—প্রতীকী চিত্র।
সুদ বাড়বে না জানা ছিল। এখন যে কমবে না, অজানা ছিল না সেটাও। আর সেই সম্ভাবনা মিলিয়েই রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক এই দফার ঋণনীতিতে সুদের হার (রেপো রেট, অর্থাৎ যে সুদে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অন্যান্য ব্যাঙ্কগুলিকে টাকা ধার দেয়) অপরিবর্তিত রাখল। ফলে টানা ছ’বার তা রয়ে গেল ৬.৫ শতাংশে। তবু মেনে নিতে পারেনি শেয়ার বাজার। বৃহস্পতিবার শীর্ষ ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা মাত্র হুড়মুড়িয়ে বেশ খানিকটা নেমে যায় সূচক। দিনের শেষে সেনসেক্স খোয়ায় ৭২৪ পয়েন্ট।
লগ্নিকারীরা আশা করেছিলেন, এই দফায় সুদ কমানো না হলেও অদূর ভবিষ্যতে তা কমানোর ব্যাপারে হয়তো কোনও ইঙ্গিত দেবে আরবিআই। কিন্তু উল্টো বার্তা আসে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের থেকে। তিনি জানান, খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার পাকাপাকি ভাবে না কমলে সুদের হারও কমানো হবে না। শীর্ষ ব্যাঙ্কের লক্ষ্য মূল্যবৃদ্ধিকে ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা। ডিসেন্বরে এই হার ছিল ৫.৬৯%। আরবিআইয়ের মনোভাব জানার পরেই ছন্দপতন হয় বাজারের। লগ্নিকারীরা হাতের শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেন। বিশেষ করে দুর্বল হয়ে পড়ে বেসরকারি ব্যাঙ্ক এবং এনবিএফসিগুলির (ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান) শেয়ার। শুক্রবার দুই মূল সূচক কিছুটা উঠলেও পতন জারি থাকে বাজারে মোট শেয়ার মূল্যের নিরিখে মাঝারি সংস্থাগুলির শেয়ার নিয়ে তৈরি মিড ক্যাপ এবং ছোট সংস্থার শেয়ার নিয়ে তৈরি স্মল ক্যাপ সূচক দু’টিতে। জানুয়ারিতে খুচরো বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার কী ছিল তা জানা যাবে চলতি সপ্তাহে। হার মাথা নামিয়ে থাকলে তা ফের উস্কে দিতে পারে শেয়ার বাজারকে।
তবে বাজার যা-ই ভাবুক, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বক্তব্য বেশ স্পষ্ট। সুদের হার এখনই কমছে না। ঋণে বা জমায়, কোনওটাতেই না। বরং ঋণ এবং আমানতে গত সপ্তাহে সামান্য করে সুদ বাড়িয়েছে এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক। সুদ আপাতত কমার কোনও লক্ষণ নেই, এই খবরে ফের বাড়তে শুরু করেছে বন্ড (ঋণপত্র) ইল্ড। অর্থাৎ খোলা বাজারে পড়েছে বন্ডের দাম। বাজেট ঘোষণার পরে ইল্ড নেমে গিয়েছিল ৭.০৫ শতাংশে। তা গত শুক্রবার ফের বেড়ে হয়েছে ৭.১১%। ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় এখনও ঘাটতি রয়েছে টাকার জোগানে। এই কারণে ব্যাঙ্কের মেয়াদি জমায় চড়া সুদের জমানা আরও কয়েক মাস জারি থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। টানা দু’মাস খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার মাথা নামালে তবেই আরবিআই সুদ কমানোর কথা বিবেচনা করবে। তাদের ঋণনীতি কমিটির পরের বৈঠক এপ্রিলে।
বাজার এখনও যথেষ্ট চড়া। সেনসেক্স রয়েছে ৭১ হাজারের উপরে। এই পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে পরস্পরের উল্টো পথে হেঁটেছে মোট শেয়ার মূল্যের নিরিখে দুই বড় সংস্থার (লার্জ ক্যাপ) শেয়ার। আইটিসি-র শেয়ারে যখন ধস নেমেছে, তখন চড়চড়িয়ে বেড়েছে বাজারে প্রথমবার বিক্রির (আইপিও) দামের থেকে প্রায় ২১ মাস ধরে অনেক নীচে পড়ে থাকা এলআইসি-র শেয়ার। আইটিসি-র সব থেকে বড় শেয়ারহোল্ডার ব্যাট (ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো) সেখানে তাদের ২৯.০৩% অংশীদারির ৪.০৩% বিক্রি করে দেবে, এই সিদ্ধান্ত বাজারকে জানানো মাত্র বিক্রির ঢল নামে সিগারেট-হোটেল-ভোগ্যপণ্যের কারবারি ওই সংস্থার শেয়ারে। এক দিনে পতন হয় ৪.০৪%। অন্য দিকে, বহু দিন পরে দ্রুত বেড়ে এলআইসি-র শেয়ারের দর উঠে যায় ২০২২ সালের মে মাসে ছাড়া আইপিও-র দামের বেশ খানিকটা উপরে। সর্বাধিক ৯৪৯ টাকা দামে প্রথমবার বাজারে শেয়ার ছেড়েছিল দেশের বৃহত্তম জীবন বিমা সংস্থাটি। লগ্নিকারীদের হাসি চওড়া করে তা শুক্রবার বন্ধ হয়েছে ১০৮৪ টাকায়। যার মূল কারণ, গত অক্টোবর-ডিসেম্বরে (চলতি অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে) সংস্থার নিট লাভ ৪৯% বেড়ে ৯৪৪৪ কোটি টাকায় পৌঁছে যাওয়া।
তবে গত সপ্তাহে লগ্নিকারীদের সব থেকে লোকসান হয়েছে তলিয়ে যাওয়া পেটিএমের শেয়ারে। ২০২১-এর নভেম্বরে ২১৫০ টাকা দামে প্রথমবার বাজারে শেয়ার ছেড়েছিল পেটিএম। গত শুক্রবার তা নেমে যায় মাত্র ৪১৯ টাকায়। নিয়ন্ত্রণবিধি ভাঙার জন্য সম্প্রতি পেটিএম পেমেন্টস ব্যাঙ্কের উপরে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কয়েকটি পরিষেবা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই কারণেই এই পতন।
আগামী ১০ দিনের মধ্যে শেষ হবে সংস্থাগুলির তৃতীয় ত্রৈমাসিকের আর্থিক ফল প্রকাশের পালা। শেষ পর্বে হাতে আসবে কয়েকটি বড় সংস্থার হিসাব। এর মধ্যে থাকবে কোল ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান এয়ারোনটিক্স, এনএইচপিসি, স্টিল অথরিটি, ওএনজিসি, সিমেন্স ইত্যাদি সংস্থা। শুক্রবার ফল প্রকাশ করেছে হিরো মোটোকর্প। তিন মাসে দেশের প্রধান বাইক নির্মাণকারীর লাভ ৫১% বেড়ে পৌঁছেছে ১০৭৩ কোটি টাকায়। শেয়ার পিছু ১০০ টাকা অন্তর্বর্তী ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে সংস্থাটি।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy