প্রতীকী চিত্র।
দেশে বেসরকারি লগ্নিতে ভাটার টানের কথা আর্থিক সমীক্ষাতেই মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। ভারতে নতুন করে পুঁজি ঢালার ক্ষেত্রে শিল্প মহলের অনাস্থা অন্তত এই মুহূর্তে কতটা গভীর, তা এ বার ফুটে উঠল উপদেষ্টা সংস্থা আইএইচএস মার্কিটের সমীক্ষায়। যেখানে স্পষ্ট, লাভজনক ভাবে উৎপাদন বাড়ানো কিংবা তার জন্য নতুন করে পুঁজি ঢালার ক্ষেত্রে এই দেশের প্রতি শিল্পের আস্থা কার্যত তলানিতে ঠেকেছে। উদ্ভাবনী পণ্য আনতে জরুরি গবেষণার মতো বিষয়েও ভারতকে পিছনে ফেলছে বহু উন্নয়নশীল দেশ।
ফলে প্রশ্ন উঠছে, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প প্রচারের সময়ে যেখানে ভারতকে লগ্নির সব থেকে আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে মোদী সরকার, সেখানে টাকা ঢালার ক্ষেত্রে শিল্পের আস্থায় এমন টান কেন? অনেকের আবার অভিযোগ, এই সব কিছুর পরেও ভারত দ্রুততম বৃদ্ধির দেশের তকমা ধরে রাখতে পারছে মূলত আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য-যুদ্ধের মাসুল গুনে চিনের বৃদ্ধি ঢিমে হয়ে যাওয়ার কারণে।
পরিসংখ্যানও বলছে, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে চিনের বৃদ্ধি নেমেছে গত ২৭ বছরের মধ্যে সব থেকে নীচে। আগামী দিনে আশঙ্কা ৬ শতাংশের কাছে নামার। আইএইচএস মার্কিটের সমীক্ষাও বলছে, নতুন করে টাকা ঢালায় শিল্প মহলের আস্থার ক্ষেত্রে মাত্র যে দু’টি দেশ ভারতের পিছনে, তার একটি চিন। অবশ্যই বিশ্বের সব দেশের তথ্য বা ছবি এই সমীক্ষায় ফুটে ওঠেনি। কিন্তু বৃদ্ধির হার এবং লগ্নিতে আস্থা— দু’টি বিষয়েই চিনের পিছিয়ে থাকা থেকে স্পষ্ট যে, বেজিংকে টেক্কা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে তারা বিপাকে পড়ার কারণেও।
ভারতে আস্থায় টান
এ দেশে লাভজনক ভাবে ব্যবসার বহর বাড়ানোর বিষয়ে আস্থা আরও টোল খেয়েছে শিল্পমহলের। জুনে ওই সূচক নেমে গিয়েছে ২০১৬ সালের পরে সব চেয়ে নীচে (১৫%)। অদূর ভবিষ্যতে নতুন করে পুঁজি ঢেলে মুনাফা বৃদ্ধির রাস্তা খুলবে, এই আস্থা কার্যত তলানিতে। এ বিষয়ে পিছনে শুধু চিন ও ব্রিটেন। গবেষণা ও পণ্যের মান উন্নয়নের মতো বিষয়ে টাকা ঢালার ক্ষেত্রে আস্থার বিষয়েও উন্নয়নশীল দেশগুলির গড়ের তুলনায় পিছিয়ে ভারত। বৃদ্ধির ঢিমে গতি, দেশের বিভিন্ন জায়গায় জলসঙ্কট, খামখেয়ালি বৃষ্টি, বাজেটে অর্থনীতিকে ফের চাঙ্গা করার মতো দাওয়াইয়ের অভাব— আস্থায় টান মূলত এই সমস্ত কারণে।
চিনের বৃদ্ধি ধাক্কা খাওয়ার মূল কারণ যদি আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক-দ্বৈরথ হয়, তবে ভারতে শিল্পের আস্থা হোঁচট খাওয়ার জন্য দায়ী একাধিক বিষয়। তার মধ্যে ঝিমিয়ে পড়া বৃদ্ধি বা দেশের বিভিন্ন জায়গায় জল সঙ্কট তো আছেই, রয়েছে দেরিতে আসা খামখেয়ালি বৃষ্টিও।
সমস্যায় জড়িয়ে চিনও
চলতি বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন) চিনের বৃদ্ধির হার (৬.২%) অন্তত গত ২৭ বছরের মধ্যে সব থেকে কম। প্রথম ত্রৈমাসিকেও (জানুয়ারি-মার্চ) তা (৬.৪%) ছিল ৭ শতাংশের অনেকখানি নীচে। জুনে শিল্প বৃদ্ধির হার এবং খুচরো বিক্রি সামান্য মুখ তুললেও, এখনও বেশ মলিন অর্থনীতির ছবি। আমেরিকার সঙ্গে টানা চলতে থাকা শুল্ক-যুদ্ধের সমস্যা গভীর ছায়া ফেলছে চিনের অর্থনীতিতে। আগামী দিনে বৃদ্ধির হার এমনকি ৬-৬.১ শতাংশে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা। বাধ্য হয়ে ফের বিপুল অঙ্কের ত্রাণ প্রকল্পের কথা পর্যন্ত ভাবতে হচ্ছে বেজিংয়ে।
ভারতের মতো কৃষিপ্রধান দেশে এখনও অন্তত ৫৫% জমিতে চাষ শুধুমাত্র বৃষ্টির উপরে নির্ভরশীল। অথচ এ বার বর্ষা এসেছে দেরিতে। আশঙ্কা, প্রয়োজনের তুলনায় কম মিলবে চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জল। এই পরিস্থিতিতে বৃষ্টি সত্যিই শেষ পর্যন্ত পর্যাপ্ত এবং কার্যকরী না হলে, চাষ মার খাবে। তাতে কৃষিপণ্যের দাম তো বাড়বেই, সেই সঙ্গে চাহিদাও ধাক্কা খাবে গ্রামীণ এলাকায়। ইতিমধ্যেই সরকারি পরিসংখ্যান থেকে শুরু করে প্রায় সর্বত্র বলা হচ্ছে যে, দেশে চাহিদায় ভাটা আঁচ করেই নতুন করে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসছেন না লগ্নিকারীরা। এই পরিস্থিতিতে ফের চাহিদা ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা তাই প্রত্যাশিত ভাবেই থাবা বসিয়েছে আস্থায়।
শিল্পের আশা ছিল, অর্থনীতির ইঞ্জিনে গতি ফেরাতে বাজেটে বড়সড় ঘোষণা করবে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। সেই লক্ষ্যে খুচরো কিছু সুবিধা নিশ্চয়ই মিলেছে। কিন্তু শিল্পের সমস্যা ঘুচিয়ে অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরাতে সঞ্জীবনী ওষুধের দেখা মেলেনি। সমীক্ষা অনুযায়ী, শিল্পমহলের আস্থা সূচকে টোল ফেলেছে এই বিষয়টিও।
সঙ্গে যোগ হয়েছে টাকার সাপেক্ষে ডলারের দর বাড়ায় পণ্য (বিশেষত কাঁচামাল) আমদানির খরচ বৃদ্ধি, দক্ষ কর্মীর ঘাটতি, বিভিন্ন পণ্যের দামে গলাকাটা প্রতিযোগিতার মতো আশঙ্কা। মূলত এই সব কারণে ফেব্রুয়ারিতে যেখানে ১৮% সংস্থা নিজেদের উৎপাদন বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল, সেখানে জুনে তা নেমে গিয়েছে ১৫ শতাংশে। এই অনাস্থা মুছে লগ্নি ফেরানোই এখন মোদী সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy