অভিজিৎ সেন। ফাইল ছবি
প্রয়াত হলেন গ্রামীণ অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ অভিজিৎ সেন। অধুনালুপ্ত যোজনা কমিশনের সদস্যের বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তাঁর ভাই প্রণব সেন জানিয়েছেন, সোমবার রাত ১১টা নাগাদ দিল্লির বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন অভিজিৎবাবু। হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যু হয় তাঁর। গত ক’বছর শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিলেন প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদ। করোনার সময়ে সেই সমস্যা বেড়েছিল। তাঁর বাবা সমর সেন ও স্ত্রী জয়তী ঘোষও অর্থনীতিবিদ। মেয়ে জাহ্নবী সাংবাদিক।
অভিজিৎবাবুর মৃত্যুতে বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু, অর্থনীতিবিদ রথীন রায়-সহ বহু মানুষ শোক প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার তাঁর শেষকৃত্যে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও সহকর্মীরা ছিলেন। আসেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, হান্নান মোল্লা, বৃন্দা কারাট প্রমুখ।
সকলের জন্য গণবণ্টন ব্যবস্থা এবং কৃষকদের জন্য শস্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের কট্টর সমর্থক অভিজিৎ সেনের কর্মজীবন প্রায় চার দশকের। এর মধ্যে রয়েছে অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, সাসেক্স এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা, কমিশন অব এগ্রিকালচারাল কস্ট অ্যান্ড প্রাইসেসের (সিএসিপি) শীর্ষপদ-সহ কেন্দ্রের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব-পালন। ইউএনডিপি, রাষ্ট্রপুঞ্জের খাদ্য সংক্রান্ত শাখা, এডিবি, ওইসিডি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের আমলে ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যোজনা কমিশনের সদস্য ছিলেন। ২০১০ সালে পান পদ্মভূষণ।
আর্থিক শ্রেণি নির্বিশেষে সব মানুষকে চাল ও গমের গণবণ্টন ব্যবস্থার আওতায় আনার পক্ষে কথা বলতেন এই অর্থনীবিবিদ। সরকারের বিভিন্ন অংশ থেকে খাদ্যে ভর্তুকির ‘বিপুল’ খরচ সম্পর্কে আশঙ্কার কথা শোনানো হলেও তাঁর বক্তব্য ছিল, রাজকোষের উপর ভর্তুকির ‘বোঝার’ বিষয়টা অনেকাংশেই অতিরঞ্জিত। সার্বিক গণবণ্টন ব্যবস্থা চালানো এবং কৃষকদের ন্যূনতম সহায়কমূল্য নিশ্চিত করার মতো সামর্থ কেন্দ্রের আছে। ১৯৯৭-২০০০ সাল পর্যন্ত সিএসিপির চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। দায়িত্ব পান কৃষিপণ্যের সহায়ক মূল্য সংক্রান্ত সুপারিশের। এক গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্টে তাঁর সুপারিশ ছিল, সিএসিপিকে সংবিধিবদ্ধ সংস্থার স্বীকৃতি দিয়ে কৃষির খরচের ভিত্তিতে হিসাব কষা সহায়ক মূল্যকে গ্রহণ করুক সরকার। ২০০২ সালে দীর্ঘমেয়াদি খাদ্যশস্য নীতি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে পেশ করা রিপোর্টে তিনি বলেন, কৃষিকাজে নগদে বা অন্যান্য প্রক্রিয়ায় গোনা খরচ, মজুরি, জমির ভাড়া-সব যাবতীয় খরচ ধরেই সহায়ক মূল্যের হিসাব কষতে হবে। এই সুপারিশ পরে ‘স্বামীনাথন সমীকরণ’-এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যেখানে বলা হয়, সহায়ক মূল্য হতে হবে কৃষির খরচের অন্তত ৫০% বেশি। তাঁর নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই ২০১৩-এর খাদ্য নিরাপত্তা আইন তৈরি করে ইউপিএ সরকার। এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষকে ২ টাকা কেজিতে গম এবং ৩ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
জামশেদপুরে ১৯৫০ সালের ১৮ নভেম্বর অভিজিৎবাবুর জন্ম। দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজে ফিজিক্স নিয়ে পড়লেও পরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে পিএইচডি করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy