দেশ থেকে যুদ্ধ শুরুর আগে আমদানি করত প্রয়োজনের ১%। এখন বেড়ে হয়েছে ৩৫%। প্রতীকী ছবি।
দেশের খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধি যে নিয়ন্ত্রণে আসেনি, তা স্পষ্ট করে ফেব্রুয়ারিতে তার হার দাঁড়িয়েছে ৬.৪৪%। জানুয়ারির ৬.৫২% থেকে কম। তবে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক নির্ধারিত ৬% সহনসীমার উপরে। ফলে আরও বাড়তে পারে সুদ। এই সিদ্ধান্ত নিতে আরবিআইয়ের ঋণনীতি কমিটি বৈঠকে বসবে ৩ থেকে ৬ এপ্রিল।
পণ্যের চড়া দামে রাশ টানতে গত মে মাস থেকে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক মোট ২৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ (রেপো রেট, যে সুদে তারা ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয়) বাড়িয়েছে। তবু দাম তেমন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সুদ এতটা বাড়ায় আর্থিক বৃদ্ধির হার শ্লথ হচ্ছে। ফলে কমছে কর্মসংস্থান। বাড়ছে বেকারত্বের হার। এই পরিস্থিতিতে অন্য কোনও উপায়ে দাম কমানোর চেষ্টা সে ভাবে চোখে পড়ছে না। অথচ চড়া সুদের জেরে আমেরিকার একাধিক ব্যাঙ্কের আর্থিক সমস্যা সামনে আসতেই পরিষ্কার হয়েছে, এ বার মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরানোর জন্য অন্য উপায় খোঁজা কতটা জরুরি। আমেরিকার থেকে ভারত শিক্ষা নেবে কি না, সেটা বলবে সময়। তবে অন্য পথ খোঁজার প্রসঙ্গে প্রথমেই উঠছে প্রশ্ন, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম নামার পরেও ভারতে পেট্রল-ডিজ়েলের দর কমানো হচ্ছে না কেন?
রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরুর পরে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের (ব্রেন্ট ক্রুড) দাম অনেকটা চড়েছিল, ব্যারেল পিছু ১৩৯ ডলার। এখন তা নেমেছে প্রায় ৭২ ডলারে। রাশিয়া থেকেও অনেক কম দামে বিপুল পরিমাণে তেল কিনছে ভারত। সে দেশ থেকে যুদ্ধ শুরুর আগে আমদানি করত প্রয়োজনের ১%। এখন বেড়ে হয়েছে ৩৫%। প্রশ্ন হল, অশোধিত তেলের খরচ একাধিক পথে এ ভাবে কমার পরেও গত মে মাসের পরে দেশে পেট্রল-ডিজ়েল সস্তা হয়নি। অথচ এগুলির দাম কমলে আরও অনেক পণ্যের দাম কমতে পারে। কিছুটা মাথা নামাতে পারে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি।
ভারত-সহ সারা বিশ্বে ঋণের বর্ধিত সুদ সমস্যায় ফেলছে শিল্প সংস্থাকে। দুর্বল হচ্ছে বহু ব্যাঙ্কও। আমেরিকার সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক এবং সিগনেচার ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়েছে। আরও কয়েকটির আর্থিক সমস্যা প্রকাশ্যে এসেছে। সুদের হার দ্রুত গতিতে মাত্রাতিরিক্ত বাড়লে ব্যাঙ্কের লাভ কমতে পারে ঋণের চাহিদা কমায় এবং আমানতের খরচ বাড়ায়। ঋণের বোঝায় সংস্থা মুখ থুবড়ে পড়লে বাড়তে পারে ব্যাঙ্কগুলির অনুৎপাদক সম্পদও। আগামী সপ্তাহে সুদ নিয়ে বৈঠকে বসবে আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। বিভিন্ন শিল্পের আর্থিক সমস্যা মাথায় রেখে এই দফায় হয়তো খুব চড়া হারে সুদ বাড়াবে না। ভারতেও সুদ না বাড়ানোর সুপারিশ করছে কিছু মহল।
এই অবস্থায় কেন্দ্র কিছুটা স্বস্তিতে ফেব্রুয়ারির পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি ৩.৮৫% হয়ে দু’বছরের তলানি ছোঁয়ায়। আগের বছর একই সময় তা ছিল ১৩.৪৩%। তবে এ বার ওই মাসে ভারতীয় রফতানির ৮.৮% সঙ্কোচন উদ্বেগ বাড়িয়েছে। রফতানি কমায় বাড়ছে টাকার নিরিখে ডলারের দাম। এখন যা ৮২.৫০ টাকার উপরে। সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক (সিভিবি) দেউলিয়া হওয়ায় কেঁপে উঠেছিল গোটা দুনিয়ার শেয়ার বাজার। ৯ মার্চ থেকে টানা পাঁচ দিন সেনসেক্স নামে প্রায় ২৮০০ পয়েন্ট। সিভিবি-র আমানতকারীরা তাঁদের অর্থ ফেরত পাবেন, আমেরিকার এই আশ্বাসে গত বৃহস্পতিবার বাজার একটু চাঙ্গা হয়। যদিও ৫৭,৯৯০ অঙ্কে দাঁড়িয়ে থাকা সেনসেক্স এখন সর্বোচ্চ জায়গা (৬৩,২৮৪) থেকে ৫২৯৪ পিছনে।
বাজার এতটা নামায় কমেছে বেশিরভাগ শেয়ার নির্ভর ফান্ডের ন্যাভ। ব্যাঙ্ক এবং অন্যত্র জমার উপর সুদ বাড়ায় অনেকেই শেয়ার এবং ফান্ডের দুনিয়া থেকে সরছেন স্থির আয়ের প্রকল্পে। পরিস্থিতি যা, তাতে শেয়ার সূচক এখনই হয়তো চাঙ্গা হবে না। অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়লে চড়ে সোনার দাম। শনিবার কলকাতায় ১০ গ্রাম পাকা সোনা ৬০,৪৫০ টাকা ছুঁয়ে নজির গড়েছে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy