প্রতীকী ছবি।
সংগঠিত, অসংগঠিতের কর্মীই হোন বা যুক্ত থাকুন স্বনির্ভর পেশার সঙ্গে, প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই অবসর জীবনের খরচ কী ভাবে চলবে, সেই চিন্তাই এক সময়ে গিয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায়। অথচ মাস গেলে পেনশন বাবদ অন্তত কিছু টাকা যাতে হাতে আসে, তার জন্য শুরু থেকেই ব্যবস্থা করে রাখার কথা বেশির ভাগ মানুষই ভাবেন না। একটু ভেবে দেখলে বোঝা যাবে এমন অনেক পেনশন প্রকল্প রয়েছে, যেখানে চাইলে নিজে থেকেই লগ্নি করা যায়। কম বয়সে শুরু করলে দিতে হয় অল্প টাকাও। আজ আমরা এই সমস্ত পেনশন প্রকল্পের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করব।
অটল পেনশন যোজনা
মাসে মাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা দিয়ে ৬০ বছর বয়সের পর এই প্রকল্প থেকে পেনশন পাওয়া যায়। প্রকল্প পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে পেনশন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ পিএফআরডিএ।
কাদের জন্য
প্রধানত অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের জন্যই এই প্রকল্প আনা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে থাকতে পারেন কল-কারখানার শ্রমিক, কৃষি ক্ষেত্রের কর্মী, ব্যবসায়ী, স্বনিযুক্ত ব্যক্তিরা। এ ছাড়াও, ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে সেভিংস অ্যাকাউন্ট থাকলে প্রকল্পে যোগ দেওয়া যাবে।
প্রকল্পের সুবিধা
• ষাট বছর বয়সের পরে মাসে মাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের পেনশন পাবেন গ্রাহক।
• গ্রাহক মারা গেলে, তাঁর স্ত্রী বা স্বামী পেনশন পাওয়ার অধিকারী হবেন।
• গ্রাহক নিজে ও পরবর্তী কালে তাঁর স্ত্রী বা স্বামী মারা গেলে অ্যাকাউন্টের জমা টাকা ফেরত পাবেন নমিনি।
যোগ্যতা
• প্রকল্পে যোগ দেওয়ার জন্য বয়স হতে হবে ১৮-৪০ বছর।
• প্রতি মাসে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরাসরি জমা করার জন্য সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক।
যোগ দিতে পারবেন না
• আয়করের আওতায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা প্রকল্পে যোগ দিতে পারবেন না।
• অন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সদস্য হলেও সদস্য হওয়া যাবে ন।
কী ভাবে খুলবেন অ্যাকাউন্ট
• খুলুন সেভিংস অ্যাকাউন্ট।
• ব্যাঙ্কের যে শাখায় অ্যাকাউন্ট, সেখানেই প্রকল্পে যোগ দেওয়ার ফর্ম পূরণ করতে হবে।
• লাগবে মোবাইল ও আধার নম্বর।
মাসে জমা
• পেনশন ১,০০০-৫,০০০ টাকা। সেই অঙ্ক ও বয়সের উপরে ভিত্তি করে ঠিক হবে মাসে কত টাকা জমা দিতে হবে। সব ক্ষেত্রেই টাকা দিতে হবে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত।
জরিমানা
• সময়ে টাকা না-দিলে জরিমানা দিতে হবে। মাসে জমার অঙ্কের ভিত্তিতে তা হতে পারে ১-১০ টাকা।
• ৬ মাস পর্যন্ত টাকা না-দেওয়া হলে অ্যাকাউন্ট লেনদেনের অযোগ্য (ফ্রোজেন) বলে বিবেচিত হবে।
• ২৪ মাস টাকা বকেয়া থাকলে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ভর্তুকি
বছরে জমা টাকার ৫০% অথবা ১,০০০ টাকার মধ্যে, যেটা কম সেই অঙ্ক ভর্তুকি দেয় কেন্দ্র। তবে যাঁরা ২০১৬ সালের মার্চের মধ্যে প্রকল্পে যোগ দিয়েছেন, তাঁরাই পাঁচ বছর ধরে ওই ভর্তুকি পাবেন। তার পরে যোগ দিলে তা মিলবে না।
টাকা তোলা
• ৬০ বছর বয়সে পেনশন শুরু হয়।
• সাধারণত ৬০ বছরের আগে টাকা তোলা যাবে না। তবে গ্রাহকের মৃত্যু হলে তাঁর স্ত্রী/স্বামী টাকা তুলে নিতে পারবেন। স্ত্রী বা স্বামী না-থাকলে টাকা তুলতে পারবেন নমিনি।
• এ ছাড়া নির্দিষ্ট কিছু রোগের চিকিৎসার জন্যও টাকা তোলা যাবে।
প্রধানমন্ত্রী মানধন যোজনা
• মূলত অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের জন্যই এই প্রকল্প এনেছে কেন্দ্র।
• শ্রমিকদের প্রকল্পের নাম প্রধানমন্ত্রী শ্রমযোগী মানধন যোজনা, কৃষকদের প্রধানমন্ত্রী কিসান মানধন যোজনা ও ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী লঘু-ব্যাপারি মানধন যোজনা।
• তিনটি প্রকল্পের সুবিধা, জমা-সহ প্রায় সব নিয়মই এক। ফারাক রয়েছে যোগদানের যোগ্যতা-সহ কিছু বিষয়ে।
গোড়ার কথা
• নিয়মিত টাকা জমা দিলে, ৬০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতি মাসে ৩,০০০ টাকা করে পেনশন পাওয়া যাবে।
• ঠিক মতো তা পরিচালনা করা হচ্ছে কি না, তাতে নজর রাখার দায়িত্বে জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা পর্ষদ।
• প্রকল্পের টাকা জমা রাখা ও তহবিল পরিচালনা করে জীবন বিমা নিগম।
• পেনশন দেওয়ার দায়িত্বেও তারাই।
যোগ্যতা
• যোগ দিতে হয় ১৮-৪০ বছরে।
• অটল পেনশনে নাম থাকলেও এতে যোগ দিতে বাধা নেই।
• পেনশন ছাড়া অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য আনা রাজ্য সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেলেও এতে শামিল হওয়া যায়।
• শ্রমযোগী মানধন প্রকল্পে সদস্যের আয় মাসে ১৫,০০০ টাকার মধ্যে থাকতে হবে। প্রকল্পে যোগ দেওয়ার পরে আয় ১৫,০০০ টাকা ছাড়ালেও সেটি চালানো যাবে।
• লঘু-ব্যাপারি মানধন যোজনা ও স্বনিযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যবসার বার্ষিক আয় ১.৫ কোটি টাকার মধ্যে থাকতে হবে। আয় বছরে ৪০ লক্ষ টাকার বেশি হলে আবেদনপত্রের সঙ্গে জিএসটি রিটার্ন জমা দিতে হবে।
• কিসান মানধনে যোগ দিতে হলে জমি থাকতে হবে ২ একর পর্যন্ত। এর বেশি হলে যোগ দেওয়া যাবে না।
• যে সব চাষি শ্রমযোগী মানধন বা লঘু-ব্যাপারি মানধনের সদস্য হয়েছেন, তাঁরা কিসান মানধনে যোগ দিতে পারবেন না।
• আয়করের আওতায় থাকলেও নাম লেখানো যাবে না কিসান মানধনে।
কারা পারবেন না
• ৪০ বছরের বেশি হলে মানধন প্রকল্পে যোগ দিতে পারবেন না।
• প্রভিডেন্ট ফান্ড বা অন্য পেনশন প্রকল্পের আওতায় থাকলে শ্রমযোগী মানধনে যোগ দেওয়া যাবে না।
কত টাকা লাগবে
• বয়স অনুসারে স্থির হবে সেই অঙ্ক।
• ৬০ বছর পর্যন্ত টাকা দিতে হবে।
• সদস্য যে টাকা দেবেন, কেন্দ্রও সেই একই অঙ্কের টাকা ওই খাতে দেবে।
• প্রথম মাসে টাকা দিতে হবে নগদে।
• তার পরের মাস থেকে প্রতি মাসে ব্যাঙ্ক থেকে অনলাইন মারফত সরাসরি টাকা কেটে নেওয়া হবে।
নাম লেখানোর উপায়
• জরুরি সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট।
• লাগবে আধার কার্ডও।
• ওই দু’টি নিয়ে যেতে হবে তথ্যমিত্র বা কমন সার্ভিস সেন্টারে (সিএসসি)।
• নিজের সই করা জন্ম তারিখ (সেল্ফ সার্টিফিকেশন) ও আধারের ভিত্তিতেই নথিভুক্ত হওয়া যাবে।
• নমিনির ক্ষেত্রে জন্ম তারিখের প্রমাণপত্র লাগবে।
• ভুয়ো জন্ম তারিখ দাখিল করলে জরিমানা হতে পারে।
• নাম নথিভুক্তিতে টাকা লাগে না।
• প্রতিটি নাম নথিভুক্তির জন্য ৩০ টাকা করে পাবে ওই কেন্দ্রগুলি। যা সরকারই দেবে।
টাকা বাকি পড়লে
• টাকা দেওয়া বন্ধ করতে বাধ্য হলে, পরে তা দেওয়া যাবে।
• পুরো বকেয়া সুদ-সহ মেটাতে হবে।
• দিতে হতে পারে জরিমানাও।
ঋণের সুবিধা
• ঋণ নেওয়ার সুবিধা নেই।
• মেয়াদ শেষের আগে তোলা যাবে না আংশিক টাকাও।
প্রকল্প বন্ধ করলে
৬০ বছরের আগে প্রকল্প ছাড়লে শর্তসাপেক্ষে টাকা মিলবে—
• ১০ বছর হওয়ার আগে বেরোলে, নিজের টাকা ব্যাঙ্ক বা ডাকঘর সেভিংস অ্যাকাউন্টে দেওয়া সুদ-সহ ফেরত পাবেন। কেন্দ্রের অংশ মিলবে না।
• ১০ বছরের পরে বেরোলেও নিজের টাকা পাওয়া যাবে। সেভিংস বা প্রকল্পের মধ্যে যেটি বেশি, সেই হারে সুদ মিলবে। কেন্দ্রের টাকা মিলবে না।
• ৬০ বছরের আগে ছাঁটাই, শারীরিক অক্ষমতা ইত্যাদি কারণে আয় বন্ধ হলে, নিজের টাকা সুদ-সহ তোলা যাবে বা ৬০ বছর পর্যন্ত টাকা দিয়ে পেনশনের যোগ্যতা অর্জন করা যাবে।
সংগঠিত ক্ষেত্রে গেলে
• প্রকল্পে যোগ দেওয়ার পরে সংগঠিত ক্ষেত্রে যোগ দিলে নিজের জমা টাকা তুলে নিতে পারবেন।
• চাইলে এই প্রকল্পে থাকাও যাবে। তখন ৬০ বছর পর্যন্ত টাকা দিতে হবে।
• ৬০ বছরে সুদ-সহ নিজের জমা তোলা যাবে। মিলবে না কেন্দ্রের টাকা।
পেনশন কী ভাবে
• প্রকল্পে দেওয়া সেভিংস অ্যাকাউন্টেই পেনশন জমা পড়বে।
সদস্য মারা গেলে
• ৬০ বছরে পেনশন শুরুর আগে সদস্য মারা গেলে, তাঁর স্বামী বা স্ত্রী—
• জমা টাকা সুদ-সহ তুলতে পারবেন।
• চাইলে মূল সদস্যের বয়স ৬০ বছর হওয়া পর্যন্ত তাঁর অংশের টাকা জমা দেওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির যে সময়ে ৬০ বছর বয়স হত, তখন থেকে স্বামী বা স্ত্রী পেনশন পাবেন।
• পেনশন চালুর পরে সদস্য মারা গেলে, তাঁর স্বামী বা স্ত্রী মূল পেনশনের অর্ধেক টাকা পাবেন।
• সন্তানেরা পেনশনের টাকা পাবেন না। সদস্য ও তাঁর স্ত্রী বা স্বামী মারা গেলে, অ্যাকাউন্টের টাকা প্রকল্পের পেনশন তহবিলে চলে যাবে।
নমিনি
• সদস্য মারা গেলে স্ত্রী বা স্বামী নমিনি হিসেবে পেনশন পাবেন বা টাকা তুলতে পারবেন।
• অন্য কাউকেও নমিনি করা যায়।
• পেনশন শুরুর আগে সদস্য মারা গেলে অথবা স্বামী বা স্ত্রী না-থাকলে, নমিনি তাঁর অংশের টাকা সুদ-সহ তুলে নিতে পারবেন। তবে সরকারের টাকা পাবেন না। মিলবে না পেনশনও।
• স্বামী-স্ত্রী উভয়েই প্রকল্পের সদস্য হলে ও দু’জনেই ৬০ বছর বয়স হওয়ার আগে মারা গেলে নমিনি তাঁদের নিজস্ব অংশ সুদ-সহ ফেরত পাবেন। কেন্দ্রের অংশ পাবেন না।
• একাধিক স্বামী বা স্ত্রী থাকলে, সংশ্লিষ্ট সদস্য যাঁকে নমিনি করে যাবেন তিনিই টাকা পাবেন।
• নমিনি না-থাকা অবস্থায় একাধিক স্বামী বা স্ত্রী তা দাবি করলে, আদালত ঠিক করবে কে পেনশন পাবেন।
ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম
• ২০০৪ সালের পরে কেন্দ্রীয় সরকারি কাজে যোগ দিলে বাধ্যতামূলক। অন্যেরাও যোগ দিতে পারেন।
কাদের জন্য
• ১৮-৬৫ বছরে যোগ দেওয়া যাবে। টাকা জমা দেওয়া যায় ৭০ বছর পর্যন্ত।
• কমপক্ষে ৩ বছর টাকা দিতে হবে।
কী ভাবে পেনশন
• অবসরের পরেও থাকা যায়। তখন অ্যাকাউন্টে জমা টাকার নির্দিষ্ট অংশ দিয়ে অ্যানুইটি কিনতে হবে। সেখান থেকেই পেনশন মিলবে।
• চাইলে বাকি টাকা অ্যাকাউন্টে জমা রেখে দিতে পারেন।
• তার পরেও টাকা দেওয়া যায়। তবে ৭০ বছরের পরে তুলে নিতে হবে।
অ্যাকাউন্ট কোথায়
• রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক, আর্থিক বা ব্রোকিং সংস্থায় এনপিএস অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। এদের বলে পয়েন্ট অব প্রেজেন্স (পিওপি)।
• পিএফআরডিএ-র সাইটে (www.pfrda.org.in) সেই সন্ধান মেলে।
• একই তথ্য পাওয়া যাবে এনএসডিএলের সাইটেও (www.npscra.nsdl.co.in)।
লাগবে কোন নথি
• ভর্তি করা রেজিস্ট্রেশন ফর্ম।
• পরিচয়ের প্রমাণপত্র (আধার, প্যান, ভোটার-আইডি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্টের প্রতিলিপি ইত্যাদি)।
• ঠিকানার প্রমাণপত্র (আধার, ভোটার-আইডি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্টের প্রতিলিপি)।
• জন্ম-তারিখের প্রমাণপত্র (বার্থ সার্টিফিকেট ইত্যাদি)।
অ্যাকাউন্ট কত ধরনের
• প্রকল্পে দু’ধরনের অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। টিয়ার-১ এবং টিয়ার-২।
• টিয়ার-১ অ্যাকাউন্ট খুললে, তবেই টিয়ার-২ অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব হবে।
• টিয়ার-১ অ্যাকাউন্টে জমা টাকা নির্দিষ্ট কিছু কারণ ছাড়া ৬০ বছরের আগে তোলা যাবে না। কিন্তু টিয়ার-২ অ্যাকাউন্টের টাকা আগেই তোলা সম্ভব। চাইলে পুরোটাও তোলা যায়।
• বছরে ১,০০০ টাকার বেশি ঢাললে, তবেই টাকা জমা পড়বে টিয়ার-২ অ্যাকাউন্টে। হাজার টাকা পর্যন্ত টিয়ার-১ অ্যাকাউন্টে থাকবে। তার উপরে যত খুশি টিয়ার ২-তে ঢালা যাবে।
জমার অঙ্ক
• বছরে অন্তত ১,০০০ টাকা। ঊর্ধ্বসীমা নেই। যখনই দেওয়া হোক, তা কমপক্ষে ৫০০ টাকা হতে হবে।
কে দেবে
• কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে বেতনের ১০% এনপিএসে দেয় সরকার। কর্মীদের দিতে হয় ১০%।
• বেসরকারি ক্ষেত্রে লগ্নিকারীকেই টাকা দিতে হয়। সরকার টাকা দেয় না।
নেটের সুবিধা
• এনএসডিএলের সাইটে আধার ব্যবহার করে ঠিকানা বদলানো যায়।
• অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়া যায়।
• এনপিএস টিয়ার-১ অ্যাকাউন্ট থাকলে ‘ই-এনপিএস’ ব্যবস্থায় টিয়ার-২ অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।
• এ জন্য ব্যবহার করতে হবে প্রান (পার্মানেন্ট রিটায়ারমেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বর, যা এনপিএস চালুর সময়েই মেলে), জন্ম তারিখ এবং প্যান।
• নির্দিষ্ট অ্যাপের সাহায্যেও প্রকল্প সম্পর্কে খবর নেওয়া যায়।
অন্য পেনশন থাকলে
• তা-ও এতে যোগ দেওয়া যায়।
অ্যানুইটির হিসেব
• ৬০ বছরের পরে টাকা তোলার সময়ে টিয়ার-১ অ্যাকাউন্টে জমার অন্তত ৪০% দিয়ে অ্যানুইটি কিনতেই হয়। বাকিটা হাতে পেতে পারেন।
• জমার অঙ্ক ২ লক্ষের কম হলে পুরো টাকাই হাতে পাওয়া যায়।
আগে ছাড়ার সুবিধা
• ৬০ বছরের আগে টাকা তুলতে চাইলে কমপক্ষে জমা টাকার ৮০% দিয়ে অ্যানুইটি কিনতে হয়। বাকিটা হাতে হাতে পাওয়া যায়।
• ৬০ বছরের পরে প্রকল্পে যোগ দিলে কমপক্ষে তিন বছর পূর্ণ হওয়ার আগে ছাড়লে উপরের শর্ত প্রযোজ্য হবে।
• সে ক্ষেত্রে জমার অঙ্ক ১ লক্ষ বা তার কম হলে, পুরোটা নগদে মিলবে।
টাকা খাটানোর উপায়
টাকা কী ভাবে খাটবে, শেয়ার ও ঋণপত্রে কত অংশ ঢালা হবে, এই সব ঠিক করার জন্য দু’টি বিকল্প রয়েছে—
• অ্যাক্টিভ চয়েস: এতে গ্রাহক নিজেই ঠিক করেন।
• অটো চয়েস: লগ্নিকারীর বয়স ও ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা বিচার করে পিএফআরডিএ-র তৈরি করে রাখা প্রকল্পে টাকা ঢালা যেতে পারে।
নমিনি করা যায়?
• হ্যাঁ। চাইলে তা বদলানোও যায়।
কর ছাড়
• আয়কর আইনের ৮০সিসিসিডি (১বি) ধারায় বেতনপ্রাপ্ত ও স্বনির্ভর (সেল্ফ এমপ্লয়েড) টিয়ার-১ অ্যাকউন্টে অর্থবর্ষে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত কর ছাড় মেলে।
• ৮০সি ধারায় ১.৫০ লক্ষ কর ছাড়ের পরেও এই সুবিধা দাবি করা যায়।
• টিয়ার-১ অ্যাকাউন্টের যে ন্যূনতম ৪০% টাকা দিয়ে অ্যানুইটি কেনা হয়, তার উপরেও কর ছাড় পাওয়া যায়।
অ্যানুইটি
• সরকারি বা সরকার অনুমোদিত পেনশন প্রকল্প ছাড়াও জীবনবিমা সংস্থার পেনশন প্রকল্প রয়েছে। সেগুলি অ্যানুইটি হিসেবে পরিচিত।
• একলপ্তে টাকা ঢেলে পেনশনের ব্যবস্থা করা যায় এতে। এনপিএসের ক্ষেত্রে এতে টাকা রাখতেই হয়।
• সব অ্যানুইটি প্রকল্পে পেনশন পাওয়ার শর্ত এক নয়। সংস্থা বিশেষে তারতম্য হয়। তাই প্রকল্প কেনার সময়ে শর্তগুলি ভাল করে পড়তে হবে।
পিএফের পেনশন
১৯৯৫ সালের নভেম্বরের পরে সংগঠিত ক্ষেত্রের যে সব সদস্য চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন বা নেবেন, তাঁদের জন্য চালু রয়েছে এমপ্লয়িজ পেনশন প্রকল্প (ইপিএস)।
সদস্য কী ভাবে
• পিএফের সদস্য হলে নিজে থেকেই ইপিএসের সদস্য হবেন কর্মীরা।
• দু’একটি ক্ষেত্র ছাড়া মাসে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত যে সব কর্মীর বেতন, তাঁরাই প্রকল্পে শামিল হতে পারবেন।
কত দিতে হবে
নিজে থেকে দিতে হয় না। পিএফ খাতে
নিয়োগকারীর দেওয়া টাকা থেকেই মেটানো হয় পেনশন তহবিলের টাকা।
বেতন ১৫,০০০ টাকা ছাড়ালেও পিএফের সদস্য থাকা যায়। তবে পিএফ খাতে টাকা কাটা হবে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্তই। নিয়োগকারীও একই অঙ্ক জমা দেন। দু’একটি শিল্প ছাড়া বাকি সমস্ত ক্ষেত্রেই কর্মীর বেতনের (১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত) ১২% পিএফ খাতে কাটা হয়। নিয়োগকারীও সমপরিমাণ টাকা পিএফে দেন।
কর্মীর থেকে কাটা টাকার পুরোটা জমা পড়ে পিএফ অ্যাকাউন্টে। নিয়োগকারীর ১২ শতাংশের মধ্যে ৮.৩৩% জমা পড়ে পেনশন তহবিলে। বাকি ৩.৬৭% পিএফ অ্যাকাউন্টে।
পেনশন পাওয়ার বয়স
• কর্মীর বয়স ৫৮ বছর হলেই পেনশন পাওয়ার অধিকারী হন।
• তার আগে অবসর নিলে বা চাকরি ছাড়লে তখন থেকেও পেনশন পেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হিসেবের ভিত্তিতে পেনশন কমতে পারে।
• ৫৮ বছরের পরে চাকরিতে থাকলে, ওই বয়স পূর্ণ হলেই পেনশন পাওয়ার জন্য আর্জি জানানো যায়।
যোগ্যতা
কমপক্ষে ১০ বছর চাকরি করলে পেনশন পাওয়ার যোগ্য হওয়া যায়।
কর্মী মারা গেলে
• সদস্য অবসরের পর যত দিন বাঁচবেন, তত দিন পেনশন মেলে। তিনি মারা গেলে তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত পেনশন পাবেন। স্ত্রী পাবেন মূল পেনশনের ৫০%। সন্তানের এক এক জন ২৫% করে।
• তিন বা তার বেশি সন্তান থাকলে, শুরুতে প্রথম দুই সন্তান পেনশন পাবে। তাঁদের এক জনের বয়স ২৫ বছর পেরোলে তৃতীয় সন্তান পেনশন পাবে। এ ভাবে যত জন সন্তান থাকবে, তারা ২৫ বছর পর্যন্ত টাকা পাবে।
ইপিএস থেকে ঋণ
• ঋণ নেওয়া যায় না।
পেনশন কত
• পেনশনের অঙ্ক নির্ভর করে অবসর বা ৫৮ বছর বয়সে বেতনের অঙ্ক, কত বছর পর্যন্ত পেনশন অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়েছে, ইপিএস প্রকল্প চালু হওয়ার আগে কত বছর চাকরি করেছেন ইত্যাদির উপরে।
• হিসেবের পদ্ধতিটি এই রকম— পেনশনযোগ্য বেতন x পেনশনযোগ্য চাকরি ÷ ৭০
এ ক্ষেত্রে বেতন হল, অবসর বা অন্য কারণে যে দিন চাকরি ছাড়ছেন, তার আগে ৬০ মাসের গড়। পেনশনের হিসেবের জন্য বেতন সর্বোচ্চ ক্ষেত্রে ১৫,০০০ টাকা ধরা হবে।
চাকরি হল— কাজে থাকাকালীন ইপিএস তহবিলে যত দিন টাকা কাটা হয়েছে, সেই সময়টুকু।
যাঁরা ১৯৯৫ সালের নভেম্বরে পেনশন প্রকল্প চালুর আগে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের চাকরি শুরু থেকে প্রকল্প চালু হওয়া পর্যন্ত সময়কে ‘পাস্ট সার্ভিস’ হিসেবে গণ্য করা হয়। সেই মেয়াদের উপরে ভিত্তি করে ঠিক হওয়া বাড়তি টাকা পেনশনে যোগ হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy