প্রতীকী ছবি।
খাতায়-কলমে নতুন নিয়ম তৈরি। ২৮ ডিসেম্বরের মাঝরাত থেকে কেব্ল, ডিটিএইচ পরিষেবা যে আমূল বদলে যাবে, আগেভাগে সেই ঘোষণা সারা। কিন্তু তার ৪৮ ঘণ্টা আগেও পুরো বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি চরমে। কোন ধরনের ক’টি চ্যানেল প্রথম একশোর মধ্যে বাছা যাবে, মোট প্যাকেজ দাঁড়াবে কত টাকার, চ্যানেল বাছাই করতে হবে কোথা থেকে— সমস্ত বিষয়েই অধিকাংশ গ্রাহক এখনও আতান্তরে। এক-এক সময়ে এক-এক রকম কথা বলছেন লোকাল কেব্ল অপারেটররাও (এলসিও)। ফলে বেগতিক বুঝে ট্রাই জানাল, ২৯ তারিখ থেকে টিভির পর্দায় বন্ধ হচ্ছে না পুরনো পরিষেবা। এখন যিনি যে চ্যানেল দেখেন, তার কোনওটি বন্ধ করা যাবে না ওই দিন থেকে। চালু থাকবে পুরনো ব্যবস্থাও। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার দিল্লিতে সংশ্লিষ্ট শিল্পের সঙ্গে ফের বৈঠকে বসছে তারা। ইঙ্গিত, নতুন ব্যবস্থা মসৃণ ভাবে চালু করতে কিছুটা বাড়তি সময় দেওয়ার।
আগে বলা হয়েছিল, নতুন নিয়মে বাজেট বুঝে গ্রাহকদের চ্যানেল বাছতে হবে নতুন করে। ২৮ তারিখ মাঝরাতের মধ্যে তা না করলে, কেব্ল সংযোগ থাকবে না। কিন্তু এই শেষ সময়েও বহু জায়গায় গ্রাহকেরা নিয়ম বদলের কথা জানেন না। বাছাইয়ের জন্য তাঁদের কাছে চ্যানেলের তালিকা নিয়ে পৌঁছননি কেব্ল অপারেটর। অপারেটরদের সকলের ধারণাও যে খুব স্পষ্ট, এমন নয়। এমনকি গ্রাহকের কাছ থেকে কোন চ্যানেলের কী দর নেওয়া হবে, তা নিয়েও তাঁদের চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি মাল্টি সিস্টেম অপারেটরদের (এমএসও) সঙ্গে।
বিভিন্ন জেলা, এমনকি খাস কলকাতার অনেক গ্রাহকও বলছেন, বাছাইয়ের জন্য চ্যানেলের নাম নিয়ে কেব্ল অপারেটররা এখনও তাঁদের কাছে আসেননি। অনেকের আবার আশঙ্কা বিপুল মাসুল বৃদ্ধি নিয়ে। উল্টো দিকে অপারেটররা বলছেন, চ্যানেলগুলিতে শুধু তাদের সর্বোচ্চ দাম ফুটে উঠছে। আদপে যে দর তাঁরা গ্রাহকের কাছ থেকে নেবেন, তা ঠিক করার চুক্তি এমএসও-র সঙ্গে হয়নি।
অনেক গ্রাহকের প্রশ্ন, ট্রাই চ্যানেল বাছাইয়ে সুবিধার কথা বলেছিল। প্রতিশ্রুতি ছিল অপ্রয়োজনীয় চ্যানেল কমার। কিন্তু এখন ১৩০ টাকা (জিএসটি বাদে) ক্যাপাসিটি ফি দিয়ে নেওয়া প্রথম ১০০টি চ্যানেল শুধু ফ্রি টু এয়ার চ্যানেলেই ভরে দিচ্ছেন অপারেটর। যার অধিকাংশই অপ্রয়োজনীয়! গ্রাহকদের আশঙ্কা, এক দিকে খরচ বাড়বে। অথচ বাড়বে না চ্যানেল বাছাইয়ের স্বাধীনতা।
ডামাডোল
গোড়ায় গন্ডগোল
কথা ছিল
• ২৮ ডিসেম্বর মাঝরাত থেকে কেব্ল টিভি ও ডিটিএইচ পরিষেবায় চালু হবে নতুন নিয়ম। পুরনো পদ্ধতিতে টিভির পর্দায় চোখ রাখা বন্ধ ২৯ তারিখ থেকেই।
এখন পরিস্থিতি
• শেষ প্রহরেও বিভ্রান্তি চরমে। অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহকদের এক-এক সময়ে এক-এক রকম বলছেন কেব্ল অপারেটররা। তাই ট্রাইয়ের নির্দেশ, অন্তত ২৯ তারিখ থেকেই বাতিল হচ্ছে না পুরনো পদ্ধতি। নতুন নিয়মে সরগড় হতে আরও সময় দেওয়ার ভাবনা।
অপ্রয়োজনীয়
কথা ছিল
• দূরদর্শনের চ্যানেলগুলি নিয়ে মোট ১০০টি এসডি চ্যানেল দেখার অধিকার পেতে ক্যাপাসিটি ফি গুনতে হবে ১৩০ টাকা (জিএসটি বাদে) পর্যন্ত। কেব্ল অপারেটর তার কমও নিতে পারেন।
• এই ১০০টির মধ্যে যেমন ফ্রি টু এয়ার (এফটিএ) চ্যানেল থাকতে পারে, তেমনই থাকতে পারে পে চ্যানেলও। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয়টির জন্য শুধু মাসুল গুনলেই চলবে।
কিন্তু অভিযোগ
• প্রথম ১০০টি চ্যানেলের গোছায় শুধু ফ্রি টু এয়ার চ্যানেলই দিচ্ছেন অপারেটররা। যার অধিকাংশ আবার দেওয়া হচ্ছে জোর করে। গ্রাহক হয়তো মনে করছেন, তিনি তা দেখবেনই না কখনও!
• ১০০ চ্যানেলের ক্যাপাসিটি ফি শুধু এফটিএ চ্যানেলেই শেষ। ফলে তারপরে ‘দেখার মতো’ বাড়তি চ্যানেল নিতে গেলেই লাগছে আলাদা সংযোগ ফি। প্রতি ২০টি বাড়তি চ্যানেলে ২৫ টাকা পর্যন্ত (জিএসটি বাদে)। সঙ্গে পে চ্যানেলের মাসুল।
দাবি ছিল
• ট্রাইয়ের দাবি ছিল, নতুন নিয়মের অন্যতম লক্ষ্য, চ্যানেল বাছাইয়ে গ্রাহকের পছন্দকে অগ্রাধিকার দেওয়া। য’টি এবং যে চ্যানেলগুলি তিনি দেখতে চান, শুধু সেগুলির দামই যেন গুনতে হয় তাঁকে। সেই সঙ্গে সংযোগে কমে সেই সব চ্যানেলের ভিড়, যেগুলি তেমন উল্টেও দেখা হয় না কখনও।
এখন প্রশ্ন
• নতুন নিয়মে তাহলে লাভ কী হল? সেই তো অপ্রয়োজনীয় চ্যানেলেই ঠাসা থাকছে সংযোগ!
শাঁখের করাত
আশঙ্কা ছিল
• গ্রাহকদের আশঙ্কা, নতুন নিয়মে টিভি দেখার খরচ বাড়বে। অনেকের বক্তব্য, এখন ৩০০-৩৫০ টাকার প্যাকেজে যা চ্যানেল থাকে, তার সবক’টি রাখতে খরচ পড়বে ১,০০০-১,২০০ টাকা।
যুক্তি ছিল
• এর পাল্টা হিসেবে ট্রাইয়ের যুক্তি ছিল, সব চ্যানেল তো সকলে দেখেন না। ঠিক যেগুলি দেখেন, সেগুলি বেছে নিলে খরচ তেমন বাড়বে না। বরং সামান্য কিছু বাড়তি গুনে অনেক বেশি স্বাধীনতা মিলবে চ্যানেল বাছাইয়ে। কমবে ‘অবাঞ্ছিত’ চ্যানেলের ভিড়।
গ্রাহকের ক্ষোভ
• এখন ক্ষুব্ধ গ্রাহকের প্রশ্ন, সেই কথা রাখা হচ্ছে কোথায়? এক দিকে, বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। অন্য দিকে, না করার জো নেই আপত্তির এফটিএ-তেও।
ট্রাই সূত্রের বক্তব্য, ১০০টি চ্যানেলের মধ্যে দূরদর্শন বাদে শুধু এফটিএ চ্যানেল রাখা বাধ্যতামূলক নয়। পে চ্যানেলও রাখতে পারেন গ্রাহক। শুধু তার আলাদা মাসুল দিতে হবে। ট্রাইয়ের এই যুক্তি মানছেন এমএসও— সিটি কেব্লের ডিরেক্টর সুরেশ শেঠিয়া ও আইডিয়াল কেব্ল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অলোক শর্মাও। তাঁদের দাবি, একেবারে শেষ পর্বে প্রস্তুতি শুরুর জন্যই এই বিভ্রান্তি।
সময় প্রসঙ্গে ট্রাইয়ের দাবি, গত জুলাইয়ে ২৯ ডিসেম্বরের সময়সীমার কথা জানানো হয়েছিল। এমএসওদের পাল্টা দাবি, মামলা চলায় নিয়ম একই থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল যথেষ্ট। সুরেশবাবু ও বেঙ্গল ব্রডব্যান্ডের কর্তা মৃণাল চট্টোপাধ্যায় জানান, ব্যবস্থাটি পর্যায়ক্রমে চালুর জন্য আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা।
ট্রাইয়ের ওয়েবসাইট বিভ্রাট: যাবতীয় বিতর্কের মধ্যে বুধবার আবার বিভ্রাট ট্রাইয়ের ওয়েবসাইটে। বার বার চেষ্টাতেও তা খোলা যায়নি। ট্রাই সূত্রে দাবি, সাইটটি এনআইসির সঙ্গে যুক্ত। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই এই সমস্যা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy