প্রতীকী ছবি।
এ বছর প্রখর গ্রীষ্ম দেখছে সারা দেশ। বহু জায়গায় রেকর্ড ভেঙেছে তাপমাত্রা। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে তা অর্থনীতিকে আরও বেহাল করবে বলে জানাল মুডি’জ়। মূল্যায়ন সংস্থাটির মতে, মূল্যবৃদ্ধির জেরে নাজেহাল মানুষ। গরমে ফলন আরও কমলে তা বেশি করে ধাক্কা দেবে উৎপাদনে। যার জের পড়তে পারে জিনিসের দামে। এমনিতেই মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলা করতে সম্প্রতি সুদ বাড়িয়েছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। সোমবার গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের ইঙ্গিত, জুনে তা আরও এক দফা বাড়তে পারে। ফলে সব মিলিয়ে অর্থনীতি নিয়ে চিন্তা থাকছেই। ঠিক এই কথা জানিয়ে গত জানুয়ারি-মার্চে ভারতের বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫.৪% থেকে কমিয়ে ৩.৫% করেছে আর এক মূল্যায়ন সংস্থা ইক্রাও। আগামী সপ্তাহে সরকারি ভাবে সেই পরিসংখ্যান প্রকাশ হওয়ার কথা।
মুডি’জ বলছে, প্রতি বছরই দেশে মে-জুনে তাপপ্রবাহ দেখা গেলেও এ বার চলতি মাসে পাঁচ বার সেই অবস্থা তৈরি হয়েছে। দিল্লিতে তাপমাত্রা ছুঁয়েছে ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যার জেরে দেশের উত্তর-পশ্চিমে তীব্র গরমে গম উৎপাদন ধাক্কা খেতে পারে। তা ছাড়া কয়লার অভাবে তৈরি হওয়া বিদ্যুৎ সঙ্কটের জেরে শিল্প ও কৃষি উৎপাদন ধাক্কা খেতে পারে বলেও সতর্ক করেছে রেটিং সংস্থাটি। বলেছে, এতে অর্থনীতির গতি আটকাতে পারে। এমনকি কেন্দ্র গম রফতানিতে কড়াকড়ির নির্দেশ দেওয়ায় দেশে জোগান বাড়লেও, তা উল্টে রফতানি শিল্পে প্রভাব ফেলতে পারে, যা বৃদ্ধির চাকাকে রুদ্ধ করতে পারে।
মুডি’জ় বলছে
• চড়া গরমে কমবে কৃষি, বিশেষত গমের উৎপাদন।
• তার সঙ্গে কয়লা সঙ্কটে ধাক্কা খাবে শিল্পোৎপাদনও।
• সব মিলিয়ে বিরূপ প্রভাব পড়বে আর্থিক বৃদ্ধির উপরে।
ইক্রার পূর্বাভাস
• জানুয়ারি-মার্চে জিডিপি বাড়তে পারে ৩.৫%।
• এর আগে পূর্বাভাস ছিল ৫.৪%।
• তেলে শুল্ক কমানো স্বস্তি দেবে মানুষকে।
• জুনে ৪০ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়াতে পারে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক।
‘‘বিশ্ব অর্থনীতি শ্লথ হওয়ার প্রভাব ভারতে পড়ছে। পুঁজি বেরোচ্ছে দেশ থেকে। এখন বিশ্বের পরিস্থিতি ভারতের বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক নয়।’’—গীতা গোপীনাথ, আইএমএফের ফার্স্ট ডেপুটি এমডি
‘‘সুদ যে বাড়বে, বলাই বাহুল্য। কিন্তু তা কতটা হবে, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়।’’ —শক্তিকান্ত দাস, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর
সোমবারই দাভোসে আইএমএফের ফার্স্ট ডেপুটি এমডি গীতা গোপিনাথ বলেছেন, করোনার আগের জায়গায় ভারতের অর্থনীতি ফিরতে শুরু করেছিল, বিভিন্ন আর্থিক পরিসংখ্যানও আশা জাগাচ্ছিল। কিন্তু তাতে ধাক্কা দিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, কয়লা সঙ্কট ইত্যাদি। ইক্রার মুখ্য অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ারেরও মতে, জানুয়ারি-মার্চে ওমিক্রন রুখতে নেওয়া ব্যবস্থা এবং যুদ্ধের জেরে মূল্যবৃদ্ধি মাথা তুলেছিল, তার পরে গরমে কৃষি উৎপাদন ধাক্কা খেয়েছে। ফলে চতুর্থ ত্রৈমাসিকে কৃষি এবং শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ১ শতাংশেরও কম। পরিষেবায় প্রায় ৫.৪%। এই অবস্থায় গত সপ্তাহে পেট্রল-ডিজ়েলে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত মূল্যবৃদ্ধি থেকে মানুষকে কিছুটা সুরাহা দেবে। ইক্রার পূর্বাভাস, জুনের ঋণনীতিতেও ৪০ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়াতে পারে শীর্ষ ব্যাঙ্ক।
সুদ যে বাড়বেই, তা আজ মেনেছেন শক্তিকান্তও। তবে কত হারে তা বাড়ানো হবে, সেটা বলেননি। গভর্নরের কথায়, ‘‘গত ক’মাসে পণ্যের দামে রাশ টানতে আরবিআই এবং কেন্দ্র যৌথ ভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে। ...রাশিয়া, ব্রাজ়িল বাদে প্রায় সব দেশেই সুদের হার শূন্যের নীচে। উন্নত দেশে মূল্যবৃদ্ধির লক্ষ্য ২% হলেও, জাপান ও অন্য একটি দেশ ছাড়া তা ৭% ছুঁয়েছে অধিকাংশ দেশে। ...ভারতে খুব শীঘ্রই প্রকৃত সুদ শূন্যের উপরে উঠবে। কিন্তু তা কবে হবে সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়।’’ শহরে চাহিদা ফেরা, শিল্পে গতি এবং এ বছর কৃষিতে ভাল ফলনের আশা অর্থনীতিকে এগোতে সাহায্য করবে বলে ধারণা তাঁর। পাশাপাশি চড়া মূল্যবৃদ্ধি, কাঁচামালের অভাব এবং বিভিন্ন দেশে সুদ বৃদ্ধি নিয়েও সতর্ক করেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy