ক্রিপ্টোর বাজারে ক্রমাগত পতন।
একটা সময় বিপুল পরিমাণ লাভের মুখ দেখেছিল ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগকারীরা। মুহূর্তের মধ্যে বদলে গিয়েছিল বহু বিনিয়োগকারীর ভাগ্য। তবে সে সব এখন অতীত। ২০২০-র ডিসেম্বর থেকে ক্রমাগত ধস নামছে ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারে। এরই মধ্যে একের পর এক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা আঘাত হেনেছে বাজারে। তাই বছরের প্রথম দিকে বিশেষজ্ঞরা যেমনটা আশা করেছিলেন, তেমনটা ফল হয়নি। উল্টে ক্ষতির মুখ দেখেছে বহু ক্রিপ্টোকারেন্সি।
যদিও অতিমারির পরে এই বছরের শুরুটা বেশ ভাল ভাবেই হয়েছিল। ধীরে হলেও লাভের মুখ দেখছিলেন বিনিয়োগকারীরা। এর পরেই শুরু হয় সমস্যা। বিশ্ব জুড়ে যে ভাবে বিভিন্ন অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে চলেছে, তাতে হতাশা আরও স্পষ্ট হয়েছে । যেমন ইউক্রেনে যুদ্ধের ফলে বহু দেশেই মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। কয়েকটি দেশে এই হার বিগত এক দশকে সর্বোচ্চ। পাল্লা দিয়ে বাড়তে শুরু করে তেলের দাম। বিশ্বব্যাপী এই সমস্যার প্রভাব পড়েছে আমেরিকাতেও। আমেরিকার বাজার তো মন্দা চলছেই, সেই সঙ্গে বেড়েছে সুদের হার। এই সমস্যাগুলি কাটিয়ে বাজার কবে আলোর মুখ দেখবে, তা নিয়ে সঠিক কোনও সঙ্কেত এখনও মেলেনি। ফলে আরও বেশি পরিমাণে প্রমাদ গুনছেন বিনিয়োগকারীরা।
অন্য দিকে, ক্রমাগত পতনের ফলে গভীর সঙ্কটে রয়েছে ক্রিপ্টো বাজার। মন্দার ভয় বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ ক্রয় করা থেকে বহু বিনিয়োগকারী বিরত থাকছেন। অনেকেই বুঝতে পারছেন না,কী করা উচিত। যাঁরা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করতে চান, কিংবা ইতিমধ্যেই বিনিয়োগ করে ফেলেছেন ও ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে চান, তাঁদের প্রত্যেককেই বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
১। বিটকয়েন, ইথেরিয়াম এবং এদেরই মতো অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম শেষ কয়েক দিনে নিয়মিত পড়ে গিয়েছে। বিগত চার দশকের তুলনায় এই বছর সর্বোচ্চ হারে বেড়েছে আমেরিকার মুদ্রাস্ফীতি। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা আশঙ্কা করছেন, এই মুদ্রাস্ফীতিকে আয়ত্তে আনার জন্য আমেরিকার ফেডেরাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নিজের সুদের হার আরও বাড়াতে চলেছে। সুদের হারে বৃদ্ধি হলে এসএন্ডপি, ডাও এবং নাসডাক, টেক স্টক এবং কমোডিটি স্টকে দারুণ রিটার্ন দেবে। যা স্বভাবতই বিনিয়োগকারীদের ক্রিপ্টো থেকে সরে আসা বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
২। এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত? বাজার বিশেষজ্ঞদের সাফ বক্তব্য, এই অবস্থায় তাড়াহুড়ো করা ঠিক হবে না। ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার আকারে অত্যন্ত ছোট এবং অস্থিরতাও অনেক বেশি। এই ধরনের বাজারে দ্রুত পতন অস্বাভাবিক কিছু নয়। ক্রিপ্টো বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিটকয়েনে পতন হলেও, এটির নুন্যতম দাম প্রায় ২০,০০০ ডলার থেকে ১৮,০০০-এর মধ্যে থাকতে পারে। বিটকয়েনের দাম এর থেকে পড়লে বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাবে। বিনিয়োগকারীদের এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
৩। তবে এই পরিস্থিতির সুরাহাও খুব সহজ। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি কোনও বিনিয়োগকারীর ক্রিপ্টোকারেন্সিতে পোর্টফোলিয়ো পড়ে থাকে এবং এখন সেই ব্যক্তির অর্থের প্রয়োজন না থাকে, তা হলে এই মুহূর্তে পোর্টফোলিয়োতে হাত না দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু অর্থের প্রয়োজন হলে বা মনে সঙ্কোচ থাকলে বর্তমান পোর্টফোলিয়ো বিক্রি করে দিয়ে কিছু অর্থ বাজার থেকে তুলে নিন। বাজারের বর্তমান অবস্থা দেখে সেই অর্থ বিনিয়োগ করা যেতে পারে।
৪। অনেকেরই মত, বাজার টালমাটাল থাকায় নতুন বিনিয়োগকারীদের শুধুমাত্র বিটকয়েন এবং ইথেরিয়ামের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সিতেই বিনিয়োগ করা উচিত। কারণ এগুলিতে ঝুঁকি কম। পাশাপাশি, ক্রিপ্টো বাজারে কখনই এক সঙ্গে অনেক টাকা বিনিয়োগ করা উচিত নয়। বরং ভরসা থাকুক সিস্টেমেটিক ইন্ভেস্টমেন্ট প্ল্যানে। এতে ঝুঁকির মাত্রা কিছুটা হলেও কম থাকে।
৫। কিন্তু ক্রিপ্টো বাজারে ঠিক কত পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা উচিত? এর একটি সহজ অঙ্কও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রথম থেকেই ক্রিপ্টোর বাজার এমনই টালমাটাল। যদি কোনও বিনিয়োগকারী উচ্চ মাত্রার ঝুঁকি নিয়ে চিন্তিত হন, তা হলে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীর মোট বিনিয়োগের ২ শতাংশই ক্রিপ্টো বাজারে বিনিয়োগ করা উচিত। মনে রাখবেন, যে কোনও বিনিয়োগের মূল লক্ষ্য হল লাভ করা। তাই নিয়মিত লাভের টাকা তুলে নেওয়াই শ্রেয়। এবং অবশ্যই বিনিয়োগের আগে সংশ্লিষ্ট ক্রিপ্টো সম্পর্কে ভাল করে গবেষণা করে তার পরেই বিনিয়োগ করা উচিত।
ক্রিপ্টোর বাজার আগামী দিনে কোন পথে মোড় নিতে পারে, তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। এই বছরের শেষ দিকে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশাবাদী অনেকেই। যদি বিনিয়োগ করতে হয়, তা হলে এটাই হল আদর্শ সময়। কারণ বাজার নিম্নগামী থাকায় বিনিয়োগ করলে লাভ অনেক বেশি পাওয়া যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy