ক্রিস্টালিনা জর্জিভা
ঝিমিয়ে পড়ছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের অর্থনীতি। বসে যাচ্ছে বৃদ্ধির রথের চাকা। অনেক ক্ষেত্রেই আশঙ্কা বাড়ছে মন্দার কোলে ঢলে পড়ার। তাতে সব দেশই কম-বেশি প্রভাবিত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তার মাসুল গোনার ছবি এ বছর সব থেকে স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠতে শুরু করেছে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে। দেশীয় অর্থনীতির বিপদ নিয়ে আশঙ্কা আরও উস্কে দিয়ে এই মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ)-এর কর্ণধার ক্রিস্টালিনা জর্জিভা। তাঁর কথায়, ‘‘২০১৯ সালে বৃদ্ধি ঢিমে হওয়ার সম্ভাবনা বিশ্বের ৯০ শতাংশ এলাকাতেই। প্রায় থমকে গিয়েছে বাণিজ্য। আমেরিকা, জাপান, ইউরোপ, চিন— আর্থিক কর্মকাণ্ড কমছে প্রায় সর্বত্র। ভারত, ব্রাজিলের মতো উন্নয়নশীল দেশে এর প্রভাব সব থেকে স্পষ্ট। চিনেও শ্লথ হচ্ছে বৃদ্ধি।’’
ভারতে যে বৃদ্ধি ধাক্কা খেয়েছে, তা অবশ্য সরকারি পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। শেষ বার প্রকাশিত ত্রৈমাসিকের পরিসংখ্যানে বৃদ্ধির হার নেমে এসেছে ৫ শতাংশে। বেশ কিছু দিন ধরেই তা লাগাতার নিম্নমুখী। চাহিদায় ভাটা। খরা লগ্নিতে। নতুন কাজের সুযোগ সে ভাবে তৈরি হওয়া তো দূর, বরং শুধু গাড়ি শিল্পেই কাজ খুইয়েছেন কয়েক লক্ষ কর্মী। পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গিন যে, গাড়ি থেকে বিস্কুট— বিক্রি তলানিতে বহু পণ্যেরই। এমনকি যে উৎসবের মরসুমে নিজেদের সারা বছরের বিক্রিবাটার প্রায় ৭০% সেরে ফেলে অধিকাংশ ভোগ্যপণ্য সংস্থা, সেই ‘সেরা সময়েও’ চাহিদা চাঙ্গা হওয়ার তেমন লক্ষণ নেই। বেকারত্বের কামড় বাড়ছে। তুলনায় অনেক কম বেতনের চাকরি পেতেও মরিয়া হয়ে আবেদন করছেন এমবিএ, পিএইচডি, ইঞ্জিনিয়ার, মাস্টার্স ডিগ্রিধারীরা। কিন্তু এত সব কিছুর পরেও অর্থনীতির হাল যে সুবিধার নয়, খোলাখুলি ভাবে যেন তা স্বীকার করতে চাইছে না কেন্দ্র।
এমনিতে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হালে একের পর এক ঘোষণা করেছে দিল্লি। কর ছাঁটাইয়ের বিপুল সুবিধা দিয়েছে কর্পোরেটকে। কমানো হয়েছে বিভিন্ন পণ্য-পরিষেবায় জিএসটির হার। কিন্তু এই সমস্ত কিছুর পরেও অর্থনীতির হাল নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, মোটের উপরে তা ঠিক আছে বলেই দাবি করে চলেছে কেন্দ্র। কখনও গাড়ি বিক্রি মুখ থুবড়ে পড়ার কারণ হিসেবে নতুন প্রজন্মের অ্যাপ-ক্যাব প্রীতিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আবার কখনও শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ার দাবি করে বসেছেন, আসলে কাজের অভাব নেই দেশে। উত্তর ভারতে অভাব বরং দক্ষ কর্মপ্রার্থীর। একেবারে সম্প্রতি সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবতেরও দাবি, দেশের অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়া নিয়ে বেশি আলোচনা হলে, তাতেই নাকি আখেরে বেশি ক্ষতি ভারতের। কিন্তু এই সব কিছুর পরেও আইএমএফ কর্ণধারের তুলে ধরা ছবিতে বেশ বিবর্ণই দেখাচ্ছে ভারতীয় অর্থনীতিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy