Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫
Economy

বৃদ্ধি তলিয়ে গেল সাত বছরের নীচে

কেন্দ্রের আর্থিক বিষয়ক সচিব অতনু চক্রবর্তীর অবশ্য যুক্তি, ‘‘অর্থনীতির হাল আর খারাপ হবে না। এ বার তার ঘুরে দাঁড়ানোর পালা।’’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:০৫
Share: Save:

কল-কারখানার উৎপাদন কমছে তো কমছেই। আর মূলত তার ধাক্কায় দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর, এই তিন মাসে আটকে থাকল ৪.৭ শতাংশে। গত প্রায় সাত বছরে বৃদ্ধি এত তলানিতে নামেনি।

অর্থনীতির ঝিমুনি নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিলই। এই অবস্থায় নরেন্দ্র মোদী সরকারের জন্য জোড়া উদ্বেগ, কল-কারখানার উৎপাদন কিছুতেই চাঙ্গা না-হওয়া ও আরও ফিকে হওয়া লগ্নির ছবি। পরিসংখ্যানে স্পষ্ট, কারখানায় উৎপাদন চাঙ্গা হওয়া দূর অস্ত‌্, ক্রমশ কমছে। জুলাই-সেপ্টেম্বরে তা কমেছিল ০.৪%। অক্টোবর-ডিসেম্বরে ০.২%। যেখানে ২০১৮-১৯ সালের ওই তিন মাসে বেড়েছিল ৫.৬%। শেষবার এত কম বৃদ্ধির হার দেখা গিয়েছে ২০১২-১৩ অর্থবর্ষের জানুয়ারি-মার্চে। তখন বৃদ্ধি থমকেছিল ৪.৩ শতাংশে। অন্য দিকে, অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে আরও প্রকট হওয়া লগ্নির সঙ্কটও। নতুন যন্ত্রাংশ বা মূলধন তৈরিতে বিনিয়োগ গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবর্ষে কম থাকবে বলেই অনুমান।

কেন্দ্রের আর্থিক বিষয়ক সচিব অতনু চক্রবর্তীর অবশ্য যুক্তি, ‘‘অর্থনীতির হাল আর খারাপ হবে না। এ বার তার ঘুরে দাঁড়ানোর পালা।’’ আর তাঁর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘নৌকাটা যদি শক্তপোক্ত থাকে এবং এগিয়ে চলে, তা হলে আমার মনে হয় ভাল হওয়ার প্রথম লক্ষণ এটা।’’ তাঁর দাবি, কঠিন পরিস্থিতিতেও অর্থনীতি ভাল করছে। এটা আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি জোগাবে।

আজ সরকারি তথ্য জানিয়েছে, আটটি প্রধান পরিকাঠামো ক্ষেত্রের উৎপাদন জানুয়ারিতে ২.২% বেড়েছে। ডিসেম্বরের ২.১ শতাংশের তুলনায় সামান্য হলেও উন্নতি। তা দেখিয়েই অতনুবাবুর দাবি, পরিকাঠামো ক্ষেত্রে উৎপাদনে উন্নতি হওয়ার অর্থ, ভবিষ্যতে কারখানার উৎপাদনও বাড়বে। তাঁর যুক্তি, কৃষি, পরিষেবা ক্ষেত্রে উন্নতি দেখা যাচ্ছে। তার সঙ্গে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে ভবিষ্যতে বৃদ্ধির হার বাড়বে।

আর্থিক বিশেষজ্ঞরা অবশ্য সে কথা মানছেন না। তাঁদের দাবি, আরও খারাপ সময় আসা বাকি। কারণ করোনাভাইরাসের ফলে দুনিয়া জুড়ে আর্থিক কর্মকাণ্ড ধাক্কা খাচ্ছে। ফলে ভারতের অর্থনীতিতেও সেই ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের প্রধান অর্থনীতিবিদ অভীক বড়ুয়ার মতে, ‘‘অক্টোবর-ডিসেম্বরে ৪.৭% বৃদ্ধি আশা অনুযায়ীই হয়েছে। কিন্তু করোনার প্রভাব অর্থবর্ষের শেষ তিন মাস, জানুয়ারি-মার্চে দেখা যাবে। কেন্দ্রীয় খরচেও রাশ টানা হয়েছে। তারও প্রভাব দেখা যাবে। ফলে শেষ তিন মাসের বৃদ্ধির হার হতাশ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে চলতি বছরের বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের নিচেই থেমে যাবে।’’

করোনার জেরে এক দিকে ভারত থেকে চিনে রফতানি ধাক্কা খাচ্ছে। আবার চিন থেকে আসা কাঁচামালের জোগানেও সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে অতুনবাবুর দাবি, এখনও এর ধাক্কা আসেনি। আর নির্মলার বার্তা, ‘‘করোনাভাইরাস নিয়ে অর্থনীতিতে কোনও আতঙ্কের কারণ নেই।’’ পরিস্থিতি সামলানোর পরিকল্পনাও সরকার তৈরি করে ফেলেছে।’’

চোখ রাঙাচ্ছে ঘাটতিও

চলতি অর্থবর্ষ শেষ হওয়ার দু’মাস আগেই রাজকোষ ঘাটতি ছাড়াল সারা বছরের লক্ষ্যমাত্রা। কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব অ্যাকাউন্টস জানিয়েছে, জানুয়ারির শেষেই ঘাটতি ছুঁয়েছে সারা বছরের লক্ষ্যমাত্রার ১২৮.৫%। যদিও গত অর্থবর্ষেও জানুয়ারি শেষে ঘাটতি সংশোধিত বাজেটে ধার্য সারা বছরের লক্ষ্যমাত্রার ১২১.৫% ছাড়িয়েছিল। চলতি অর্থবর্ষে ঘাটতির সংশোধিত লক্ষ্য ৩.৮%। তবে তা পূরণ নিয়েও সংশয়ী অনেকে।

আজ জাতীয় পরিসংখ্যান দফতর তৃতীয় ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার ৪.৭% ছুঁয়েছে জানানোর পরে প্রথমে অনেকেই মনে করেছিলেন, অন্তত জুলাই-সেপ্টেম্বরের তুলনায় অর্থনীতির যৎসামান্য হলেও উন্নতি হয়েছে। কারণ চলতি বছরের প্রথম তিন মাস, এপ্রিল থেকে জুনে বৃদ্ধি ছিল ৫ শতাংশ। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে তা ৪.৫ শতাংশে নামে। সেই তুলনায় ৪.৭ শতাংশ সামান্য হলেও উন্নতি। কিন্তু বাস্তবে পরিসংখ্যান দফতর আগের হিসেব সংশোধন করে জানিয়েছে, এপ্রিল থেকে জুনে বৃদ্ধির হার ৫% নয়, ৫.৬% ছিল। আর জুলাই-সেপ্টেম্বরের ৪.৫ শতাংশও আসলে ৫.১% হবে। সেই হিসেবে চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার ধাপে ধাপে ৫.৬ থেকে ৫.১, তারপর এ বার ৪.৭ শতাংশে নেমে এল।

অর্থ মন্ত্রক সূত্রের যুক্তি, আশার আলো হল, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভর করে পরিকাঠামোয় উৎপাদন বাড়ছে। এত দিন বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায় বোঝা যাচ্ছিল, অর্থনীতির ঝিমুনিতে বাজারে চাহিদা নেই বলে কলকারখানাতেও উৎপাদন কম হচ্ছে। ফলে বিদ্যুতের প্রয়োজনও কমছে। পরিসংখ্যান দফতর মনে করছে, এই অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার ৫% ছোঁবে। তা সত্যি হলেও, ২০১১-১২ সালের পরে বৃদ্ধি এই প্রথম এত তলানিতে নামবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Economic Growth GDP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy