China tests Non Nuclear Hydrogen Bomb 15 times powerful than TNT blast dgtl
Chinese Hydrogen Bomb
টিএনটি বিস্ফোরণের চেয়ে ১৫ গুণ শক্তিশালী! চিনা হাইড্রোজেন বোমায় আমেরিকার ‘নার্ভাস ব্রেকডাউন’?
শুল্ক নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে দ্বন্দ্বের মাঝেই অতি শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষা চালাল চিন। প্রথাগত টিএনটি বিস্ফোরণের চেয়ে এটি ১৫ গুণ বেশি শক্তিশালী বলে জানা গিয়েছে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৫৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
মার্কিন-চিন শুল্কযুদ্ধে সরগরম বিশ্ব। এই আবহে শক্তি প্রদর্শন করল বেজিং। অতি শক্তিশালী অ-পরমাণু হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ড্রাগন ফৌজ। ফলে তাইওয়ানের বাড়ল রক্তচাপ। পাশাপাশি, একে আমেরিকার সামনে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের খোলা চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করা হচ্ছে।
০২১৯
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরীক্ষার সময়ে দু’কিলো ওজনের বিস্ফোরকে তৈরি ওই হাইড্রোজেন বোমাটি সাদা রঙের অগ্নিগোলক তৈরি করে। এর স্থায়িত্ব ছিল দু’সেকেন্ডের বেশি। এই অল্প সময়ের মধ্যে বোমাটি থেকে প্রথাগত টিএনটি (ট্রাইনাইট্রোটলুইন) বিস্ফোরণের তুলনায় ১৫ গুণ বেশি শক্তি নির্গত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
০৩১৯
অ-পরমাণু শক্তির হাইড্রোজেন বোমাটি তৈরির নেপথ্যে রয়েছে চায়না স্টেট শিপবিল্ডিং কর্পোরেশনের (সিএসএসসি) ৭০৫ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হাত। জলের নীচের হাতিয়ার তৈরিতে সংশ্লিষ্ট গবেষণা সংস্থাটির যথেষ্ট নাম রয়েছে। প্রথম বার সম্পূর্ণ অন্য ধরনের একটি প্রকল্পে কাজ করে সাফল্য পেল তারা।
০৪১৯
প্রথাগত পরমাণু অস্ত্রের সঙ্গে হাই়ড্রোজেন বোমার বেশ ফারাক রয়েছে। সূত্রের খবর, চিনে প্রতিরক্ষা গবেষকেরা পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত বোমায় কঠিন অবস্থার ম্যাগনেশিয়ামভিত্তিক হাইড্রোজেন ব্যবহার করেন। এর বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাগনেশিয়াম হাইড্রাইড। চাপযুক্ত ট্যাঙ্কের চেয়ে এই মাধ্যমে বেশি পরিমাণে হাইড্রোজেন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হন তাঁরা।
০৫১৯
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এক বার সক্রিয় হলে ম্যাগনেশিয়াম হাইড্রাইড বিপুল পরিমাণে তাপ নির্গত করতে থাকে। ফলে হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসের একটি বিরাট অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয় সেটি। হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণের উপর সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। বিশাল এলাকা জুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর ক্ষমতা রয়েছে এটির। অর্থাৎ, একে গণবিধ্বংসী হাতিয়ার বলা যেতেই পারে।
০৬১৯
মান্দারিন ভাষায় প্রকাশিত ‘প্রজেক্টাইল্স, রকেটস, মিসাইল অ্যান্ড গাইডেন্স’ নামের জার্নালে হাইড্রোজেন বোমা সম্পর্কে একাধিক তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। জার্নালটির দাবি, নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষার সময় বোমাটি থেকে মাত্র দু’মিটার দূরে সর্বোচ্চ চাপ ৪২৮.৪৩ কিলোপাস্কালে পৌঁছে যায়। বোমাটি প্রথাগত বহু হাতিয়ারের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী বলে জানিয়েছেন চৈনিক প্রতিরক্ষা গবেষকের দল।
০৭১৯
বিশ্লেষকদের দাবি, হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গেই ছোট ছোট টুকরোয় ভেঙে যায় ম্যাগনেশিয়াম হাইড্রাইড পাউডার। সেগুলি উত্তপ্ত হওয়ায় দ্রুত গতিতে হাইড্রোজেন গ্যাস নির্গত হতে থাকে। এর পর বাতাসের সংস্পর্শে এসে সেগুলি জ্বলে ওঠায় বিস্তীর্ণ এলাকা চলে আসে অগ্নিগোলকের আওতায়। বিস্ফোরণের পর এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগে কয়েক সেকেন্ডেরও কম।
০৮১৯
সাবেক সেনাকর্তারা মনে করেন, হাইড্রোজেন বোমা দু’ভাবে ব্যবহার করতে পারবে পিএলএ। এর সাহায্যে রাস্তার একাংশ, বিদ্যুৎকেন্দ্র বা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে নিমেষে পুড়িয়ে ছাই করার ক্ষমতা থাকছে বেজিঙের লালফৌজের হাতে। ফলে যুদ্ধের সময় এগিয়ে আসতে বা পিছু হটতে গিয়ে সমস্যায় পড়বে শত্রু সৈন্য।
০৯১৯
দ্বিতীয়ত, হাইড্রোজেন বোমার সাহায্যে সুনির্দিষ্ট একটি এলাকাকে পুরোপুরি ধ্বংস করার সুযোগ পাচ্ছে পিএলএ। অত্যাধুনিক উচ্চ শক্তির অস্ত্রটিকে কী ভাবে প্রয়োগ করা হবে, তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, চিনের স্থলবাহিনীর পাশাপাশি বায়ু, নৌ এবং রকেটবাহিনীর অস্ত্রাগারে অচিরেই শোভা পাবে এই ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র।
১০১৯
গত কয়েক বছর ধরেই বাহিনীর আধুনিকীকরণে জোর দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট শি। আর তাই দিন দিন প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি করছে বেজিং। চলতি বছরের মার্চে জাতীয় প্রতিরক্ষার ব্যয়বরাদ্দ ৭.২ শতাংশ বাড়িয়েছে ড্রাগন সরকার। ফলে তা ২৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে পৌঁছে গিয়েছে।
১১১৯
এ বছরের মার্চে চিনা পার্লামেন্ট ‘ন্যাশনাল পিপল্স কংগ্রেস’-এ বাজেটের খসড়া নথি জমা করেন প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং। তাঁর কথায়, ‘‘দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থে পিএলএ প্রশিক্ষণ এবং যুদ্ধ প্রস্তুতি বৃদ্ধি করবে।’’ হাইড্রোজেন বোমা তৈরি তারই অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।
১২১৯
ফৌজি ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সৌর, বায়ু, মহাসাগর এবং হাইড্রোজেনের মতো শক্তির তৈরি হাতিয়ার বাহিনীতে শামিল করতে বরাবরই আগ্রহ দেখিয়ে এসেছে পিএলএ। সম্প্রতি, রণতরীগুলিকে ‘ইন্টিগ্রেটেড ইলেকট্রিক প্রোপালশন’ বা আইইপি প্রযুক্তিতে উন্নত করেছে বেজিং। উদাহরণ হিসাবে টাইপ ০৫৫ রেনহাই ক্লাসের ক্রুজ়ারগুলির কথা বলা যেতে পারে।
১৩১৯
সেনাবাহিনীর পাশাপাশি মহাকাশ গবেষণায় পরিবেশবান্ধব শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির পক্ষপাতী চিন। ২০২৩ সালে ‘ঝুক ২’ নামের একটি রকেটকে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠায় বেজিং। রকেটটিতে জ্বালানি হিসাবে মিথেন গ্যাস ব্যবহার করা হয় বলে দাবি করেন ড্রাগনভূমির জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। সেটিই ছিল তরল মিথেন জ্বালানির প্রথম নভোযান।
১৪১৯
‘এক চিন’ নীতির সমর্থক বেজিং, তাইওয়ানকে পৃথক দেশ হিসাবে মানতে নারাজ। সাবেক ফরমোজ়া দ্বীপটিকে ড্রাগনভূমির অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করে তারা। অন্য দিকে প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটির সমর্থনে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। ফলে দুই মহাশক্তিধরের মধ্যে তীব্র হয়েছে বিবাদ।
১৫১৯
২০২২ সালের অক্টোবর থেকে তাইওয়ানকে ঘিরে মহড়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে চিনা নৌসেনা। দ্বীপরাষ্ট্রটিকে দখল করা থেকে কেউ তাদের বাধা দিতে পারবে না বলে ইতিমধ্যেই হুঙ্কার দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট শি। পাল্টা দ্বীপরাষ্ট্রটিকে সর্বতোভাবে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আমেরিকা।
১৬১৯
তাইওয়ানকে অস্ত্র বিক্রি, সামরিক সাহায্য করা বা কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকে চিনের সার্বভৌমত্বের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে বেজিং। এ ব্যাপারে আমেরিকা ‘অনধিকার চর্চা’ করছে বলে বহু বার সুর চড়িয়েছে ড্রাগন সরকার। কিন্তু, তাতে কাজ না হওয়ায় হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষার মাধ্যমে তাইপে এবং ওয়াশিংটনকে কড়া বার্তা দিল শি-র সরকার ও সেনা, বলছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।
১৭১৯
দক্ষিণ চিন সাগর থেকে শুরু করে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় ‘দাদাগিরি’ চালানোর অভিযোগ রয়েছে পিএলএ নৌসেনার। ফলে ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া থেকে শুরু করে সেখানকার অধিকাংশ দেশের সঙ্গে বেজিঙের সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায়। ড্রাগন ফৌজের হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষায় তাদের যে রাতের ঘুম উড়ল, তা বলাই বাহুল্য।
১৮১৯
গত ২ এপ্রিল নতুন পারস্পরিক শুল্কনীতি ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু চিন তার বিরোধিতা করায় বেজিঙের পণ্যের উপর ২৪৫ শতাংশ কর চাপিয়েছে ওয়াশিংটন। এই বিষয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াই করার হুমকি দিয়েছে জিনপিং সরকার।
১৯১৯
শুল্ক নিয়ে আমেরিকা ও চিনের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে যুদ্ধের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা। সেটা বুঝতে পেরে দু’পক্ষই ভারতকে কাছে টানার মরিয়া চেষ্টা করছে। এই আবহে লালফৌজের হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।