প্রতীকী ছবি।
বিশ্ব অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন কী? নিশ্চিত ভাবেই বেশিরভাগ মানুষ বলবেন মূল্যবৃদ্ধির কথা। সেই আগুনে জ্বলছে ভারতও। মার্চে এ দেশের খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার পৌঁছে গিয়েছে ৬.৯৫ শতাংশে। যা ১৭ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ফেব্রুয়ারিতে এই হার ছিল ৬.০৭%। আমেরিকা এবং ব্রিটেনেও মূল্যবৃদ্ধির হার এখন চার দশকের সর্বোচ্চ। দাম বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে দুই দেশেই সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। ভারতে অবশ্য এপ্রিলের ঋণনীতিতে তা রাখা হয়েছে অপরিবর্তিত। সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাখ্যা, জিনিসপত্রের দামে লাগাম পরানো না গেলে জুনে সুদ বাড়াতে হতে পারে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককে। আর আগামী দিনে সুদের হার বাড়তে পারে ধরে নিয়ে ঋণপত্রের ইল্ড বেড়েই চলেছে। গত সপ্তাহে ১০ বছর মেয়াদি সরকারি ঋণপত্রের ইল্ড বেড়ে ৭.২১ শতাংশে পৌঁছেছে। সুদ সত্যিই বাড়লে তা ৭.৫০ শতাংশে পৌঁছে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রেপো রেট (যে সুদের হারে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক স্বল্প মেয়াদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেয়) বাড়ানো হলে ব্যাঙ্কের জমা এবং ঋণ, এই দুই ধরনের সুদই মাথা তুলবে।
জিনিসপত্রের দাম এতটা বৃদ্ধির ফলে সমস্যায় পড়েছেন মূলত মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তেরা। মার্চে খাদ্য ও পানীয়ের দাম বেড়েছে ৭.৪৭%। জ্বালানি ও বিদ্যুতের খরচ ৭.৫২% বেড়েছে। এই সবের পাশাপাশি, ওষুধপত্র-সহ অনেক জিনিসের দাম সম্প্রতি বৃদ্ধি পাওয়ায় এপ্রিলে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি আরও চড়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ভাবে চললে জুনে সুদ বাড়ানো ছাড়া শীর্ষ ব্যাঙ্কের সামনে হয়তো আর পথ থাকবে না। জমার উপরে সুদ বাড়লে সুদ নির্ভর মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন বটে, তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাবও উপেক্ষা করার নয়। যেমন, সুদ বাড়ানো হলে শিল্পবৃদ্ধির গতি শ্লথ হবে। ঋণপত্রের ইল্ড বাড়লে সরকারের বাজার থেকে ধার নেওয়ার খরচও চড়বে। অর্থনীতির উপরে এই সবের প্রভাব কিন্তু ভাল নয়।
এক দিকে জিনিসপত্রের চড়া দাম এবং অন্য দিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের কোনও লক্ষণ না দেখা যাওয়ায় ভারত, আমেরিকা-সহ সারা বিশ্বের শেয়ার বাজারেই দুর্বলতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। গত সপ্তাহের তিনটি কাজের দিনে মোট ১১০৮ পয়েন্ট নেমে সেনসেক্স থিতু হয় ৫৮,৩৩৯ পয়েন্টে। লগ্নিকারীদের কাছে জীবন বিমা নিগমের (এলআইসি) প্রথম শেয়ারের (আইপিও) আকর্ষণ বাড়াতে এবং ভাল দাম পেতে হলে বাজারকে এখন চাঙ্গা থাকতে হবে। যদিও পরিস্থিতি এখন তেমনটা নয়। বিশ্ব বাজারে ব্যারেল প্রতি অশোধিত তেলের দাম একটা সময়ে ১৩৯ ডলারে পৌঁছে গেলেও মাঝে তা নেমে আসে ১০০ ডলারের আশেপাশে। গত সপ্তাহে সেই দাম ফের ১১১.২৩ ডলারে উঠেছে। আশঙ্কা, ব্রেন্ট ক্রুডের এই উত্থান ভারতে ফের পেট্রল-ডিজ়েলের দামকে ঠেলে তুলতে পারে। যা গত কয়েক দিন থমকে রয়েছে একই জায়গায়। তেলের দাম আবার বাড়তে শুরু করলে তা মূল্যবৃদ্ধিতে ইন্ধন দেবে। রাশিয়া থেকে পাওয়া সস্তার তেল এই সমস্যার কতটা সুরাহা করে সেটাই এখন দেখার।
দু’সপ্তাহ হল ২০২১-২২ অর্থবর্ষ শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন শিল্প ও বাণিজ্যিক সংস্থার শেষ তিন মাস এবং গোটা বছরের আর্থিক ফলাফল প্রকাশ। বড় অঙ্কের মুনাফা করেছে টিসিএস, ইনফোসিস, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক। আজ, সোমবার বাজার খুললে বোঝা যাবে এই ভাল ফলের প্রভাব তাদের শেয়ারের দামে কতটা পড়ে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy