Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

অর্থনীতির আয়না নয় চাঙ্গা বাজার

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির অধ্যাপক লেখা চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের গাড়ি, বিস্কুট হোক বা সিনেমার টিকিট বিক্রি— বিচ্ছিন্ন ভাবে এগুলি দেখে অর্থনীতির সার্বিক ছবি ধরা যায় না।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:০৭
Share: Save:

কুলগাম-কাশ্মীর-সর্দার পটেল স্মরণের খবরের ঢেউয়ে বেহাল অর্থনীতি নিয়ে তেতো প্রশ্ন চাপা পড়েছে অনেকটাই। তার উপরে ৪০ হাজার পেরিয়েছে সেনসেক্স। অনেকের প্রশ্ন, অর্থনীতির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল না-হলে, শেয়ার বাজারে এমন রোশনাই কেন? চাহিদায় খরার এই সময়ে উৎসবের মরসুমে শুধু দিল্লি ও তার সংলগ্ন এলাকায় ৩০০ মার্সিডিজ গাড়ি বিক্রি হল কী ভাবে? কিন্তু অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, শুধু শেয়ার বাজার বা একটি দামি গাড়ি বিক্রির নাড়ি টিপে অর্থনীতির হাল ঠাওর করা অসম্ভব। তলানিতে ঠেকা বৃদ্ধি থেকে সঙ্কুচিত পরিকাঠামো— অর্থনীতির স্বাস্থ্য যে এই মুহূর্তে সুবিধার নয়, প্রায় সব পরিসংখ্যানেই তা স্পষ্ট।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির অধ্যাপক লেখা চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের গাড়ি, বিস্কুট হোক বা সিনেমার টিকিট বিক্রি— বিচ্ছিন্ন ভাবে এগুলি দেখে অর্থনীতির সার্বিক ছবি ধরা যায় না। পরিস্থিতি যে সুবিধার নয়, তা সরকারি হিসেবে স্পষ্ট। সূচক যে রেকর্ডই গড়ুক।’’

বৃদ্ধি ৫ শতাংশের তলানিতে। এই অর্থবর্ষে তার পূর্বাভাস ছেঁটেছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আইএমএফ, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সেপ্টেম্বরে পরিকাঠামো উৎপাদন সরাসরি কমেছে ৫.২%। অগস্টে ১.১% কমেছে শিল্পোৎপাদন। শুধু বেহাল গাড়ি শিল্পেই কাজ খুইয়েছেন কয়েক লক্ষ কর্মী। অথচ ৪০ হাজারের পাঁচিল টপকেছে সেনসেক্স! অনেকের প্রশ্ন, সংস্থার মুনাফা বৃদ্ধির সম্ভাবনা না-থাকলে, লগ্নিকারীরা শেয়ারে টাকা ঢালছেন কোন আশায়?

দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের অধ্যাপক দিব্যেন্দু মাইতি বলেন, ‘‘সূচক চাঙ্গা হয় সংস্থার লাভে উজ্জ্বল আগামীর আশায়। অর্থনীতির বাস্তব মাটির সঙ্গে তার যোগ সব সময় থাকে না। শেয়ার বেচে মুনাফার লক্ষ্যে বাজারের মধ্যেও কৃত্রিম ভাবে সাময়িক আশা তৈরির খেলাও চলে। ফলে শুধু ওই আতসকাচে অর্থনীতির জরিপ করা শক্ত।’’ তিনি মনে করাচ্ছেন, দরিদ্ররা দূরস্থান, এখনও বাজারে টাকা খাটাতে স্বচ্ছন্দ নিম্ন, নিম্ন-মধ্যবিত্তদের খুব কম অংশ। কিন্তু তাঁদের সঞ্চয়ের জায়গা ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে সুদ কমেছে। ফান্ড বা সরাসরি বাজারে লগ্নি ঢুকছে কিছু বড় সংস্থার শেয়ারে। যারা চট করে ডুববে না বলে আস্থা রাখেন লগ্নিকারী। সেনসেক্সের মতো সূচকের ওঠা-পড়া মূলত এই সমস্ত শেয়ারের হাত ধরে। তাই শুধু তার ভিত্তিতে অর্থনীতির ‘গন্ধ-বিচার’ যুক্তিযুক্ত নয়।

দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের আর এক অধ্যাপক রাম সিংহেরও মত, ‘‘বৃদ্ধির গতি যে শ্লথ, সংশয় নেই। সূচকের উত্থানকে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর হাওয়া-মোরগ না-ভাবাই ভাল।’’ লেখা-সহ অর্থনীতিবিদদের অনেকেই বলছেন, বাজারের উত্থানের আয়নায় চাঙ্গা অর্থনীতির ছবি না-খুঁজে বরং সরকারের উচিত ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা। পথ খোঁজা কাজ বাড়ানোর। যাতে চাহিদা চাঙ্গা হয়। আগ্রহ বাড়ে লগ্নির। আইআইএম-কলকাতার অর্থনীতির প্রাক্তন অধ্যাপক অনুপ সিংহের মতেও, ‘‘সূচকের উত্থান বাজারে লগ্নিকারীদের টাকা ঢালার ইচ্ছের প্রতিফলন। কিন্তু তাঁরা তো কল-কারখানায় লগ্নি করবেন না। ফলে সংস্থা কর্তারা প্রকল্পে টাকা ঢালতে রাজি কি না, সেটিই মূল কথা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Economy India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy