Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
রাজ্যে গতি পায়নি ই-গভর্ন্যান্স

টিকে থাকতে অন্য ব্যবসাই ভরসা তথ্য কেন্দ্রগুলির

তৈরির উদ্দেশ্য ছিল ই-গভর্ন্যান্সের পরিষেবা রাজ্যের প্রত্যন্ত প্রান্তেও সাধারণ মানুষের দরজায় পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু প্রশাসনিক গড়িমসি আর লাল ফিতের ফাঁসে গতি পায়নি ই-গভর্ন্যান্সই। তাই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এখন বিমা প্রকল্প বিক্রি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা, মোবাইলে টাকা ভরার মতো পরিষেবাগুলির উপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছে রাজ্যের বেসরকারি তথ্য পরিষেবা কেন্দ্রগুলি।

গার্গী গুহঠাকুরতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫৯
Share: Save:

তৈরির উদ্দেশ্য ছিল ই-গভর্ন্যান্সের পরিষেবা রাজ্যের প্রত্যন্ত প্রান্তেও সাধারণ মানুষের দরজায় পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু প্রশাসনিক গড়িমসি আর লাল ফিতের ফাঁসে গতি পায়নি ই-গভর্ন্যান্সই। তাই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এখন বিমা প্রকল্প বিক্রি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা, মোবাইলে টাকা ভরার মতো পরিষেবাগুলির উপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছে রাজ্যের বেসরকারি তথ্য পরিষেবা কেন্দ্রগুলি।

ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র, জমি-বাড়ির নথিভুক্তি, ট্রেড লাইসেন্স থেকে শুরু করে বন্দুক রাখার লাইসেন্স পর্যন্ত প্রায় তিনশো পরিষেবা নেটে পাওয়ার কথা সকলের। কিন্তু প্রশাসনিক গড়িমসিতে সেই সমস্ত তথ্য স্ক্যান করে নেটে তোলাই হয়নি। পরিষেবা তো দূর অস্ত্‌। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এখন লাভের মুখ দেখতে তাই বেহাল ই-গভর্ন্যান্স ব্যবস্থাকে বাইরে রেখেই ব্যবসায়িক কৌশল তৈরি করতে হয়েছে তথ্য কেন্দ্রগুলিকে। তাঁদের প্রশ্ন, পরিষেবাই যদি না-থাকে, তাহলে আর কীসের জন্য তথ্য কেন্দ্রে ভিড় জমাবেন সাধারণ মানুষ?

বেসরকারি সংস্থা শ্রেয়ী সহজ ই-ভিলেজ রাজ্যের ১৮টি জেলায় তথ্য পরিষেবা কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। প্রাথমিক ভাবে সরকারের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে এ রাজ্যে প্রায় ৫,০০০টি তথ্য পরিষেবা কেন্দ্র তৈরি করেছে তারা। কিন্তু সংস্থা সূত্রে খবর, এখন সরকারি পরিষেবার মুখাপেক্ষী হয়ে না থেকে অন্যান্য পরিষেবা দেওয়ার দিকে নজর দিচ্ছে তারা। যার মধ্যে আছে বিমা বিক্রি, মোবাইল রিচার্জ করা ইত্যাদি। শুধু ই-গভর্ন্যান্সের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকলে, ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হত বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি। বরং ই-লার্নিং, ইলেকট্রিক ও টেলিফোনের বিল জমা দেওয়া-সহ অন্যান্য পরিষেবা দিয়ে পুঁজি তুলে নেওয়া যাবে বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ।

অথচ বণিকসভার প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানে রাজ্যের অর্থ তথা শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অমিত মিত্র ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের সাফল্যের খতিয়ান দেন। যে দাবির সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গতি নেই বললেই চলে।

ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত কেন্দ্রের খতিয়ানে রাজ্যের স্থান প্রায় তলানিতে। বিভিন্ন ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্পের মাধ্যমে ই-ট্রানজাকশন বা আর্থিক লেনদেনের অঙ্ক মেপে রাখার কাজ করে কেন্দ্রীয় ওয়েব পোর্টাল ‘ই-তাল’। সেখানে তালিকার উপর দিকে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কেরালা, গুজরাতের নাম। প্রথম দশে জায়গা করে নিয়েছে ‘পিছিয়ে থাকা’ মধ্যপ্রদেশও। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ঠাঁই সেখানে হয়নি।

কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি হাজার মানুষের জন্য পশ্চিমবঙ্গে ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের সংখ্যা মিজোরাম বা ছত্তিশগঢ়ের মতো পিছিয়ে পড়া রাজ্যের চেয়েও কম। প্রতি হাজার মানুষের জন্য মাত্র ৩৬০টি ই-ট্রানজাকশন হয় এ রাজ্যে। মিজোরাম ও ছত্তিশগঢ়ে তা যথাক্রমে ৩৮৯ ও ১,১৬৩। যে রাজ্যে জনসংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের দ্বিগুণেরও বেশি, সেই উত্তরপ্রদেশেও এই সংখ্যা ১,৩৫২। এই হিসেব চলতি বছরের গোড়া থেকে অগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। আর এই পিছিয়ে পড়ার প্রতিফলনই তথ্য পরিষেবা কেন্দ্রের ব্যবসায় স্পষ্ট।

তবে ব্যবসার নতুন মডেলে আস্থা রেখে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া বিহার, ওড়িশা, তামিলনাডু, অসম, উত্তরপ্রদেশেও এ ধরনের ২৮,০০০ তথ্য কেন্দ্র তৈরি করতে মোট ৫০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে শ্রেয়ী।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy