প্রতীকী ছবি।
তেলের দামের লাগামছাড়া দৌড় নিয়ে ফাঁপড়ে কেন্দ্র। পেট্রল-ডিজেল যত চড়ছে, তত জোরালো হচ্ছে উৎপাদন শুল্ক ছাঁটার দাবি। করোনার আবহে জ্বালানির চাহিদা কমায় যে শুল্ক বাড়িয়ে অতিরিক্ত আয়ের পথ চওড়া করেছিল কেন্দ্র। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম তলানি ছোঁয়া সত্ত্বেও। সরকারি সূত্রের খবর, এখন পেট্রল-ডিজেলের ওই চড়া শুল্কই যে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আরও বাড়াচ্ছে, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে তারা। কিন্তু এটাও পরিষ্কার, শুল্ক কমালে আকাশছোঁয়া ঘাটতিতে কাবু রাজকোষ আরও ধাক্কা খাবে। ফলে উভয় সঙ্কটে মোদী সরকার।
বুধবার কলকাতায় লিটারে ৭৭.৭০ টাকা ছুঁয়ে রেকর্ড করেছিল ডিজেল। বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়ান অয়েলের পাম্পে তা আরও ২৭ পয়সা বেড়ে এই প্রথম পৌঁছেছে ৭৭.৯৭ টাকায়। পেট্রল ২৪ পয়সা বেড়ে হয়েছে ৮৫.৬৮ টাকা। রেকর্ড উচ্চতা মাত্র কয়েক হাত দূরে।
সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, চড়া তেলের দাম অস্বস্তি এতটাই বাড়িয়েছে যে মঙ্গলবার তেল মন্ত্রক ও রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলিকে নিয়ে তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পি কে মিশ্র। কিন্তু শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে তেল সংস্থাগুলির তরফে পেট্রল-ডিজেলের দাম আরও বাড়তে পারে শুনে শুল্ক ছাঁটাইয়ের ভাবনাকে একেবারে বাদ দিয়েও এগোতে পারছে না তারা। কারণ, একে তো বিরোধীদের তোপের পাশাপাশি ক্রেতাদের অসন্তোষের আঁচ বাড়ছে। তার উপরে তেলের দাম বাড়লে মূল্যবৃদ্ধির হারও চড়বে। যা অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়ায় জল ঢালতে পারে।
তেল সংস্থার যুক্তি
• প্রায় এক মাস ভারতে পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়নি।
• বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর বেড়েছে। বুধবার ব্রেন্ট ক্রুড ছিল ব্যারেলে প্রায় ৫৪ ডলার।
• দেশের তেলের দাম না-বাড়ালে ব্যবসা ধাক্কা খাবে।
• অশোধিত তেল ১ ডলার বাড়লে, আমদানি বিল বাড়ে ১০,৭০০ কোটি টাকা।
• জানুয়ারিতে আরও বাড়াতে হতে পারে দাম।
অভিযোগ
• গত ৪ মে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল ছিল ২৩.৩৮ ডলার। কিন্তু ৫ মে মধ্যরাতে পেট্রলে লিটার প্রতি ১০ টাকা ও ডিজেলে ১৩ টাকা উৎপাদন শুল্ক ও সেস বাড়ায় মোদী সরকার।
• বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর তলানি ছুঁলেও ১৭ মার্চ থেকে ভারতে কমেনি তেলের দাম। টানা ৮২ দিন। কলকাতায় পেট্রল ছিল ৭৩.৩০ টাকা, ডিজেল ৬৫.৬২ টাকা।
• ২০১৪ সালের মে মাস থেকে ২০২০-র মে, মোদী সরকারের ছ’বছরে পেট্রলে কর বেড়েছে প্রায় ২৫০%, ডিজেলে প্রায় ৮০০%।
• ভারতে তেলের দামের প্রায় ৬৯ শতাংশই কর। সারা বিশ্বে সব থেকে বেশি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইটালি। করের বোঝা সেখানে ৬৪%।
• গত সাড়ে ছ’বছরে এ ভাবে ১৯ লক্ষ কোটি টাকা বাড়তি আয় করেছে সরকার।
একেই করোনায় বেহাল আর্থিক অবস্থা। সাধারণ মানুষের আশঙ্কা, এর উপরে চড়া তেল যাতায়াতের খরচ তো বাড়াবেই, পরিবহণে বেশি টাকা লাগায় খাদ্যপণ্য-সহ জিনিসপত্রের দামকেও ঠেলে তুলবে হয়তো। অনেকেই প্রশ্ন, চোট খাওয়া রুজি নিয়ে তখন মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাঁরা পাল্লা দেবেন কী করে?
সূত্রের খবর, বৈঠকে নাকি তেল সংস্থার কর্তারা জানিয়েছেন, অশোধিত তেলের দর যে ভাবে বাড়ছে তাতে ভারতে জ্বালানির দাম আরও বাড়াতে হতে পারে। কারণ, লিটারে লভ্যাংশ (মার্জিন) তখন এক টাকার নীচে নামবে। সংস্থা চালাতে গেলে যা দু’টাকারও বেশি হওয়া জরুরি। তার উপরে তাদের আয় একপ্রস্ত কমেছে করোনাকালে তেলের চাহিদা কমাতেও। এই অবস্থায় ক্রেতাকে দামের ছেঁকা থেকে বাঁচাতে রয়ে যায় শুধু শুল্ক ছাঁটাই।
৭ জুন থেকে আজ পর্যন্ত (মাঝে কিছু দিন করে থমকে ছিল) কলকাতায় পেট্রল-ডিজেলের দর লিটারে বেড়েছে যথাক্রমে ১২.৩৮ ও ১২.৩৫ টাকা। বিরোধীদের কটাক্ষ, গত ছ’বছরে তেলের দামে সব থেকে বেশি শুল্ক বৃদ্ধি মোদী সরকার আরও একটি ‘সাফল্য’। অথচ অশোধিত তেল সব থেকে কমেছে তাদের জমানাতেই। সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত, তেল নিয়ে বৈঠক আরও হবে। ওই শুল্কই সঙ্কট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy