প্রশ্নের মুখে সাফল্য। নরেন্দ্র মোদী।
যতটা গর্জেছে, ততটা বর্ষায়নি সংস্কার-প্রতিশ্রুতি। ৭.৫% বৃদ্ধির হারও সম্ভবত একটু বাড়িয়ে দেখানো। মোদী সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে ভারতীয় অর্থনীতির এই ছবিই তুলে ধরল মার্কিন বিদেশ দফতরের রিপোর্ট। রেল, প্রতিরক্ষা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য দরজা হাট করা, দেশে ব্যবসার পথ মসৃণ করতে উদ্যোগের মতো কিছু বিষয়ে খুচরো প্রশংসা সেখানে জুটেছে ঠিকই। কিন্তু একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, তবে কি বিশ্বের মঞ্চে বিশ্বাসযোগ্যতা খোয়াচ্ছে বৃদ্ধির সরকারি পরিসংখ্যান?
ভারতে লগ্নির পরিবেশ কেমন, তা নিয়ে তৈরি ওই রিপোর্ট জানাচ্ছে, অর্থনীতির হাল ফেরাতে যে-ঝোড়ো সংস্কারের প্রতিশ্রুতি নরেন্দ্র মোদী দিয়েছিলেন, তার অনেকটাই আটকে গিয়েছে রাজনীতির চোরাবালিতে। এখন ভারত বিশ্বে অন্যতম দ্রুত বৃদ্ধির দেশ ঠিকই। কিন্তু ওই হার ৭.৫% হওয়াটা সম্ভবত একটু বাড়াবাড়ি। অন্তত লগ্নিকারীদের টাকা ঢালা নিয়ে প্রবল সংশয়ের সঙ্গে তা খাপ খায় না। উল্লেখ্য, ২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৬%। জানুয়ারি-মার্চে ৭.৯%।
মোদী জমানায় বৃদ্ধির হার নিয়ে প্রশ্ন এই প্রথম নয়। সরকারি পরিসংখ্যানে বৃদ্ধিকে যতটা তেজী দেখাচ্ছে, সত্যিই তা ততটা কি না, তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে দেশের অন্দরে। বিরোধী কংগ্রেস তো বটেই, বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন, অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন, মনমোহন-আমলের প্রধান আর্থিক উপদেষ্টা সি রঙ্গরাজন প্রমুখ। বৃদ্ধির ‘আসল’ হার সামনে এলে, তা কেন্দ্রের পক্ষে সুখকর হবে না বলে তোপ দেগেছেন শাসক দলের রাজ্যসভা সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামীও।
কলকাতায় এসে এ প্রসঙ্গে রঙ্গরাজন বলেছিলেন, দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) হিসেব করার জন্য নতুন যে-পদ্ধতির হাত ধরা হয়েছে, তাতে ভুল নেই। কিন্তু প্রশ্ন রয়েছে, যে তথ্যের (ডেটা) ভিত্তিতে তা করা হচ্ছে, সেটি নিয়ে। বিশেষত অনেকে মনে করেন, কর্পোরেট ক্ষেত্রের বিভিন্ন তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে কিছুটা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে। বৃদ্ধির হারও তাই দাঁড়াচ্ছে কিছুটা বেশি। অনেকের আবার জিজ্ঞাসা, বৃদ্ধির ছবি যদি এতই ভাল হবে, তবে সার্বিক শিল্প-সূচক, কল-কারখানায় উৎপাদন কিংবা পরিকাঠামোয় বৃদ্ধির দশা এখনও সুবিধার নয় কেন? কী কারণে ব্যাঙ্কে ধারের চাহিদা বাড়ছে না? কেনই বা ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প ঘোষণার পরেও এ দেশে টাকা ঢালতে এখনও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না লগ্নিকারীরা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃদ্ধির পরিসংখ্যান নিয়ে এ বার মার্কিন বিদেশ দফতরও সংশয় প্রকাশ করায় এক অর্থে প্রশ্ন উঠে গেল তার আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে। আগামী দিনে বিনিয়োগ টানার ক্ষেত্রে তা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা।
মার্কিন বিদেশ দফতরের মতে, বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির দরজা খোলা, লাল ফিতের ফাঁস আলগা করা, ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ মসৃণ করায় মোদী সরকারের সংস্কারমুখী পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। কিন্তু গোড়ায় প্রতিশ্রুতি যতটা ছিল, সে তুলনায় তা নেহাতই অল্প। জমি-বিল এখনও বিশ বাঁও জলে। চালু করা যায়নি পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি)। লগ্নিকারীদের মাথাব্যথার কারণ কর ও নীতি সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা, পরিকাঠামোয় খামতি, বিদ্যুতের ঘাটতি ইত্যাদিও। তার উপর এত দিন বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কম থাকার যে পড়ে পাওয়া সুযোগ মিলেছে, তা আর কত দিন থাকবে, সে বিষয়েও সন্দিহান তারা।
‘চায়ে পে চর্চা’র নৈকট্যে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে শুধু বারাক ডাকেন মোদী। ভারতের এনএসজি-লক্ষ্যপূরণেও পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। কিন্তু এ বার এ দেশের বৃদ্ধির হার নিয়ে প্রশ্ন তুলল মার্কিন বিদেশ দফতরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy