Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

চিঠিতে চাঙ্গা! চোখ কপালে ডাকঘরের

স্লোগানে যে পেট ভরে না, তা নতুন কথা নয়। আর সংখ্যা বলছে, তা লেখা গোছা গোছা পোস্টকার্ড খোদ প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে পাড়ি দিলেও মুনাফার মুখ দেখবে না ডাকঘর।

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ০১:৩৫
Share: Save:

স্লোগানে যে পেট ভরে না, তা নতুন কথা নয়। আর সংখ্যা বলছে, তা লেখা গোছা গোছা পোস্টকার্ড খোদ প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে পাড়ি দিলেও মুনাফার মুখ দেখবে না ডাকঘর। আদৌ রাস্তা মসৃণ হবে না তার ঘুরে দাঁড়ানোর। বরং তাতে ক্ষতির অঙ্ক লাফিয়ে বাড়বে বলেই ডাক বিভাগের কর্তাদের আশঙ্কা।

এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপ, ই-মেলের দাপটে পোস্টকার্ড এতটাই কোণঠাসা যে, কার্যত নিরুদ্দেশের নোটিস ঝোলানো যায় তার নামে। চিঠিতে বিজয়ার প্রণাম জানানোর মতোই ওই হলদেটে কাগজ এখন দুর্লভ। কিন্তু গত কিছু দিন ধরে সেই পোস্টকার্ড হঠাৎই শিরোনামে। নিখাদ রাজনৈতিক তাল ঠোকাঠুকির কারণে। এক দিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে ‘জয় শ্রীরাম’ লেখা চিঠি পাঠাচ্ছে বিজেপি। পাল্টা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তাঁর দিল্লির ঠিকানায় ‘জয় হিন্দ’ লেখা পোস্টকার্ড পাঠাচ্ছে তৃণমূল। ভোটের আগে কাজের বেহাল দশার কথা মনে করিয়ে যুব সম্প্রদায়ের উদ্দেশে পোস্টকার্ড ছেড়েছিল ডিওয়াইএফআই-ও।

বিজেপি বনাম তৃণমূলের এই পোস্টকার্ডের লড়াই দেখে গত কয়েক দিনে রাস্তাঘাট, বাজারে প্রবল হাসাহাসি। সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা সরস মন্তব্য। মূল বক্তব্য, এ বার কি তবে এই পোস্টকার্ড-যুদ্ধের হাত ধরেই ফিরবে চিঠি সংস্কৃতি। যা ফিরিয়ে দেবে ডাকঘরের রমরমা। মোটা লাভের মুখ দেখবে ডাক বিভাগ।

কিন্তু প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসছেন ডাক বিভাগের শীর্ষ কর্তারাই। কেন্দ্রীয় ডাক বিভাগের ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কলের কর্তাদের দাবি, মুনাফার প্রশ্নই নেই। কারণ ওই বিভাগের সর্বশেষ রিপোর্ট বলছে, বছর দুয়েক আগে একটি পোস্টকার্ড ছাপা থেকে তা বিলি করা পর্যন্ত গড়ে ১২ টাকারও বেশি খরচ হলেও, তা থেকে আয় হয় মাত্র ৫০ পয়সা (যা তার দাম)। এখনও আয় একই। কিন্তু গড় খরচ দু’বছরে আরও বেড়েছে। ফলে প্রায় নিরুদ্দেশের পথে পা বাড়ানো পোস্টকার্ডকে ঘিরে হঠাৎ হইচই তৈরি হলেও, তাতে আর্থিক ভাবে উল্লসিত হওয়ার কারণ নেই।

একই ছবি ইনল্যান্ড এমনকি স্পিড পোস্টের ক্ষেত্রেও। সেখানেও ‘ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রি’র দশা। ডাক বিভাগের এক কর্তা বলছিলেন, এক সময়ে পোস্টকার্ড, ইনল্যান্ড লেটারের চল ছিল ঘরে ঘরে। নব্বইয়ের দশকে টিভি সিরিয়ালের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে জনপ্রিয় হয় দামি কম্পিটিশন পোস্টকার্ড। কিন্তু এখন এ সব কার্যত অতীত। চাহিদা তলানিতে। তাঁদের বক্তব্য, নতুন করে সারা বছর পোস্টকার্ড, ইনল্যান্ডের চাহিদা ফের তৈরি হলে আলাদা কথা। কারণ, তাতে গড় খরচ কমে। আর ওই পরিষেবা দেওয়ায় দায়বদ্ধতা বাড়ে কেন্দ্রেরও। কিন্তু এমন উটকো চাহিদা ডাকঘরের কাজে আসবে না বলেই তাঁদের দাবি।

রাজ্যে ডাক বিভাগের এক উচ্চপদস্থ কর্তার আশঙ্কা, হঠাৎ দু’দিন বিক্রি বাড়লে পোস্টকার্ড বাছাই করে বিলি করতে বাড়তি কর্মী নিয়োগ করতে হতে পারে। দিতে হবে পারে ওভারটাইম। তাতে খরচ তো বাড়বে! তিনি বলেন, ‘‘চাহিদা থাকলে জোগান দেব। কিন্তু তাতে লাভ কী হবে?’’ বরং এখন ডাকঘরের লাভের জায়গা হয়ে উঠেছে ই-কমার্স ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা। এক সূত্র বলছেন, সাধারণ পোস্টকার্ডের বদলে তা রেজিস্ট্রি করে পাঠালে বরং দু’পয়সা লাভ ছিল। সে ক্ষেত্রে ৫০ পয়সা ছাড়াও আরও অন্তত ১৭ টাকা দিতে হত প্রেরককে।

এই আবহে শোনা গিয়েছে, কিছু ডাকঘরে নাকি চাহিদা মাফিক পোস্টকার্ডের জোগান নেই। সে ক্ষেত্রেও ডাক বিভাগের ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কলের কর্মী সংগঠন থেকে কর্তাদের দাবি, এখনও চাহিদা বৃদ্ধি চোখেই পড়েনি সে ভাবে। সার্কল স্ট্যাম্প অফিসে নতুন বরাত এখনও আসেনি।

পরিষেবা ২০১৫-১৬ ২০১৬-১৭
খরচ আয় খরচ আয়
পোস্টকার্ড ৯.৯৪ ০.৫০ ১২.১৫ ০.৫০
প্রিন্টেড পোস্টকার্ড ৯.২৭ ৬.০০ ১১.৭৪ ৬.০০
কম্পিটিশন পোস্টকার্ড ৯.২৮ ১০.০০ ১১.৭৫ ১০.০০
ইনল্যান্ড লেটার ৯.৬৮ ২.৫০ ১২.০৭ ২.৫০
স্পিড পোস্ট ৬৭.৩৫ ৩৮.৭১ ৮৫.২২ ৩৮.৩১

অন্য বিষয়গুলি:

Post Office Narendra Modi Jai Shree Ram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy