প্রতীকী ছবি।
দক্ষিণ কলকাতায় স্বর্ণঋণ সংস্থার সামনে দীর্ঘ লাইন। ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর ফি জমা করতে এক গৃহবধূ সোনার গয়না বন্ধক রেখে ঋণ নিতে এসেছেন। কোভিড-লকডাউনের ধাক্কায় স্বামীর বহু দিনের চাকরি গিয়েছে। ছোটখাটো কাজ করে সংসার টানতে হচ্ছে। বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ফি জমা করতে তাই বিয়ের গয়নাই ভরসা।
ওই লাইনে এক প্রৌঢ় ব্যবসায়ীও দাঁড়িয়ে। তাঁর ছোট লোহার যন্ত্রাংশের কারখানা। লকডাউনের পর থেকেই ব্যবসা মার খাচ্ছে। এ দিকে কর্মীদের পুজোর বোনাস দিতে হবে। তাই স্ত্রী-র গয়না বন্ধক রাখতে এসেছেন তিনিও।
শুধু কলকাতা নয়। কোভিড-লকডাউনের ধাক্কায় গোটা দেশেই দিশাহারা বহু গৃহস্থ, ছোট ব্যবসায়ীরা বাধ্য হচ্ছেন সোনার গয়না বন্ধক রেখে টাকা ধার করতে। এ বার সেই কঠিন বাস্তবের ছবিটা স্পষ্ট রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যানেও। সেখানে বলা হয়েছে, অগস্টে সোনা বন্ধক রেখে ধার নেওয়ার পরিমাণ এক বছর আগের তুলনায় ৬৬% বেশি। গত বছর মার্চের শেষে তা ছিল প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা, যখন কোভিড হানা রুখতে সবেমাত্র লকডাউনে সব স্তব্ধ হয়েছে। সেই বিধিনিষেধ শিথিলের পরে সে বছর অগস্টে স্বর্ণঋণ বেড়ে ৩৭ হাজার কোটি টাকা ছোঁয়। এ বছরের অগস্টে তা-ই রকেট গতিতে বেড়ে পৌঁছেছে প্রায় ৬৩ হাজার কোটিতে। ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণ বিলির মধ্যে স্বর্ণঋণের হার ২.১%। দু’বছর আগে ছিল ১.২%।
অর্থনীতিবিদদের ব্যাখ্যা, ভারতে সোনার গয়নাকে কার্যত ঘরের লক্ষ্মী হিসেবে দেখা হয়। আর কোনও উপায় না-থাকলে মানুষ গয়না বন্ধক রেখে টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করেন। এই ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধিতেই পরিষ্কার, অর্থনৈতিক সঙ্কট কতটা গভীর। করোনাকালে বহু মানুষের চাকরি গিয়েছে, বেতন কমেছে, ব্যবসা মার খেয়েছে বা পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে। যার প্রতিফলন আরবিআইয়ের তথ্যে।
শীর্ষ ব্যাঙ্ক সূত্রের ব্যাখ্যা, তা-ও এই পরিসংখ্যানে শুধু ব্যাঙ্ক এবং মুথুট, মল্লপুরমের মতো স্বর্ণঋণ সংস্থা থেকে নেওয়া ধারের খতিয়ানই আছে। অসংখ্য মানুষ সোনার দোকানে বা মহাজনের কাছে গয়না দিয়ে ধার করলেও, সেই হিসাব ধরা পড়েনি। এর সঙ্গে অসংগঠিত ক্ষেত্রের ছবি যোগ হলে বোঝা যাবে, সঙ্কট কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মধ্যে ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিও গয়না বন্ধক রেখে ঋণ দিতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। কারণ টাকা শোধ না-হলে গয়না গলিয়ে সোনা বেচে বকেয়া উদ্ধার করা সহজ।
এই সংক্রান্ত প্রশ্নে অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ কথা ঠিক, অর্থনীতির সঙ্কটে মানুষকে গয়না বন্ধক রেখে ঋণ নিতে হয়েছে। কিন্তু স্বর্ণঋণ বৃদ্ধির হার আগের থেকে কমেছে। গত বছরের মার্চ থেকে অগস্টে তার পরিমাণ এক ধাক্কায় ১৩.২% বেড়ে গিয়েছিল। এ বছরের মার্চ থেকে অগস্টে মাত্র ৩.৬% বেড়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy