গৌতম আদানি। ফাইল চিত্র।
স্টেট ব্যাঙ্ক, এলআইসি-তে গচ্ছিত অর্থ নিয়ে মধ্যবিত্তের চিন্তা বাড়লেও আদানি শিল্প গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘মহা ঘোটালা’-র অভিযোগ নিয়ে মোদী সরকার নীরবই। হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি। শেষ পর্যন্ত মাঠে নামল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। যৌথ সংসদীয় কমিটি বা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নজরদারিতে আদানি কেলেঙ্কারির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছে কংগ্রেস।
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক আজ স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ ব্যাঙ্কগুলির কাছে জানতে চেয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত গৌতম আদানির শিল্প গোষ্ঠী কোন ব্যাঙ্কের থেকে কত টাকা ঋণ নিয়ে বসে রয়েছে। আদানি গোষ্ঠীর মোট দেনার পরিমাণ ২ লক্ষ কোটি টাকার বেশি। স্টেট ব্যাঙ্কের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি আদানি গোষ্ঠীকে বিপুল পরিমাণ ঋণ দিয়েছে। আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে ৭৪ হাজার কোটি টাকার লগ্নি রয়েছে এলআইসি বা জীবন বিমা নিগমের। শেয়ার দরে কারচুপির অভিযোগের ধাক্কায় যখন আদানির শেয়ারের দর হু হু করে পড়ছে, তখন স্টেট ব্যাঙ্ক ও এলআইসি-তে গচ্ছিত সঞ্চয়ের টাকা সুরক্ষিত কি না, তা নিয়ে মধ্যবিত্তের চিন্তা বেড়েছে।
আজ বিরোধীরা সংসদে তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। মোদী সরকার বাজেটে আয়কর ছাড়ের কথা বলে মধ্যবিত্তের মন জয়ের কথা বলেছিল। সেই মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ের সুরক্ষা নিয়েই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন। হাঙ্গামার জেরে লোকসভা ও রাজ্যসভা, দুই-ই মুলতুবি হয়ে যাওয়ায় রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে আলোচনা হয়নি। কংগ্রেসের অভিযোগ— সংসদে আদানির নাম উচ্চারণ হোক, সেটাই আদানির ‘মেন্টর’ নরেন্দ্র মোদী চান না। বিরোধীদের দাবি, আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ সত্ত্বেও মোদী সরকারই সরকারি ব্যাঙ্কগুলিকে আদানি গোষ্ঠীকে ঋণ দিতে বাধ্য করেছিল কি না, এলআইসি-কে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে টাকা ঢালতে চাপ দিয়েছিল কি না, তা নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটি বা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নজরদারিতে তদন্ত হোক। দেশের ‘অমৃত কাল’-এ ‘মহা ঘোটালা’-র অভিযোগ তুলে বিরোধীদের প্রশ্ন, ‘মোদী সরকার এ বিষয়ে কেন নীরব?’ সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে বিরোধীরা যখন আদানি নিয়ে মোদী সরকারকে নিশানা করার পরিকল্পনা করছে, সে সময় প্রধানমন্ত্রীও শীর্ষ স্তরের মন্ত্রীদের সঙ্গে সরকারের রণকৌশল
নিয়ে বৈঠক করেন। কিন্তু সরকার বা বিজেপির কেউই আদানিদের বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি।
স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ অধিকাংশ ব্যাঙ্কই এখনও জানায়নি তাদের কাছে আদানিদের কত দেনা রয়েছে। পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, আদানি গোষ্ঠী তাদের থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। সেই ঋণ শোধ নিয়ে ব্যাঙ্ক চিন্তিত। ব্যাঙ্ক অব বরোদার কাছে আদানি গোষ্ঠীর দেনার পরিমাণ ৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আদানিদের শেয়ারের পতনের পর ক্রেডিট সুইস ও সিটিগ্রুপ আদানি গোষ্ঠীর বন্ড বন্ধক রেখে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেওয়া বন্ধ করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তার পরেই রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক মাঠে নেমেছে। কিন্তু আদানিরা ২০ হাজার কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি বন্ধ করে দিলেও শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি তা নিয়ে এখনও কোনও তদন্তের নির্দেশ দেয়নি। যদিও সরকারের একটি সূত্রের দাবি, অর্থ মন্ত্রক ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক সেবি-র সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে। আর্থিক বিষয়ক সচিব অজয় শেঠ বুধবারই জানিয়েছিলেন, সরকার নির্দিষ্ট সংস্থা নিয়ে মন্তব্য করে না।
ঠিক এইখানেই প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে শিল্পপতি গৌতম আদানির সুসম্পর্ক সুবিদিত। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মোদী সরকারকে কোণঠাসা করা সম্ভব বলে বিরোধীরা মনে করছেন। পাঁচ বছর আগে ঠিক এই সময়েই কংগ্রেস মোদীর বিরুদ্ধে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনায় দুর্নীতি ও তাতে অনিল অম্বানীর সংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিল। কিন্তু তাতে নির্বাচনেও লাভ হয়নি। সাধারণ মানুষ তা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাননি। কিন্তু এ বার বিরোধীরা মনে করছেন, আদানিদের প্রতারণার সঙ্গে দেশের কোটি কোটি মানুষের পরিশ্রম লব্ধ সঞ্চয়ের প্রশ্ন জড়িত। বহু মানুষ সরাসরি আদানিদের শেয়ারে লগ্নি করেছেন। ইতিমধ্যেই সেই লগ্নিকারীদের ৭ লক্ষ কোটি টাকার শেয়ার সম্পদ ধুয়ে গিয়েছে। এলআইসি-তে ২৯ কোটি বিমার গ্রাহক, স্টেট ব্যাঙ্কে ৪৫ কোটি গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা গচ্ছিত রয়েছে। কংগ্রেস সোমবার গোটা দেশে এলআইসি-র দফতর ও স্টেট ব্যাঙ্কের শাখার সামনে বিক্ষোভ দেখাবে ।
আমেরিকার লগ্নি নিয়ে গবেষণাকারী সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ অভিযোগ তুলেছিল, গৌতম আদানির গোষ্ঠী কারচুপি করে তাদের সংস্থাগুলির শেয়ার দর বাড়িয়েছে। কৃত্রিম ভাবে ফাঁপিয়ে তোলা দামের শেয়ার বন্ধক রেখেই ঋণ নিয়েছেন আদানিরা। শেয়ারের দাম পড়ে গেলে ব্যাঙ্কগুলিও বিপদে পড়বে। আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিংহের অভিযোগ, “মোদী সরকার এমন চুপচাপ, যেন কিছুই হয়নি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy