গত সপ্তাহে মুখ্য ঘটনা ছিল দু’টি। এক, আশার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ফের ২৫ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট (যে সুদে অন্যান্য ব্যাঙ্ককে ধার দেয় আরবিআই) ছাঁটাই। দুই, চিন বাদে ভারত-সহ অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে নতুন শুল্ক ৯০ দিন বাদে লাগু হবে বলে আমেরিকার সিদ্ধান্ত। বাজারের কাছে দু’টিই খুশির খবর। যার প্রখর তেজ দেখা যায় শুক্রবার লেনদেন শুরুর পরে। সেনসেক্স ১৩১৩ পয়েন্ট (১.৭৭%) বেড়ে থামে ৭৫,১৫৭ অঙ্কে। নিফ্টি লাফ দেয় ৪২৯ (১.৯২%)। সপ্তাহ শেষ করে ২২,৮২৯-এ।
টানা দু’দফায় ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে কমে রেপো নেমেছে ৬ শতাংশে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ইঙ্গিত, আগামী দিনে আরও কমতে পারে। চলতি অর্থবর্ষে মূল্যবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ৪%। আর্থিক বৃদ্ধি হতে পারে ৬.৫%। শুল্ক যুদ্ধের পরিণাম মাথায় রেখে বৃদ্ধির পূর্বাভাস আগের ৬.৭% থেকে কমানো হয়েছে।
আমেরিকার শুল্ক আদতে কি দাঁড়াবে, তা এখনই অনুমান করা যাচ্ছে না। চড়া শুল্ক নীতি ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুঝেছেন, এই নীতি বড় রকমের আঘাত হানতে পারে তাঁর নিজের দেশের অর্থনীতির উপরেই। মূল্যবৃদ্ধির বোঝা চাপতে পারে আমেরিকাবাসীর উপরে। প্রত্যাঘাত আসতে পারে চিন, কানাডা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ-সহ বিশ্বের বড় অংশের থেকে। ফলে আর্থিক মন্দার কবলে পড়ে যেতে পারে তাঁর দেশের অর্থনীতি। অন্য কথা বলা হলেও, মূলত এ জন্যই শুল্ক চালুতে ৯০ দিনের বিরতি এবং ল্যাপটপ, স্মার্টফোন সমেত প্রায় ২০টি বৈদ্যুতিন পণ্যকে পাল্টা শুল্ক থেকে বাদ রাখা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আমেরিকার শুল্কনীতির জেরে হওয়া পতন কাটিয়ে সূচকগুলি ফের ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তবে এই নীতি অস্পষ্ট। ফলে অনিশ্চয়তা বহাল থাকবে। যার জেরে ক্রমশ উঠছে সোনার দাম। কমছে অশোধিত তেলের দর। পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রেখে ভারতকে দ্রুত অর্থনীতিকে গুছিয়ে নিতে হবে।
অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে শুল্ক যুদ্ধে বিরতি ঘোষণা করা হলেও, তা জারি আছে আমেরিকা এবং চিনের মধ্যে। এ যেন রাজায় রাজায় যুদ্ধ। প্রায় রোজ নতুন শুল্ক শেল হানছে দুই প্রতিপক্ষ। বিভিন্ন দেশে এর ফল কি হতে পারে তা নিয়ে জোর অঙ্ক কষা চলছে।
আরবিআইয়ের রেপো রেট কমায় বিভিন্ন ব্যাঙ্ক এরই মধ্যে কমাতে শুরু করেছে ঋণে সুদের হার। এতে উপকৃত হবেন ধারে বাড়ি, গাড়ি কেনা মানুষেরা। উপকৃত হবে ওই দুই শিল্প-সহ অন্য কিছু শিল্প। পাশাপাশি সুদ কমছে ব্যাঙ্ক জমাতেও। এইচডিএফসি, বন্ধন ও ইয়েস ব্যাঙ্ক কিছু মেয়াদে সুদ ছেঁটেছে। স্টেট ব্যাঙ্ক উঁচু সুদের একটি আমানত বন্ধ করেছে। জমা প্রকল্পে সুদ কমিয়েছে কিছু আর্থিক সংস্থাও। ব্যাঙ্কে সুদ কমলে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প ও ভারত সরকারের ফ্লোটিং রেট বন্ডেও (পরিবর্তনশীল সুদ সম্বলিত ঋণপত্র) তা ছাঁটা হতে পারে। এই আবহে প্রমাদ গুনছেন সুদ নির্ভর মানুষ, বিশেষত প্রবীণ নাগরিকেরা। তাঁদের সকলের আয় কমবে। ব্যাঙ্ক সুদ কমায় পড়ছে বন্ড ইল্ডও। ফলে খোলা বাজারে বাড়ছে বন্ডের দাম। বাড়ছে বন্ড ফান্ডের ন্যাভ। গত সপ্তাহে ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের ইল্ড নেমেছে ৬.৪৪ শতাংশে।
এ দিকে, শুরু হয়েছে গত অর্থবর্ষ ও জানুয়ারি-মার্চের আর্থিক ফল প্রকাশের পালা। টিসিএসের লাভ তিন মাসে ১.৬৮% কমলেও, মোট আয় ৫.৩% বেড়েছে। গোটা বছরে মোট আয় ও নিট লাভ যথাক্রমে ২.৫৫ লক্ষ কোটি ও ৪৮,৫৫৩ কোটি টাকা। সংস্থার আয়ের সিংহভাগ আমেরিকা থেকে আসে বলে তার শেয়ার দর নেমেছে। এখন প্রতিদিনই আসবে বিভিন্ন সংস্থার ফল, যার প্রভাব থাকবে সংশ্লিষ্ট শেয়ারে। এর কিছুটা প্রতিফলন দেখা যাবে গোটা বাজারেও। মঙ্গলবার জানা যাবে মার্চে মূল্যবৃদ্ধির হার কতটা ছিল। বাজারে এর ছাপও পড়তে পারে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)