Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

বর্তমান দর-নির্ভর জিডিপি এত কম! বৃদ্ধির হিসেবে চিন্তিত কেন্দ্রীয় কর্তারাই

অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের আশঙ্কা, এই নমিনাল জিডিপি ধাক্কা খাওয়ার মানে কর বাবদ আয় কমবে। তার উপরে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টায় কর্পোরেট কর কমানোর সিদ্ধান্তে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি বাড়তে পারে ১.৪৫ লক্ষ কোটি টাকা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:০৬
Share: Save:

মাথায় যেন বাজ পড়েছে অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের!

বাজেটের অঙ্ক কষার সময়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ধরে নিয়েছিলেন, চলতি অর্থবর্ষে বর্তমান বাজারদরের নিরিখে হিসেব করা জিডিপি ১১% হারে বাড়বে। কিন্তু অর্থবর্ষের ছ’মাস পেরোনোর পরে দেখা যাচ্ছে, ওই সময়ে তা বেড়েছে ৭% হারে। আর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সেই হার নেমে এসেছে ৬.১ শতাংশে। গত ১৭ বছরের মধ্যে যা সব চেয়ে কম।

অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের আশঙ্কা, এই নমিনাল জিডিপি ধাক্কা খাওয়ার মানে কর বাবদ আয় কমবে। তার উপরে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টায় কর্পোরেট কর কমানোর সিদ্ধান্তে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি বাড়তে পারে ১.৪৫ লক্ষ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে লাগামছাড়া হতে পারে রাজকোষ ঘাটতি। এমনিতেই এপ্রিল-অক্টোবরে তা সারা বছরের লক্ষ্যকে ছাপিয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রায় বেঁধে রাখতে খরচ ছাঁটাই করা ছাড়া উপায় থাকবে না কেন্দ্রের। কিন্তু বেসরকারি লগ্নি যেখানে মাথা তুলছে না, সেখানে আবার সরকারি ব্যয়ে কাঁটছাঁট করতে গিয়ে আরও ধাক্কা খেতে পারে চাহিদা। ফলে মাথায় হাত পড়েছে মন্ত্রকের কর্তাদের।

মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘কর বাবদ আয় কমে গিয়ে রাজকোষ ঘাটতি লাগামছাড়া হবে। যে ঘাটতি পূরণ করতে সরকারকে বাজার থেকে আরও ধার করতে হবে। এখন কেন্দ্র গড়ে প্রায় ৬.৫% সুদে ধার নেয়। অথচ বর্তমান বাজারদরে বৃদ্ধির হার তার থেকে কম হলে ঋণের বোঝা ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে। তখন খরচ ছাঁটাই ছাড়া উপায় থাকবে না।’’ পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সালে জিডিপিতে ঋণের অনুপাত ছিল ৬৬.৫৮%। যা ২০১৮ সালে বেড়ে হয়েছে ৬৮.৩%। আর এ বছর তা ৭০ শতাংশে পৌঁছতে পারে। উল্টো দিকে জিডিপিতে সরকারি খরচের অনুপাত ১৩.৩৭% থেকে কমে ১৩.০৬ শতাংশে নেমেছে।

রিয়েল জিডিপি কী

• আগে থেকে ঠিক করা ভিত্তিবর্ষের দামের ভিত্তিতে হিসেব করা দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন হল রিয়েল বা প্রকৃত জিডিপি।
• বর্তমানে ২০১১-১২ সাল হল সেই ভিত্তিবর্ষ।
• সাধারণত মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব বাদ দিয়ে প্রকৃত উৎপাদনের হদিস পেতেই এই হিসেব কষা হয়।
• পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশে জুলাই-সেপ্টেম্বরে রিয়েল জিডিপি দাঁড়িয়েছে ৪.৫%।

নমিনাল জিডিপি কী

• বর্তমান বাজারদরের নিরিখে দেশের মোট পণ্য উৎপাদন ও পরিষেবার পরিমাণই হচ্ছে নমিনাল জিডিপি।
• সমস্যা হল যে, উৎপাদন না-বেড়ে শুধু বাজারদর বাড়লেও নমিনাল জিডিপি বেড়ে যাতে পারে।
• কেন্দ্রের অনুমান ছিল, সারা বছরে নমিনাল জিডিপি দাঁড়াবে ১১%।
• হিসেব বলছে, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে তা হয়েছে ৬.১%। আর এপ্রিল-সেপ্টেম্বরে ৭%।

মাথাব্যথা

• সারা অর্থবর্ষের নমিনাল জিডিপির অনুমান ছুঁতে হলে আগামী ছ’মাসে ওই হার বাড়তে হবে ১৭% হারে। যা কার্যত অসম্ভব।
• নমিনাল জিডিপি কমার জেরে কমবে কর আদায়ও।
• কর সংগ্রহ কমলে মাত্রা ছাড়াতে পারে রাজকোষ ঘাটতি।
• ঘাটতিকে লক্ষ্যমাত্রায় বেঁধে রাখতে ছাঁটতে হতে পারে সরকারি খরচ।
• সরকারি ব্যয় কমালে চাহিদা বাড়ানো কঠিন হবে, বিশেষত বেসরকারি লগ্নি যখন ঝিমিয়ে।

আজ লোকসভায় ঘাটতি লাগামছাড়া হওয়া নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য নির্মলা বলেন, ‘‘আমরা ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ঘাটতি ৪ শতাংশর নীচে রেখেছি। চলতি অর্থবর্ষে তার লক্ষ্য বাঁধা হয়েছে ৩.৩ শতাংশে। সংশোধিত হিসেবনিকেশের সময় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

আরও পড়ুন: অর্থনীতি বেহালই, মত উপদেষ্টা সংস্থার

অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) আর্থিক বৃদ্ধি আটকে ছিল ৫ শতাংশে। জুলাই-সেপ্টেম্বরে তা ৪.৫ শতাংশে নেমেছে। কিন্তু এই বৃদ্ধি মাপা হয় ২০১১-১২ সালের বাজারদরের ভিত্তিতে। বর্তমান বাজারদরের নিরিখে সারা বছরে নমিনাল জিডিপির ১১% বৃদ্ধির লক্ষ্য ছুঁতে গেলে অর্থবর্ষের বাকি ছ’মাসে তার হার হতে হবে ১৭%। যা কার্যত অসম্ভব। এই পরিসংখ্যানই আরও চিন্তায় ফেলেছে নর্থ ব্লককে।

শুধু অর্থ মন্ত্রকের কর্তারাই নন। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের নতুন সদস্য, ক্রেডিট সুইসের অর্থনীতিবিদ নীলকণ্ঠ মিশ্রেরও মতে, এর জেরে কর আদায় কমবে। যা সামাল দিতে শুধু কেন্দ্র নয়, রাজ্যগুলিকেও খরচ ছাঁটাই করতে হবে। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, নমিনাল জিডিপি ধাক্কা খাওয়ার অর্থ, এত দিন যে ব্যবসায়িক প্রকল্প লাভজনক ছিল, তা আর থাকবে না। কী ভাবে? অর্থনীতিবিদদের ব্যাখ্যা, বর্তমান বাজারদরে বৃদ্ধির হার ৬.১% হওয়ার মানে শিল্পের আয়ও ৬% হারেই বাড়ছে। এখন কোনও সংস্থা যদি ৯% হারে ঋণ নিয়ে থাকে, তারা লাভ করবে কী করে? কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের কটাক্ষ, ‘‘শিল্পপতি রাহুল বজাজ না-হোক, অন্তত প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যের কথা শোনা হোক।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Finance Ministry Fiscal Deficit GDP Corporate Tax
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy