ফাইল চিত্র।
আমেরিকা, ইউরোপ, ভারত-সহ গোটা বিশ্বের অন্যতম প্রধান সমস্যা এখন চড়া মূল্যবৃদ্ধি। এ দেশের খুচরো বাজারে সেই হার গত পাঁচ মাস ধরে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক নির্ধারিত সহনসীমার (৬%) উপরে। মে মাসে তা ৭.০৪% ছিল। জিনিসপত্রের লাগামছাড়া দামকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সম্প্রতি শীর্ষ ব্যাঙ্ককে দু’বার রেপো রেট (যে সুদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে স্বল্প মেয়াদে ঋণ দেয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক) বাড়াতে হয়েছে। আশা করা হয়েছিল মূল্যবৃদ্ধির হারকে খানিকটা নামিয়ে আনার জন্য সরকারও এমন কিছু পদক্ষেপ করবে যাতে সাধারণ মানুষের কিছুটা সুরাহা হয়। কিন্তু গত সপ্তাহে উল্টে তারা এমন কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যার ফলে দাম আরও মাথা তুলতে পারে।
কী কী সেই সমস্ত সিদ্ধান্ত?
* মাসের প্রথম সপ্তাহেই গৃহস্থের ব্যবহৃত ১৪.২ কেজি ওজনের এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৫০ টাকা বেড়েছে। কলকাতায় পণ্যটির দাম হয়েছে ১০৭৯ টাকা। এই বর্ধিত খরচের বিরূপ প্রভাব পড়বে মধ্যবিত্ত গৃহস্থের হেঁসেলে। যাঁরা ভাবছেন এই অবস্থায় রান্নার গ্যাস ছেড়ে কেরোসিনের জমানায় ফিরে যাবেন তাঁরা জেনে রাখুন, এই জ্বালানিটিরও দাম এখন পেট্রল-ডিজ়েলের অনেকটাই কাছাকাছি পৌঁছেছে। একটা সময় পর্যন্ত দরিদ্রের রান্নাঘর নির্ভর করে থাকত যে জ্বালানিটির উপর।
* জুলাই থেকে প্যাকেটবন্দি এবং লেবেল সাঁটা বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের উপর জিএসটি বসানো হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে মুড়ি, আটা, ময়দা, পাঁপড়, পনির-সহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য। আশঙ্কা, এই ভাবে কর বৃদ্ধি খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হারকে ০.৩% ঠেলে তুলতে পারে।
* বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার চাহিদা পূরণ করার জন্য কাঁচামালটির আমদানি বাড়ানো হয়েছে। এই খাতে বর্ধিত খরচ সামাল দিতে বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট প্রতি ৬০-৭০ পয়সা বৃদ্ধি যে অবশ্যম্ভাবী, সেই ইঙ্গিত দিয়েই দিয়েছে কেন্দ্র। ফলে কিছু দিনের মধ্যেই হয়তো বিদ্যুতের দামে তার প্রভাব দেখা যাবে।
এই অবস্থায় সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছে, সদ্যই দেশীয় পেট্রোপণ্য উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির অতিরিক্ত মুনাফার উপর নতুন কর চাপানো হয়েছে। এই খাতে চলতি অর্থবর্ষে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা আয় হতে পারে কেন্দ্রের। জিএসটি বাবদ প্রতি মাসে কোষাগারে ১.৪০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ধারাবাহিক ভাবে আসছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, এই চড়া মূল্যবৃদ্ধির বাজারে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষের কাঁধে নতুন করে চাপানো দামের ভার কি এড়ানো যেত না? জিএসটি কিংবা গ্যাসের দাম বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপ কি এখন করতেই হত?
এ বার দেখে নেওয়া যাক অর্থনীতির অন্যান্য কিছু দিক। জুনে ভারতের রফতানি ১৬.৭৮% বেড়ে ৩৭৯৪ কোটি ডলার হলেও আমদানি ৫১.০২% বেড়ে পৌঁছে গিয়েছে ৬৩৫৮ কোটি ডলারে। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫৬৩ কোটি ডলার। টাকার দর মাথা নামিয়ে ডলারের দাম যে এতটা বাড়ছে তার অন্যতম প্রধান কারণ হল, রফতানির পথে যত ডলার আসছে আমদানির কারণে বেরিয়ে যাচ্ছে তার তুলনায় অনেক বেশি। গত সপ্তাহের শেষে খোলা বাজারে ডলারের দাম ছিল ৭৯.৩২ টাকা।
অর্থনীতির পালে তেমন হাওয়া না লাগলেও গত সপ্তাহে শেয়ার বাজার কিন্তু কিছুটা মাথা তুলেছে। পাঁচ দিনের মধ্যে চার দিনই সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। গত সপ্তাহে সেনসেক্স নিট ১৫৭৪ পয়েন্ট বেড়ে পৌঁছেছে ৫৪,৪৮২ অঙ্কে। নিফ্টি ১৬,২২১। আগের মাসের তুলনায় কিছুটা কমলেও জুনে একুইটি ফান্ডে নিট লগ্নি এসেছে ১৫,৪৯৮ কোটি টাকা। মে মাসে ১৮,৫২৯ কোটি টাকা লগ্নি হয়েছিল। দুর্বল শেয়ার বাজারে একুইটি ফান্ডে এতটা লগ্নি ইঙ্গিত দেয় শেয়ার বাজারের প্রতি মানুষের আস্থায় বিশেষ টোল পড়েনি।
গত সপ্তাহে শুরু হয়েছে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকের ফলাফল প্রকাশ। দেশের বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএসের আয় ৪৫,৪১১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫২,৭৬৮ কোটি। ৫.২% বেড়ে নিট মুনাফা পৌঁছেছে ৯৪৭৮ কোটি টাকায়। শেয়ার প্রতি ৮ টাকা অন্তর্বর্তী ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে তারা।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy