গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
বিজয় মাল্য-নীরব মোদীদের মতো বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ নিয়ে বিদেশে ‘পলাতক’দের তালিকায় এ বার নয়া সংযোজন। বাসমতী চাল রফতানিকারী দিল্লির এক সংস্থার তিন মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এসবিআই-সহ ছ’টি ব্যাঙ্ক থেকে ৪০০ কোটিও বেশি অর্থ ঋণ নিয়ে দুবাইতে পালিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। সম্প্রতি এসবিআইয়ের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ঋণখেলাপি সংস্থা তথা তার মালিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। ইতিমধ্যেই ওই সংস্থার মালিক-সহ অজ্ঞাতপরিচয় সরকারি কর্মচারিদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলাও রুজু করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটি।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লির দিল্লির রাম দেব ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের দ্বারস্থ হয় স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই)। অভিযোগ, এসবিআই-সহ দেশের ছ’টি ব্যাঙ্ক থেকে মোট ৪১৪ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার পর তা ফেরত না দিয়েই ২০১৬ সালে দুবাই পালিয়ে গিয়েছেন সংস্থার তিন ডিরেক্টর। পাশাপাশি, ব্যাঙ্কের টাকা হাতানোর জন্য কারখানা ও তার সমস্ত মেশিনারিও বিক্রি করে ফেলেছে সংস্থাটি।
এসবিআইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই সংস্থার তিন ডিরেক্টর নরেশ কুমার, সুরেশ কুমার, সঙ্গীতা এবং অজ্ঞাতপরিচয় সরকারি কর্মচারিদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ ও দুর্নীতির জন্য জালিয়াতি এবং প্রতারণার মামলা রুজু করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। সিবিআই সূত্রে খবর, ৪১৪ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে এসবিআইয়ের থেকে ১৭৩ কোটি ১১ লক্ষ টাকা, কানাড়া ব্যাঙ্ক থেকে ৭৬ কোটি ৯ লক্ষ টাকা, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া-র থেকে ৬৪ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার থেকে ৫১ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা, কর্পোরেশন ব্যাঙ্ক থেকে ৩৬ কোটি ৯১ লক্ষ টাকা এবং আইডিবিআই-এর থেকে ১২ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছে দিল্লির ওই সংস্থাটি।
আরও পড়ুন: ঝুঁকি ছাঁটতে কিছু ঋণে সুদ বাড়াল স্টেট ব্যাঙ্ক
আরও পড়ুন: তিন সপ্তাহে মুকেশের হাতে ৬০ হাজার কোটি
সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগে এসবিআইয়ের দাবি, সময় মতো ঋণ না মেটানোয় ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি সংস্থাটির ওই ঋণকে অনুৎপাদক সম্পদ (এনপিএ) হিসাবে নথিবদ্ধ করা হয়। সে সময় ওই সংস্থার কাছে ১৭৩ কোটি ১১ লক্ষ টাকা ছিল। ওই বছরেই একটি বিশেষ অডিট করতে নেমে আরও বড়সড় জালিয়াতি সামনে আসে বলে অভিযোগ এসবিআইয়ের। এসবিআইয়ের দাবি, অডিটের সময় দেখা যায়, সংস্থার জমাখরচের খাতায় বড়সড় গড়মিল করা ছাড়াও ভুয়ো অ্যাকাউন্ট রয়েছে অভিযুক্তদের। সেই সঙ্গে ব্যাঙ্কের অর্থ হাতাতে কারখানা ও তার মেশিনারিও বেআইনি ভাবে সরিয়ে অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছেন অভিযুক্তরা। ওই বছরের অগস্ট ও অক্টোবর মাসে সংস্থা পরিদর্শনে গেলে সিবিআই সেখানে তার মালিকদের দেখা পায়নি বলেও অভিযোগ। এর পর খোঁজখবর নিলে জানা যায়, সংস্থার মালিকেরা বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন। এমনকি, সে বছরই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: পায়ের তলার মাটি সরছে অবসর নেওয়া মধ্যবিত্তের
গোটা বিষয়ে সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ জানাতে এত দেরি কেন হল? এসবিআইয়ের দাবি, “অভিযোগ জানাতে একেবারেই বিলম্ব হয়নি।” তার কারণ হিসাবে এসবিআই জানিয়েছে, সংস্থার মালিকেরা ‘নিখোঁজ’ থাকলেও সে সম্পর্কে গত বছরই নিশ্চিত হতে পেরেছে তারা। ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনাল (এনসিএলটি)-এ ওই সংস্থার বিরুদ্ধে অন্য একটি মামলার সূত্রে সে বিষয়ে নিশ্চিত হয় এসবিআই। ওই মামলায় সংস্থার মালিকদের বিরুদ্ধে ২০১৮-র মে মাস থেকে এনসিএলটি তিন বার নোটিস পাঠালেও হাজিরা দেননি তাঁরা। সে বছরের ডিসেম্বরে এনসিএলটি-তে জানানো হয়, দিল্লির ওই সংস্থার মালিকরা দুবাইয়ে পালিয়ে গিয়েছেন। এর পর ঋণের অর্থ ফেরত পাওয়ার আশা ক্ষীণ হওয়ায় অবশেষে সিবিআইয়ের দ্বারস্থ হয় এসবিআই।
আরও পড়ুন: আঠারোতেই স্বপ্নপূরণ! এই তরুণের সংস্থায় বিপুল লগ্নি করলেন রতন টাটা
তবে শুধুমাত্র দিল্লির ওই সংস্থাটিই নয়, এর আগে কিংফিশার এয়ারলাইন্সের নামে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে বিদেশে পলাতক হন সংস্থার তৎকালীন কর্ণধার বিজয় মাল্য। বিজয় মাল্যর মতো মেহুল চোক্সী বা নীরব মোদীও নিজেদের সংস্থার জন্য পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক থেকে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে দেশ ছেড়েছেন। ঋণখেলাপি হয়ে দেশান্তরীদের সেই তালিকায় এ বার জুড়ে গেল দিল্লির সংস্থাটির তিন মালিকের নামও।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy