—প্রতীকী চিত্র।
বাংলা পথ দেখায়। কিন্তু সেই পথ ধরে এগিয়ে যেতে পারে না— দুর্গাপুজোর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পরেও কি এই ধারণাই জোরালো হবে, প্রশ্ন উঠছে রাজ্য জুড়ে।
খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, এ বছর দুর্গাপুজোয় আনুমানিক ৮০,০০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। কর্মসংস্থান হয়েছে ৩ লক্ষ মানুষের। তথ্য বলছে, বিশ্বের দরবারে কদর বেড়েছে রাজ্যের শিল্পকলা, হস্তশিল্প পণ্যের। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, তার পরেও এই সব কিছুর হাত ধরে যে সৃজনশীল অর্থনীতি (ক্রিয়েটিভ ইকনমি) তৈরির রাস্তা খুলেছে পশ্চিমবঙ্গের সামনে, সেখানে এগিয়ে যেতে সুনির্দিষ্ট নীতি আনার নামগন্ধ নেই। বাংলাকে সাংস্কৃতিক চর্চার পীঠস্থান বলে দাবি করা হলেও, সেখান থেকে আয়ের সুযোগ বাড়িয়ে তাকে অর্থ ব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ করে তোলার দিশা মিলছে না।
আসন্ন বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনে (বিজিবিএস) উদ্ভাবনী অর্থনৈতিক চিন্তার অঙ্গ হিসেবে সিনেমা, যাত্রা, অভিনয়, পুস্তক শিল্প, শিল্পকলা এবং পুজো বিষয়ক কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হবে। বৈঠক বসবে পর্যটন, হোটেল-রেস্তরাঁ শিল্প নিয়েও। “ভবিষ্যতে এই সবই হয়তো সৃজনশীল অর্থনীতিতে উত্তরণের জমি গড়ে দেবে। তৈরি হবে নীতি।’’ বলছেন তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের এক কর্তা। তবে বিষয়টি নিয়ে এত দিনে আরও অগ্রগতি প্রত্যাশিত ছিল, অভিমত সরকারি মহলেরই একাংশের।
এক আধিকারিকের দাবি, “পুজোর জন্য অনুদান, কার্নিভাল আয়োজনে রাজ্য সক্রিয়। এত ক্ষুদ্র বা লোকশিল্প অন্য রাজ্যে নেই। অ্যানিমেশন প্রযুক্তিতেও বাংলা এগিয়ে। এই পটভূমিতে দেশের প্রথম রাজ্য হিসাবে সৃজনশীল অর্থনৈতিক রূপরেখা বা নীতি ঘোষণায় বিজিবিএস আদর্শ মঞ্চ। তাতে নানা শিল্পকলা প্রসারে আন্তর্জাতিক চুক্তি বাংলার ঝুলিতেই আসার সম্ভাবনা।”
জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের পরে কেন্দ্রও সাংস্কৃতিক অর্থনীতিতে আগ্রহী হয়েছে। ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রের কর্তারা এই পরিকল্পনার পাঠ নিয়েছেন। ওড়িশা, রাজস্থান, কেরলেও চর্চায় ক্রিয়েটিভ ইকনমি। প্রাচীন সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের স্থায়ী উন্নয়নে একে চালিকাশক্তি হিসাবে দেখছেন অনেকে। ওড়িশার এক সরকারি কর্তার কথায়, “অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের কিছু শহরের সঙ্গে জোট বেঁধে সৃজনশীল শহর বা জেলা গড়ার কথা চলছে।” রাজ্যে বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, দুর্গাপুজোর সাফল্যের ভিত তৈরি থাকায় এখনই বিষয়টি নিয়ে ঝাঁপালে বাংলা বাড়তি সুবিধা পেত।
২০২১-এ প্রকাশিত ব্রিটিশ কাউন্সিলের রিপোর্ট বলছে, দুর্গাপুজোর মণ্ডপশিল্প থেকে কেনাকাটা, পানভোজন, বিজ্ঞাপনী প্রচার, পত্রপত্রিকা প্রকাশাদির বহর ছিল ৩৩,০০০ কোটি টাকা। বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের হিসাবেও বছরে ৩৫% হারে বাড়ছে পুজো। ২০২১-এ কলকাতার পুজো ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ার পরে ইউনেস্কো কর্তা, ব্রিটেনের শিল্পসংস্কৃতি মন্ত্রী থেকে দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের পণ্ডিতেরা রাজ্যের পুজো এবং সাংস্কৃতিক অর্থনীতির নানা দিক নিয়ে একাধিক বার আলোচনায় বসেছেন। এর ভিত্তিতে পেশাদার সংস্থার সাহায্যে সৃজনশীল আর্থিক বিষয়ক নীতির রূপরেখা তৈরি কষ্টসাধ্য নয় বলেও মত এক সরকারি কর্তার।
তবে পুজোর অর্থনীতি এখনও তত সংগঠিত নয় বলে দাবি দেশ-বিদেশে পুজো বিষয়ক শিল্প প্রসারের এক মঞ্চের কর্ণধার ধ্রুবজ্যোতি বসুর। তিনি বলেন, “ইউনেস্কো কর্তা টিম কার্টিস আমাদের কাছে নিচু তলার মানুষের উপরে পুজোর প্রভাব নিয়ে জানতে চেয়েছেন।” আইএমআরবি-র (ইন্ডিয়ান মার্কেট রিসার্চ ব্যুরো) প্রাক্তনী কয়েক জন বিপণন বিশারদের সাহায্যে এ বার পুজোর বাজার জরিপ করার প্রাথমিক সমীক্ষাও করিয়েছেন তিনি। দেখা গিয়েছে, বড় পুজোয় অখ্যাত বিরিয়ানি বিক্রেতাও ৬-৭ দিনে কয়েক লক্ষ টাকা আয় করছেন। পুর এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের দাবি, “ভারী শিল্পের পাশাপাশি পুজো ঘিরে সাংস্কৃতিক শিল্পও গুরুত্বপূর্ণ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy