আগামী বছরের এপ্রিল থেকে পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) চালুর সম্ভাবনা কার্যত শেষ।
নোট বাতিলের জেরে কেন্দ্রের সঙ্গে বিরোধীদের তিক্ততা বেড়েছে। এ বার তারই ধাক্কা এসে লাগল পণ্য-পরিষেবা কর নিয়ে বৈঠকে। রাজনৈতিক সংঘাতের আবহে জিএসটি নিয়ে ঐকমত্য তৈরি করতে পারল না মোদী সরকার।
রবিবার জিএসটি পরিষদে কেন্দ্র ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে কোনও বিতর্কিত বিষয় নিয়েই সন্ধি হয়নি। জিএসটি আইনের খসড়া অনুমোদনের জন্য রবি ও সোমবার, দু’দিনের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। কিন্তু এ দিন তিন ঘণ্টা আলোচনা পরেই বৈঠক শেষ হয়ে যায়। অধিকাংশ রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা দাবি তোলেন, সোমবার ইদ-ই-মিলাদ-উন-নবির জন্য তাঁরা নিজেদের রাজ্যে বা বিধানসভা কেন্দ্রে থাকতে চান। ফলে একদিনেই বৈঠকের ইতি টানতে হয় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে। ঠিক হয়, ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর ফের বৈঠক হবে। কিন্তু তার আগেই সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শেষ হচ্ছে। যার অর্থ, সংসদের বাজেট অধিবেশনের আগে কেন্দ্রীয় জিএসটি, আন্তঃরাজ্য জিএসটি ও ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত বিলগুলি পাশ করানো যাবে না। রাজ্য জিএসটি বিল পাশ করাতে হবে বিধানসভায়। পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বৈঠক শেষে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘করদাতাদের উপর কেন্দ্র-রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। এই বৈঠকে তা নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি।’’
বাজেট অধিবেশনে যাবতীয় বিল পাশ করিয়ে এপ্রিল থেকে জিএসটি চালু করা যাবে, জেটলি এমন কোনও আশ্বাসও দিতে পারেননি। শুধু যুক্তি দিয়েছেন, এ বার বাজেট অধিবেশন জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে। কিন্তু কেরলের বাম অর্থমন্ত্রী আইজ্যাক টমাস, তামিলনাড়ুর অর্থমন্ত্রী সি পোন্নাইয়ানরার সাফ কথা, ১ এপ্রিল থেকে জিএসটি চালুর কোনও সম্ভাবনা নেই। জিএসটি চালু হতে সেপ্টেম্বর গড়িয়ে যাবে।
বৈঠকের এই পরিণতি দেখে স্বভাবতই ক্ষুদ্ধ শিল্পমহল। তাঁদের যুক্তি, কেন্দ্র জিএসটি নিয়ে নিজের পায়ে কুড়ুল মারল। ফের অনিশ্চয়তা তৈরি হল। এখন সরকারের উচিত, রাখঢাক না-করে এপ্রিলের পরে হলেও, জিএসটি চালুর নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা।
নোট বাতিলের ধাক্কাই যে জিএসটি-তে লাগল, তা নিয়ে রাখঢাক করছেন না রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা। সকলের আগে অমিত মিত্র প্রশ্ন তুলেছিলেন, এমনিতেই নোট-কাণ্ডের পরে অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। রাজ্যগুলির রাজস্ব আয়, আর্থিক বৃদ্ধি ধাক্কা খাচ্ছে। এর পরে জিএসটি চালু করে অর্থনীতিতে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি করা কতখানি উচিত হবে, সেই প্রশ্নই তোলেন তিনি। তাঁকে সমর্থন করেন থমাসও। উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যও এ বিষয়ে একমত ছিল। আজ বৈঠক শেষে টমাস বলেন, ‘‘নোট বাতিলের ঘটনায় কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। মোদী সরকারের একতরফা সিদ্ধান্তে কেরলের সমবায় ব্যাঙ্কগুলি ভেঙে পড়েছে। তারপরে ওঁরা কী করে আশা করেন, আমি দিল্লি এসে জিএসটি-তে হাত মেলাব!’’
রাজস্ব দফতরের কর্তারা এখনও দাবি করছেন, ২২-২৩ ডিসেম্বর বৈঠকে ঐকমত্য তৈরি হলে এপ্রিলে জিএসটি চালু হতে পারে। কিন্তু তামিলনাড়ুর অর্থমন্ত্রীর দাবি, ওই বৈঠকেও আলোচনা শেষ হবে না। বিলের খুঁটিনাটির পরে করদাতাদের উপর কেন্দ্র-রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ঐকমত্য গড়তে হবে।
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ-সহ অধিকাংশ রাজ্যের দাবি, যে-সব ছোট ব্যবসায়ীর বছরে ব্যবসা দেড় কোটি টাকার কম, তাঁরা শুধুমাত্র রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে থাকবেন। দেড় কোটির উপরে কেন্দ্র ও রাজ্য, উভয়ের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। কেন্দ্র এই প্রস্তাব মেনেছে, কিন্তু শুধুই পণ্যের ক্ষেত্রে। পরিষেবা করের ক্ষেত্রে নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy