ছবি: সংগৃহীত
পরিচিতি: সুকুমার (৩০)
স্ত্রী (২৯) বাবা (৫৬)
মা (৫০)
কী করেন: রাজ্য সরকারি কর্মী। স্ত্রী গবেষক। থাকেন কলকাতায়। বাবা শিক্ষক
লক্ষ্য: সন্তানের জন্য সঞ্চয়। নিজের বাড়ির কাজ শেষ করা। পাঁচ বছরে গাড়ি কেনা। প্রতি বছর ঘুরতে যাওয়া
সুকুমার ও তাঁর স্ত্রী দু’জনেই রোজগেরে। স্ত্রী চাকরির চেষ্টাও করছেন। সবেমাত্র নিজেদের সংসার শুরু করেছেন তাঁরা। ফলে অনেক স্বপ্ন রয়েছে চোখে। সেগুলি কী ভাবে পূরণ করা যায়, তা নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
সন্তানের জন্ম
আগামী বছরে সন্তানের পরিকল্পনা রয়েছে সুকুমারের। এ জন্য আমার প্রথম পরামর্শ— অবশ্যই একটি আপৎকালীন তহবিল তৈরি করুন। এটা ঠিক যে সুকুমারের অফিস থেকে চিকিৎসা বিমার সুবিধা মেলে। কিন্তু সন্তান জন্মের আগে ও পরে অনেক কারণে টাকা লাগতে পারে। সেই তহবিল আগেই জোগাড় করে রাখতে হবে। এ জন্য মাসে ৩,০০০ টাকার রেকারিং ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট করুন বা ওই অঙ্ক লিকুইড ফান্ডে রাখুন।
সন্তানের প্রয়োজন
সন্তানেরও স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু প্রয়োজন থাকে। যেমন, স্কুলে প্রতি মাসে মাইনে, উচ্চশিক্ষা ও বিয়ে। বলা হয় এ জন্য সন্তানের জন্মের সময় থেকেই এ জন্য তৈরি হতে।
আমি বলব, দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যগুলির জন্য বাছুন শেয়ার ভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ড। স্বচ্ছন্দ হলে লগ্নি করতে পারেন সরাসরি শেয়ারেও। এমনিতে বলা হয়, দীর্ঘ মেয়াদের লক্ষ্যের জন্য যে টাকা জমাচ্ছেন, তার প্রায় ৭০%-৮০% যেন শেয়ারে থাকে। না-হলে মূল্যবৃদ্ধিকে টেক্কা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ, ঝুঁকি নিতে না-চাইলে অবশ্য এতটা টাকা শেয়ারে রাখার পরামর্শ আমি দেব না। কতটা টাকা সরাসরি শেয়ার বা ইকুইটি ফান্ডে ঢালবেন, তা নির্ভর করবে সুকুমারের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা ও ইচ্ছের উপরেই। এর সঙ্গেই টাকা রাখতে পারেন পিপিএফের মতো প্রকল্পে। কন্যা সন্তান হলে বাছতে পারেন সুকন্যা সমৃদ্ধিকেও।
একই সঙ্গে সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করা, তার মাইনের মতো স্বল্প মেয়াদি লক্ষ্যের জন্য স্থায়ী আমানত এবং ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডে টাকা রাখতে হবে। এমনিতে স্থায়ী আমানতে কর দিতে হয়। কিন্তু কম করের আওতায় থাকলে, অনেক সময়েই কিছুটা সুরাহা হয়।
নিজেকে অবহেলা নয়
সন্তানের জন্য টাকা জমানোর সময়ে অনেক মা-বাবাই নিজেদের প্রয়োজনের কথাটা ভুলে যান। এটা কিন্তু মস্ত বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। অবশ্যই সন্তানের জন্য ভাবতে হবে। কিন্তু একই সঙ্গে নিজের ভবিষ্যতের তহবিল তৈরির কাজটিও করে যেতে হবে। এ জন্য সুযোগ পেলেই ৫,০০০ টাকা ইকুইটি ফান্ড এবং ২,০০০ টাকা লিকুইড ফান্ডে রাখতে হবে।
বিমার সুরক্ষা
সুকুমারের নিজের দু’টি জীবন বিমা রয়েছে। দু’টিই এনডাওমেন্ট। সাধারণত দেখা যায়, এই ধরনের বিমায় ৪%-৬% রিটার্ন পাওয়া যায়। তাই সেগুলি পাল্টিয়ে টার্ম পলিসি কিনুন। খেয়াল রাখবেন, অন্তত তিন বছর (কিছু ক্ষেত্রে চার বছর) যেন বিমার প্রিমিয়াম গোনা হয়ে গিয়ে থাকে। না-হলে পলিসি সারেন্ডার করে খুব বেশি টাকা হাতে আসবে না। সন্তান জন্মানোর পরে কিন্তু দায়িত্ব অনেক বাড়বে। ভবিষ্যতের সমস্ত দায়দায়িত্বের কথা মাথায় রেখে ওই বিমার অঙ্ক ঠিক করতে হবে। ধরে রাখতে হবে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টিও। সাধারণত বলা হয়, বছরের বেতনের অন্তত ১০-১৫ গুণ বিমা করানোর কথা। তাঁকেও সেই পরামর্শই দেব।
অফিস থেকে স্বাস্থ্য বিমার খরচ সুকুমার পান ঠিকই। কিন্তু চাকরি ছাড়লে কী হবে? তখন কোথা থেকে চিকিৎসার টাকা জোগাড় করবেন? এই কারণেই বলব অবশ্যই নিজের পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বিমা করানোর কথা। বাবা-মায়ের বিমা হবে কি না, তা অবশ্য খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। প্রয়োজনে আলাদা বিমার ব্যবস্থাও করতে হবে। সন্তানের জন্মের পরে তাকেও ফ্যামিলি ফ্লোটার পলিসিতে আনতে হবে।
বাড়ির কাজ শেষ
সুকুমার বাড়ির জন্য ইতিমধ্যেই মাসে ২৮,০০০ টাকা করে কিস্তি গোনেন। যা ৩০ বছর ধরে চলবে। তার বাইরে এখনও আরও কাজ বাকি রয়েছে। সে জন্য চাই প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। কিন্তু সে জন্য আমি নতুন করে ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দেব না। বরং স্থায়ী আমানত ও রেকারিং ভেঙে যে টাকা মেলে, তা দিয়েই কাজ চালাতে বলব। যদি এতেও কাজ না-হয়, তা হলে ঋণ নেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে। কিন্তু তা যত দ্রুত সম্ভব শোধ করে দিতে হবে।
৫ বছরে গাড়ি
এখনকার আর্থিক পরিস্থিতিতে এ কথা ভাববেনই না। যখন দেখবেন অন্যান্যগুলির জন্য মোটামুটি টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে বা অন্তত লগ্নি চালু হয়েছে, তখন হিসেব কষে গাড়ির টাকা জোগাড়ের কথা ভাবতে পারেন। মনে রাখবেন, গাড়ি কিনলেই শুধু হল না। নিজে চালাতে পারলে ভাল, নয়তো ড্রাইভার রাখতে হবে। নিয়মিত বেতন দিতে হবে। রয়েছে জ্বালানির খরচ। গাড়িতে ধাক্কা লাগলে তা সারাতেও হবে। লাগবে গ্যারাজও। তাই আবারও বলব গাড়ি কেনার আগে ভাবুন যে এটা কি আদৌ দরকার? নাকি স্টেটাসের কথা ভেবে কিনতে চাইছেন?
প্রতি বছর বেড়ানো
এ জন্য ১ বছরের জন্য ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডে টাকা রাখতে হবে। জীবনবিমা পলিসি বন্ধ করে যে টাকা প্রতি মাসে বাঁচবে, তা দিয়েই এই টাকা জোগাড় করা যেতে পারে। তবে পরের বছরে সন্তানের জন্মের আগে হয়তো সে ভাবে ঘুরতে যেতে পারবেন না। কিন্তু পরবর্তী বছরগুলির জন্য এখন থেকেই টাকা রাখতে পারেন। যদি বেড়াতে যাওয়া না-ও হয়, তা হলে অন্য কাজে সেই টাকা ব্যবহার করতে পারবেন।
অবসরের তহবিল
দেখে অবাক লাগল সুকুমারের চিঠিতে অন্যতম বড় লক্ষ্যেরই কোনও উল্লেখ নেই। এটা ঠিক যে কম বয়সে অনেক ক্ষেত্রেই অবসরের চিন্তা করতে আমাদের ভাল লাগে না। কিন্তু এতেই সব চেয়ে বেশি টাকা লাগে। আর সে জন্য আগে থেকে প্রস্তুত না-হলে পরে হিমশিম খাওয়ার সম্ভাবনা।
• ভিপিএফে বাড়তি টাকা কাটান।
• ডাইভার্সিফায়েড ইকুইটি ফান্ডে লগ্নি শুরু করুন।
• সরাসরি শেয়ারে টাকা রাখার কথাও ভাবতে পারেন।
• বেছে নিতে পারেন দীর্ঘমেয়াদি বন্ড।
এর কোনও ক্ষেত্রেই আমি টাকার অঙ্ক বললাম না। কারণ সবগুলি একসঙ্গে বেশি টাকা রাখার মতো অবস্থা এখন তাঁর নেই। ফলে নিজের সাধ্যমতো লগ্নি করতে হবে। আমি শুধু পথটা বলে দিলাম।
আশা করব এই পরামর্শ সুকুমারের কিছুটা হলেও কাজে লাগবে।
পরামর্শদাতা: বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ শৈবাল বিশ্বাস
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy