—ফাইল চিত্র।
লকডাউনে কাজ বন্ধ থাকা, আমপান ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি— একের পর কারণে উৎপাদন ধাক্কা খাওয়ায় দাম বেড়েছে কাঁচা পাটের। তৈরি হচ্ছে বেআইনি মজুতের আশঙ্কা। জোগানে টান পড়ায় বিপাকে পড়ছে রাজ্যের চটকলগুলি। যে কারণে ১৫০০ কুইন্টালের বেশি পাট মজুত করে রাখা যাবে না বলে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। ঠিক তখনই কপাল ফিরেছে পাট চাষিদের। সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যে দাম দেখা যাচ্ছে, তাতে জেলার হাটগুলিতে তুলনায় ভাল দাম পাচ্ছেন তাঁরা। আর পাটের মান উন্নত হলে দাম মিলছে বেশ ভালই।
সূত্রের খবর, ২০২০-২১ মরসুমে রাজ্যে প্রায় ৪.১০ লক্ষ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। তবে ঝড়-বৃষ্টির কারণে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে কাঁচা পাটের উৎপাদন কমেছে ২৫%-৩০%। যে দুই জেলা রাজ্যের মোট উৎপাদনের প্রায় ৪০% জোগান দেয়। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, অতিবৃষ্টির জেরে এক দিকে যেমন উৎপাদন কমেছে, তেমনই জলের অভাব না-থাকায় আবার পাটের মান ও রঙ ভাল হয়েছে। তার উপরে কেন্দ্রের বরাত মেটাতে চাহিদা বাড়ছে কাঁচা পাটের। ফলে সব মিলিয়ে বেড়েছে দাম।
বিভিন্ন মহলের হিসেব বলছে, গত বছর ওই দুই জেলার যে মানের পাটের দাম উঠেছিল কুইন্টালে ৩৫০০-৪০০০ টাকা, তা-ই এ বার বিকোচ্ছে ৪৫০০-৪৮০০ টাকায়। কিছু ভাল মানের পাটের দাম উঠেছে ৫০০০ টাকা বা তারও বেশি। একই অবস্থা উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও। কোচবিহারের আলু-পাট-ধান চাষি সংগ্রাম কমিটি সূত্রের খবর, জেলার হাটগুলিতে এ বছর সব থেকে ভাল মানের পাটের গড় দাম যাচ্ছে কুইন্টালে ৬০০০ টাকা। গত বছর যে ধরনের পাট ৪০০০ টাকার আশেপাশে বিক্রি হয়েছে, সেখানে এ বার তা ৫৫০০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে।
চাষিদের সমস্যা
• অনেক সময়েই বাজারে কাঁচা পাটের ভাল দাম পান না পাটচাষিরা।
• অভাব রয়েছে পরীক্ষিত উন্নত মানের বীজের।
• জেলাগুলিতে পাট পচানোর জলের সমস্যা।
• ফলে খরচ করেও অনেক সময় উৎপাদন মার খায়।
• পাটের মান খারাপ হলে দাম আরও কমে।
• সব মিলিয়ে চাষিদের আগ্রহ কমায় সারা দেশেই কমেছে পাট চাষের জমি।
এ বছর স্বস্তি
• করোনার জেরে দীর্ঘ দিন কাজ বন্ধ থাকা, অতিবৃষ্টির ফলে উৎপাদন কমায় দাম বেড়েছে কাঁচা পাটের।
• পাট পচানোর জলের অভাব না-হওয়ায় উন্নত হয়েছে পাটের মান।
• ফলে উৎপাদন খরচের থেকে বাজার দর মিলছে কিছুটা বেশিই। বাড়ছে চাষিদের আয়।
• সামনের মরসুমে আরও বেশি জমিতে পাট চাষের ভাবনা।
দাম যে বেড়েছে, তা মানছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাট নিগম। সংস্থা সূত্রের খবর, রাজ্যের প্রতিটি জেলাতেই কেন্দ্রের বেঁধে দেওয়া ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের থেকে গড়ে এখন কিছুটা বেশি দামই পাচ্ছেন চাষিরা। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এখনও এই মরসুমের সব পাট বাজারে আসেনি। আগামী কয়েক সপ্তাহে তা আসতে শুরু করলে দাম পড়তে পারে।
পাট বিশেষজ্ঞদের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, খরচ করে পাট চাষ করলেও, কৃষকদের ঠিক মতো দাম না-পাওয়ার অভিযোগ অনেক দিনের। যে কারণে গত এক দশকে ধাপে ধাপে দেশে পাট চাষের জমি কমেছে। এক সময়ে তা ৯ লক্ষ হেক্টর থাকলেও, এখন নেমেছে ৬ লক্ষে। যার বেশিরভাগটাই হয় পশ্চিমবঙ্গে। ফলে কৃষকেরা ধারাবাহিক ভাবে ভাল দাম পেলে আরও বেশি জমিতে চাষে উৎসাহী হবেন। আর মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারের কথায়, ঝড়-বৃষ্টি ইত্যাদি কারণে পাট চাষে এ বছর কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তাই চাষিরা ভাল দাম পেলে তাঁদের কিছুটা সুরাহা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy