এপ্রিল-জুনে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে নেমে আসার আগেই সরকারি পরিসংখ্যানে ধরা পড়েছিল, সঞ্চয়ের অনুপাত কমছে।
একেই বলে উভয়সঙ্কট। বাজারে চাহিদায় ভাটার টান চলছিলই, এ বার জানা যাচ্ছে সঞ্চয়ের হারও কমেছে।
এপ্রিল-জুনে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে নেমে আসার আগেই সরকারি পরিসংখ্যানে ধরা পড়েছিল, সঞ্চয়ের অনুপাত কমছে। বিশেষ করে সাধারণ পরিবারের সঞ্চয়। এখন সার্বিক ভাবে অর্থনীতির ঝিমিয়ে পড়ার কারণ খুঁজতে অর্থ মন্ত্রকে আলোচনা চলছে। সরকারি সূত্রের খবর, সেখানেও ঝিমুনির অন্যতম কারণ হিসেবে সঞ্চয়ের হার কমে যাওয়ার বিষয়টি উঠে আসছে।
কী ভাবে কমেছে সঞ্চয়? অর্থনীতিবিদরা বলছেন, একটা সময় লোকে টাকা জমিয়ে তবে দামি জিনিসপত্র কিনত। তার পর সহজে ঋণ মিলতে শুরু করল। ফলে বাড়ল ধার করে জিনিস কেনার প্রবণতা। টাকা শোধ হত ইএমআই-তে। ইদানীং আয় তেমন বাড়ছে না। ভবিষ্যতে বাড়বে কি না তা-ও অনিশ্চিত। ফলে ধারে কেনার প্রবণতা কমেছে। ও দিকে পুরনো ধার মেটাতে আয়ের অনেকখানি খরচ হয়ে যাচ্ছে বলে সঞ্চয়ও কমছে।
পরিসংখ্যান বলছে, দেশে সার্বিক সঞ্চয়ের হার ২০১৭-১৮ সালে ৩০%-র কোঠায় নেমে এসেছে। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার আগে যা ৩৫%-র কাছাকাছি ছিল। পারিবারিক সঞ্চয়ের হার ২৩% থেকে ২০১৭-১৮য় ১৭%-র ঘরে নেমে এসেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটা অর্থনীতির ভিত দুর্বল হয়ে যাওয়ার সমস্যা। তার সঙ্গে অর্থনীতি নিয়ে মানুষের মনে জমে ওঠা অনিশ্চয়তার প্রমাণও বটে। ফিচ্ গোষ্ঠীর ইন্ডিয়া রেটিংস-এর মুখ্য অর্থনীতিবিদ দেবেন্দ্র পন্থ বলেন, ‘‘লোকে যদি মনে করে, এত দিন আয় যেমন ভাবে বাড়ছিল, তার থেকে বেশি না হলেও ভবিষ্যতে অন্তত সেই ভাবে বাড়বে, তা হলেও ধার করে কেনাকাটা চালিয়ে যায়। কিন্তু আয় বাড়ার হার কমে গেলে ধার করে কেনাকাটা বন্ধ করে দেয়।’’
পরিসংখ্যান বলছে, শহরে বেতন বৃদ্ধি বা কর্পোরেট সংস্থার বেতন বৃদ্ধির হার মনমোহন জমানায় একদা ২০ শতাংশ ছাপিয়ে গিয়েছিল। গত অর্থ-বছরে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। গ্রামের বেতন বৃদ্ধির হার আরও কম। পন্থের বক্তব্য, ‘‘আয় বাড়ার হার কমে যাওয়াতেই একই সঙ্গে সঞ্চয় ও কেনাকাটা কমেছে।’’
অর্থনীতির গাড়ি ছোটে চারটি ইঞ্জিনে। নতুন লগ্নি, রফতানি, সরকারি খরচ এবং বাজারে কেনাকাটা। নতুন লগ্নি ও রফতানি— দু’দিকেই ভাটার টান। সরকারি খরচ বিশেষ বাড়ছে না। বাজারে কেনাকাটাই ছিল ভরসা। এ বার তা-ও কমে গিয়েছে। পন্থের যুক্তি, ‘‘এটা ব্যবসার ওঠাপড়ার ফলে তৈরি হওয়া ঝিমুনি নয়। এটা অর্থনীতির ভিতের দুর্বলতা। আয়বৃদ্ধির হার কমা, কম সঞ্চয়ের ফাঁদ থেকে অর্থনীতিকে বের করা না গেলে, চড়া হারে আর্থিক বৃদ্ধির পথে হাঁটা সম্ভব নয়।’’
পাশাপাশি ঋণের বোঝাও বিপুল। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, এক দশক আগেও এ দেশে আমআদমির মোট দেনার পরিমাণ ছিল ২ লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি। এখন তা ৬ লক্ষ কোটি টাকা ছাপিয়ে গিয়েছে। দিল্লির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসি-র অর্থনীতিবিদ লেখা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুরনো ধার মেটাতে গিয়ে গৃহস্থের সঞ্চয় কমছে। আয়ের বড় অংশ না যাচ্ছে সঞ্চয়ে, না যাচ্ছে কেনাকাটায়। ব্যাঙ্কে, ডাকঘরে সুদের হার কমার ফলেও সঞ্চয়ে ধাক্কা লেগে থাকতে পারে। কিন্তু আয় কমে যাওয়াই সঞ্চয় কমার আসল কারণ।’’
সাধারণ মানুষ ব্যাঙ্কে যে টাকা জমান, সে টাকাই আবার সরকার বা কর্পোরেট সংস্থাগুলি ব্যাঙ্ক থেকে ধার করে লগ্নি করে। এমনিতেই সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং আমজনতা মিলিয়ে যে সঞ্চয় করে, তার থেকে অনেক বেশি লগ্নির প্রয়োজন হয়। তার উপরে সব ক্ষেত্রেই, বিশেষ করে আমজনতার সঞ্চয় কমায় লগ্নির প্রয়োজনে বিদেশ থেকে বেশি সুদে ঋণ করতে হচ্ছে। লেখাদেবীরও মত, ‘‘সঞ্চয়ের হার কমে যাওয়া আর্থিক বৃদ্ধির স্বাভাবিক গতিকেই ধাক্কা দিয়েছে। অর্থনীতির ভিতের দুর্বলতাটা বাস্তব। কাঠামোগত সমস্যার সমাধান না হলে বৃদ্ধির হার বাড়বে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy