আমজনতার পকেটে জ্বালা ধরিয়ে সদ্য বেড়েছে রান্নার গ্যাসের দাম। গোটা দেশের রাতের ঘুম ওড়ানোর বন্দোবস্ত আরও পাকা করে এ বার প্রকাশ পেল আরও দুই সরকারি পরিসংখ্যান। এক, ফের কমেছে শিল্পোৎপাদন, ০.৩%। দুই, জানুয়ারিতে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছরে সব থেকে বেশি, ৭.৫৯%। আর যে দিন এই সব হিসেব দেখে ফের কাঁপুনি ধরল অর্থনীতির, সে দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফের সেই অর্থনীতি নিয়েই স্বপ্ন দেখালেন দেশবাসীকে। আবার তার বহরকে ৫ লক্ষ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ফেরি করলেন। সেই সঙ্গে বিরোধী শিবিরের সমালোচনার জবাবে ছুড়ে দিলেন কটাক্ষ, ‘‘৩ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি হতে এ দেশের কেন ৭০ বছর লেগে গেল?’’ যা শুনে পাল্টা কটাক্ষ সংশ্লিষ্ট মহলের, মোদীর স্বপ্ন আর বাস্তবে অর্থনীতির পরিসংখ্যান উল্টো পথে চলছে কী করে? কেনই বা বর্তমানে দাঁড়িয়ে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর স্পষ্ট দিশা ও সময় দেখানোর বদলে, তার ভবিষ্যৎ চেনাতে উঠেপড়ে লেগেছেন তিনি!
মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, অর্থনীতির ঝিমুনি কাটার সাতটি লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। যার মধ্যে একটি টানা কয়েক মাস ধরে শিল্পোৎপাদন কমার পরে নভেম্বরে সামান্য হলেও তার বাড়ার পরিসংখ্যান। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই তাঁর বার্তা প্রশ্নের মুখে। আবার পিছলেছে ঘুরে দাঁড়ানোর সেই লক্ষণ। নির্মলার জবানিতে চাঙ্গা হওয়ার চতুর্থ লক্ষণ, শিল্পে উৎপাদনের ইঙ্গিতবাহী বেসরকারি সূচকের শিল্প বৃদ্ধির ইঙ্গিতও ঠেকেছে অর্থহীন। আশঙ্কা স্পষ্ট এনএসও-র মূল্যবৃদ্ধির হিসেবেও। যে হারে রাশ টানা না-গেলে সুদ কমানোর দাওয়াই প্রয়োগ করা যাবে না লগ্নি টেনে বাজারে চাহিদা বাড়ানোর জন্য।
প্রধানমন্ত্রী অবশ্য এ সবের ধারকাছ দিয়ে যাননি। শিল্পের কর্মকাণ্ড ফিকে হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে যখন কল-কারখানায় উৎপাদন ফের কমেছে, তখন এক টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে মোদী তুলে ধরেছেন তাঁরা কী ভাবে অর্থনীতির শ্রীবৃদ্ধির চেষ্টায় পরিকাঠামোয় লগ্নি করছেন। কী ভাবে সুরাহা হচ্ছে গরিব মানুষের। কেন দেশে মোবাইল তৈরিতে জোর দিচ্ছে সরকার। কী কারণেই বা তাঁরা দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শহরে, স্টার্ট-আপ সংস্থার বেড়ে ওঠাকে পাখির চোখ করছেন। এ দিন কর্মসংস্থান প্রসঙ্গকে অবশ্য পাশ কাটিয়ে গিয়েছেন মোদী। উল্টে সকলকে অবাক করে তাঁর দাবি, আজকের প্রজন্ম কাজ নয়, কাজের সুযোগ তৈরি করে দিতে চায়।
আকাশছোঁয়া খাদ্যপণ্যের দামে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে, স্পষ্ট পরিসংখ্যানে। তাতেই মূল্যবৃদ্ধি বেলাগাম। চাকরি অনিশ্চিত। সঞ্চয় কমছে। এই অবস্থায় অর্থনীতির ছবিটা যে সুবিধের নয়, তা এ দিন কিছুটা মেনেছেন মোদীও। তবে একই সঙ্গে তাঁর বার্তা, ভারতের অর্থনীতি বারবার উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। ওঠা-পড়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রতিবার সে ফের ফিরে এসেছে। এ বারও ফিরছে তেমন ভাবেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy