কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ফাইল চিত্র।
এর আগে কেন্দ্রীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কখনও লক্ষ কোটির ঘরে পৌঁছয়নি বলে শিক্ষা শিবিরের খবর। সেই জায়গায় এ বারের বাজেটে শিক্ষায় ১.১২ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করাটা গাণিতিক বিচারে ‘রেকর্ড’-ই। কিন্তু এই বাজেটে শিক্ষার প্রতিটি ক্ষেত্রকে সমান গুরুত্ব না-দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। ‘সমগ্র শিক্ষা মিশন’, ‘পিএম পোষণ’ বা প্রধানমন্ত্রী পোষণের মতো প্রকল্পে বরাদ্দ বেড়েছে নামমাত্র। ফলে স্কুল স্তর থেকে উচ্চশিক্ষা— প্রতিটি ক্ষেত্রের উন্নতি নিয়ে সংশয় পোষণ করছে শিক্ষা শিবির। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু পরিষ্কার জানাচ্ছেন, এ বারেও শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের ঘোষণা, শিশু, কিশোরদের জন্য জাতীয় ডিজিটাল গ্রন্থাগার তৈরি হবে। পঞ্চায়েত, পুর ওয়ার্ড স্তরে গ্রন্থাগার তৈরিতে উৎসাহিত করা হবে রাজ্যকে। শৈশব থেকে আর্থিক সাক্ষরতা বুঝতে বই রাখা হবে গ্রন্থাগারে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে প্রযুক্তি-নির্ভর করা হবে। জনজাতি পড়ুয়াদের জন্য তৈরি ৭৪০টি একলব্য মডেল আবাসিক স্কুলে আগামী তিন বছরে ৩৮,৮০০ জন শিক্ষক ও সহায়ক কর্মী নিয়োগ করা হবে। কৃত্রিম মেধা ব্যবহার করে দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গড়া হবে তিনটি কেন্দ্র। ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০০টি পরীক্ষাগার তৈরি হবে ৫জি পরিষেবায়। গবেষণাগারে হিরে তৈরির জন্য পাঁচ বছর টাকা পাবে একটি আইআইটি।
কিন্তু বরাদ্দের রেকর্ড বা নির্মলার ঘোষণা শিক্ষা শিবিরের চিন্তা কমাতে পারছে না। ব্রাত্যের বক্তব্য, দেশ নির্মাণের সব চেয়ে প্রয়োজনীয় খাতে গত কয়েক বছরের থেকে আসলে বরাদ্দ কমিয়েছে এই সরকার। কোভিড মহামারি শিক্ষার ক্ষেত্রে বেশ কিছু অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করলেও এই বাজেটে সে-দিকে কোনও নজর দেওয়া হয়নি। ‘‘আসলে পড়াশুনো শিখলে প্রাচীন ভারতের প্লাস্টিক সার্জারি বা আণবিক অস্ত্রের গল্প বিশ্বাস করানো শক্ত হবে। তাই এ বারেও শিক্ষা খাতে ব্যয়বরাদ্দ বৃদ্ধি হয়নি,’’ বলেন ব্রাত্য।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপিকা মহালয়া চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আগে জাতীয় আয়ের তিন শতাংশের বেশি বরাদ্দ হয়নি। আপাতত তা ২.৮ শতাংশ। উচ্চশিক্ষা ও স্কুলশিক্ষায় সামান্য কয়েকশো কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ালে খুব একটা অভিঘাত হবে বলে মনে হয় না।’’ সারা ভারত সেভ এডুকেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক তরুণকান্তি নস্করের অভিযোগ, শিক্ষা খাতে বৃদ্ধির দাবি বিভ্রান্তিকর। জাতীয় শিক্ষানীতি গ্রহণের আগে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ৯৯,৩০০ কোটি টাকা। এ বছর হয়েছে ১,১২,৯০০ কোটি। গড় বার্ষিক বৃদ্ধি মাত্র ৩৪০০ কোটি টাকা। তরুণকান্তি বলেন, ‘‘এর ফলে স্কুলশিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা— সবই অর্থসঙ্কটে ভুগবে।’’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (জুটা) সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘এক দিকে খাতায়-কলমে উচ্চশিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ছে, অন্য দিকে রাজ্যের অধীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ নেই বললেই চলে। টাকা যাচ্ছে কোথায়?’’ পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলে, ‘‘যে-বৃদ্ধি হচ্ছে, তাতে শিক্ষার সব দিকের মানোন্নয়ন সম্ভব নয়।’’ নিখিল বঙ্গ শিক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেন, ‘‘কোঠারি কমিশন ও খের কমিটির সুপারিশ ছিল শিক্ষা খাতে কেন্দ্রীয় বাজেটের ১০% ব্যয় করতে হবে। কিন্তু এই ব্যয়বরাদ্দ ক্রমাগত কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’
ছাত্র সংগঠন ডিএসও-র রাজ্য সম্পাদক মণিশঙ্কর পট্টনায়ক বলেন, ‘‘এই বাজেটে ছাত্রসমাজের কোনও উপকার হবে না।’’ এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাসের বক্তব্য, এর ফলে প্রান্তিক পরিবারের পড়ুয়াদের কাছে শিক্ষা হয়ে যাবে সোনার পাথরবাটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy