লগ্নিকারীদের অভিযোগ ছিল, অবিলম্বে চাহিদা বাড়িয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার মালমশলা নেই এ বারের বাজেটে। যার জন্য হা-পিত্যেশ করে বসেছিলেন তাঁরা। সে জন্যই শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি বাজেট ঘোষণার দিন সেনসেক্স প্রায় হাজার পয়েন্ট পড়ে। অথচ তার পরেই সোমবার থেকে সেই হতাশার লেশমাত্র দেখা যায়নি। চার দিনে দেড় হাজারেরও বেশি উঠেছে সূচক। আর তাতেই অবাক সকলে। প্রশ্ন উঠছে, কী এমন হল যে এক দিনেই কেটে গেল যাবতীয় হতাশা?
সরকার অবশ্য ভাল বাজেটের যুক্তি দেখিয়ে এই উত্থানের কৃতিত্ব নিজেদের ঝুলিতে পুরেছে। তবে বাজার মহলে গুঞ্জন, এর পেছনে আছে করোনাভাইরাস আক্রান্ত টালমাটাল চিনের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বেজিংয়ের দ্রুত মাঠে নামা। কারণ, চিনের মতো বড় অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়লে তার প্রভাব আছড়ে পড়বে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে। এমনিতেই যার গতি এখন শ্লথ। তবে এটাও ঠিক, সেনসেক্স অনেক দিন পরে ৩৯ হাজারের ঘরে ফিরেছিল শনিবার। ফলে কম দামে ভাল শেয়ার কেনার সুযোগ পেয়েছিলেন লগ্নিকারীরা। উত্থানের কারণ এই লগ্নিও।
ভারতে শেয়ার সূচককে অবশ্য এর আগেও দেশীয় অর্থনীতির দুর্বলতা বা অনিশ্চয়তাকে পাশ কাটিয়ে উঠতে দেখা গিয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে, করোনা আতঙ্কের কালো ছায়া কিন্তু সরে যায়নি। চিনে মৃত্যু এবং আক্রান্তের সংখ্যা যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে ভয়। এই রোগ অন্য কিছু দেশে আরও ছড়ালে তা বিশ্ব জোড়া শিল্প-বাণিজ্যকে বড়সড় ধাক্কা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে বড় পতনের ভয় থাকছে ভারতের শেয়ার বাজারেও।
বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী সংস্থাকে ডিভিডেন্ড বণ্টন কর দিতে হবে না। কর দেবেন শেয়ারে লগ্নিকারীরা, যাঁরা ডিভিডেন্ড পাচ্ছেন। মনে করা হচ্ছে, আগামী বছর থেকে ইকুইটি ফান্ডে (শেয়ার নির্ভর ফান্ড) লগ্নিকারীদেরও কর গুনতে হবে ফান্ড থেকে প্রাপ্ত ডিভিডেন্ডে। এ ছাড়া ডিভিডেন্ডের অঙ্ক ৫০০০ টাকার বেশি হলে উৎসে ন্যূনতম কর কেটে নেবে সংশ্লিষ্ট ফান্ড। ফান্ড ডিভিডেন্ডে কর এড়ানোর সেরা উপায়, ডিভিডেন্ড বিকল্প থেকে বৃদ্ধি বা গ্রোথ বিকল্পে সরে যাওয়া।
এ দিকে গত সপ্তাহে টানা দ্বিতীয় বার সুদ (রেপো রেট) ৫.১৫ শতাংশে অপরিবর্তিত রেখেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। অর্থনীতি চাঙ্গা করতে সুদ কমা জরুরি হলেও, হালে খুচরো ও পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি মাথা তোলায় এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাশিতই ছিল। রেপো না-কমলেও স্টেট ব্যাঙ্ক ঋণের পাশাপাশি জমায় আরও সুদ কমিয়েছে। গত ক’মাসে ব্যাঙ্কে সুদ অনেকটা নামায় এপ্রিলে সুদ ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতেও। ব্যাঙ্ক এবং ওই সব প্রকল্পে সুদের ফারাক এখন ১.৫-২ শতাংশ বা তার বেশি। তাই ব্যাঙ্কগুলি সরকারের কাছে স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ কমানোর দরবার করেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সেই ইঙ্গিতও দিয়েছে। তাই চাইলে মার্চের মধ্যেই স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে লগ্নি করে ফেলতে পারেন ইচ্ছুকেরা। তা হলে অন্তত বেশ কয়েক বছর একটু বেশি সুদের সুবিধা নিতে পারবেন।
এত দিন নজর বাজেটে ছিল বাজেটে। এর ফাঁকেই তৃতীয় ত্রৈমাসিকের আর্থিক ফল প্রকাশ করেছে কিছু সংস্থা। দেখা গিয়েছে, স্টেট ব্যাঙ্কের লাভ প্রায় ৪১% বেড়ে পৌঁছেছে ৫৫৮৩ কোটি টাকায়। এসার স্টিলের ১১,০০০ কোটি অনাদায়ী ঋণ উদ্ধার হওয়ায় নিট অনুৎপাদক সম্পদ ১৩০ বেসিস পয়েন্ট কমে হয়েছে ২.৬৫%। হিন্দুস্তান লিভার এবং আইটিসির লাভ বেড়েছে যথাক্রমে ১২% ও ৫.৭%। ১০৩৫ কোটি লোকসান গুনেছে ভারতী এয়ারটেল। আবার লোকসানের (৪৯২ কোটি) খাতায় ঢুকেছে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক। ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ ফল প্রকাশ।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy