেন। তার পরেও সেই জেলায় তৃণমূলের সঙ্গে তৃণমূলের মারামারি রোজ চলছে। বোমা, বন্দুক উদ্ধার হচ্ছে। বোমা-বন্দুক-পুলিশ-সিভিক ভলান্টিয়ার-লুট-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া ছাড়া তৃণমূলের পক্ষে ভোট করা সম্ভব নয়।’’
এ দিন তৃণমূলের বিধায়ক, জেলা সভাপতি, ব্লক সভাপতি ও শাখা সংগঠনগুলির জেলা সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠক করেন অভিষেক। বৈঠকে ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীও। সেখানেই পঞ্চায়েত ভোটের লক্ষ্যে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক প্রস্তুতির রূপরেখা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ।
আর এই বৈঠকেই প্রাথী বাছাই প্রক্রিয়া সম্পর্কে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিষেক। বৈঠকে প্রার্থী বাছাই নিয়ে দলের কড়া মনোভাব জানিয়ে বক্সীও বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে স্বজনপোষণ, কারও মৌরসিপাট্টা চলতে পারে না।’’
দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ থেকে পঞ্চায়েতের তিন স্তরে ভাবমর্তি শোধরাতে এ বার ব্যাপক হারে মুখবদলের পরিকল্পনা করেছে তৃণমূল। এ দিন সেই বার্তা স্পষ্ট করে অভিষেক বলেন, ‘‘কেউ ব্ল্যাকমেল করবেন না। যদি ভাবেন দল করবেন না, বেরিয়ে যেতে পারেন। দরজা খোলা আছে।’’ সেই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাদ পড়ে কেউ নির্দল প্রার্থী হলে, হবেন। মানুষের সমর্থনের প্রমাণ দিয়ে জিতে এসে তারপর না হয় তৃণমূল করবেন।’’ এই প্রসঙ্গে বক্সীও বলেন, ‘‘দল কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয়।’’
২০১৮ সালে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে গা-জোয়ারি ও হিংসার ঘটনা নিয়ে বারবার বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়েছে শাসক তৃণমূল। এ দিন সে প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, ‘‘২০১৮ সালের নির্বাচনের সঙ্গে এ বারের ভোটের ফারাক হবে আকাশ-পাতাল। কেউ জোর করে, প্রশাসনকে ব্যবহার করে ভোট করবেন, আর দল তা ভুগবে, তা হবে না।’ বক্সী বলেন, ‘‘২০১৮ সালে যা হয়েছে, তার খেসারত আমরা দিয়েছিলাম ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে।’’ উল্লেখ্য, পঞ্চায়েত ভোটের পরেই লোকসভা ভোটে ১৮টি আসন জিতেছিল বিজেপি। তৃণমূলের বহু আসন হাতছাড়া হয়। সেই সূ্ত্রে বক্সী বলেন, ‘‘যেখানে বিরোধীরা মনোনয়ন দিতে পারবেন না, সেখানে আমি, অভিষেক বা অন্য রাজ্য নেতারা গিয়ে তাঁদের মনোয়নের ব্যবস্থা করে দেব।’’
আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটকে অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে চিহ্নিত করে এ দিনের বৈঠকে নীচের তলার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে দলের নেতাদের সতর্ক করে দিয়েছেন অভিষেক। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহের নাম করেই তিনি বলেন, ‘‘দিনহাটায় কেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে ঢুকতে দেওয়া হবে না! জলপাইগুড়ির মেটেলিতেও একই ঘটনা ঘটেছে। এ সব চলতে পারে না।’’ দু’দিন সময় দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দলের জনসংযোগ কর্মসূচি নিয়ে এ সব বন্ধ করতে হবে। তা না হলে, পদ থাকবে না।’’ নিষ্ক্রিয় নেতাদেরও একই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অভিষেক। জেলা, ব্লক ও বুথ স্তরে কমিটি গঠনের জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন অভিষেক। ১২ তারিখের মধ্যে জেলা, ১৭-র মধ্যে ব্লক কমিটি ও ২৪ তারিখের মধ্যে বুথ কমিটি তৈরি করতে বলা হয়েছে। যাঁরা ‘দিদির দূত’ হিসেবে বা সুরক্ষা কবচের কর্মসূচিতে এলাকায় যাচ্ছেন, কিছু ক্ষেত্রে তাঁদের সঙ্গে অসহযোগিতার অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘এটা চলবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy