Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
india

চিনা সরঞ্জামে কড়া, প্রমাদ গুনছে সৌর বিদ্যুৎ শিল্প

সিঁদুরে মেঘ দেখছে সৌর বিদ্যুৎ শিল্প। যাদের অধিকাংশ সরঞ্জামই আসে পড়শি দেশ থেকে।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২০ ০৫:৫৮
Share: Save:

চিনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষের পরে সেখানকার পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে বিভিন্ন মহল। বিদ্যুৎ শিল্পে কোনও যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ চিন থেকে আমদানিতে অনুমতি দেওয়া হবে না বলে সুর চড়িয়েছেন খোদ বিদ্যুৎমন্ত্রী রাজকুমার সিংহ। বলেছেন, সোলার সেল ও মডিউলে চড়া শুল্ক বসানোর কথা। আর এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে সৌর বিদ্যুৎ শিল্প। যাদের অধিকাংশ সরঞ্জামই আসে পড়শি দেশ থেকে। আমদানিতে কড়া পদক্ষেপ করা হলে প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলির ভবিষ্যৎই অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের। তবে বিশেষজ্ঞেরা মানছেন, সৌর বিদ্যুতের কাঁচামাল ও সরঞ্জামের জন্য অন্য দেশের উপরে ‘অতিনির্ভরতা’ কমানো জরুরি। কিন্তু ভারতে সেগুলি তৈরির বাধা হিসেবে দীর্ঘ দিন ধরে কোনও নীতি না-থাকাকেই দুষছেন তাঁরা।

কেন্দ্রের লক্ষ্য

•২০২২ সালের মধ্যে দেশে ১৭৫ গিগাওয়াট অপ্রচলিত বিদ্যুৎ উৎপাদন।

•যার মধ্যে ১০০ গিগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ।

•সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ছে অনেক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা।

পয়লা অগস্ট থেকে চিন থেকে আমদানি করা সৌর বিদ্যুতের সরঞ্জামে শুল্ক বসাতে চায় কেন্দ্র। সিংহের প্রস্তাব, ‘‘সোলার মডিউলে প্রথমে এক বছরের জন্য ২৫% শুল্ক বসানো হোক। দ্বিতীয় বছরে তা বাড়িয়ে ৪০% করা হোক।’’ সোলার সেলেও তা প্রথম বছরে ১৫%, পরে ৩০%-৪০% করতে চান তিনি। সঙ্গে সুপারিশ, সমস্ত চিনা যন্ত্রাংশ কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থার পরীক্ষার পরেই ছাড়পত্র মিলবে।

চিন নির্ভরতা

• চিনা পণ্য সস্তা, সহজলভ্য।

• সৌর বিদ্যুতের অধিকাংশ (প্রায় ৭০%) সরঞ্জাম আসে সেখান দেশ থেকে।

• আমদানি হয় সোলার সেল তৈরির কাঁচামালের প্রায় পুরোটাই।

শিল্প মহলের মতে, সোলার সেল তৈরির মূল কাঁচামাল ওয়েফারের প্রায় পুরোটাই আসে চিন থেকে। এ ছাড়াও সোলার প্যানেল বা মডিউল, ইনভার্টার-সহ অন্যান্য জরুরি যন্ত্রাংশের জন্য নির্ভর করতে হয় সে দেশের উপরে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, চিনা পণ্য দামে সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় তার চাহিদা রয়েছে। তার উপরে দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রের স্পষ্ট নীতি না-থাকায়, সম্ভাবনা থাকলেও সেগুলি দেশে তৈরির ব্যবস্থা পুরোদমে গড়ে ওঠেনি।

কড়া হাতে

• চিনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষের পরে চিনা পণ্য বয়কটের ডাক উঠেছে।

• বিদ্যুৎ শিল্পে চিনা যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ আমদানিতে

সায় দেওয়া হবে না, হুঁশিয়ারি বিদ্যুৎমন্ত্রীর।

• তাঁর প্রস্তাব, সোলার মডিউল ও সেলের মতো চিনা পণ্যে শুল্ক বসানোর।

• সেখান থেকে আমদানি করা যন্ত্রাংশ পরীক্ষা হবে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থায়।

তাই এখন আমদানি নিয়ে কেন্দ্র কড়া অবস্থান নিলে অনেক প্রকল্পের কাজ ধাক্কা যেতে পারে। গত কয়েক বছর ধরেই মোদী সরকার দেশে অপ্রচলিত বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দিচ্ছে। এনটিপিসি, ডিভিসি, কোল ইন্ডিয়া, ভারতীয় রেল-সহ অধিকাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। দেশে তার উৎপাদনও বেড়েছে। সৌর বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞ শান্তিপদ গণচৌধুরীর মতে, নতুন যে সমস্ত প্রকল্প তৈরির কথা, তার খরচ ধরা হয়েছে সস্তার চিনা পণ্যের দাম ধরেই।

শিল্পের মতে

•দীর্ঘ দিন সরকারের
নীতি নেই, ফলে ভারতে সৌর বিদ্যুতের সরঞ্জাম তৈরির ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।
•এখন তা করতে গেলে অনেক সময় লাগবে।
•আমদানিতে কড়া হলে প্রকল্পগুলির ভবিষ্যৎ ঘিরে তৈরি হবে অনিশ্চয়তা।
•বাড়তে পারে প্রকল্প রূপায়ণের খরচ।
•সব মিলিয়ে কেন্দ্রের লক্ষ্যই অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে।

সেই মতোই দরপত্র জমা দিয়ে বরাতও পেয়েছে বিভিন্ন সংস্থা। এখন আমদানিতে বাধা তৈরি হলে প্রকল্পের খরচ বাড়বে এবং তা রূপায়ণেও সমস্যা হবে।
আর এক বিশেষজ্ঞ অনুপম বড়ালের কথায়, সৌর বিদ্যুতের সব যন্ত্রাংশ দেশে চাহিদা মতো পুরোদমে উৎপাদন করতে আরও সময় লাগবে। তাই স্বনির্ভর হওয়ার আগেই আমদানিতে রাশ টানার চেষ্টা হলে দাম এবং সরঞ্জামের অভাবে প্রকল্প বাস্তবায়িত করার প্রক্রিয়া ধাক্কা খাবে। যে কারণে সময় নিয়ে অন্য দেশের উপর নির্ভরতা কমানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

India China Solar Electricity Trade
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy