—প্রতীকী চিত্র।
স্টেট ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন বৈষ্ণবঘাটা পাটুলির কস্তুরী বসু। অভিযোগ, তাঁকে না জানিয়েই অ্যাকাউন্ট থেকে সরকারি বিমা প্রকল্পের প্রিমিয়ামের টাকা কেটে নিয়েছে ব্যাঙ্ক। ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবার কাটা হয় প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বিমা যোজনার প্রিমিয়াম। ফের মে মাসে টাকা কাটা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বিমা প্রকল্পের জন্য। মোট ৬৮০ টাকা গচ্চা গিয়েছে। পাসবুক আপডেট করতে গিয়ে বিষয়টি ধরা পড়ে। কস্তুরীর প্রশ্ন, ‘‘আমার অজান্তে আমারই নামে বিমা করিয়ে প্রিমিয়ামও কেটে নেওয়া হল, কী ভাবে সম্ভব? বিমার কোনও নথিও দেয়নি।’’
একই অভিযোগ গাঙ্গুলি বাগানের বাসিন্দা শুভজিৎ সরকারের। গতকাল তিনি জানতে পেরেছেন, তাঁর স্টেট ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে ৪৩৬ টাকা কাটা হয়েছে। ব্যাঙ্ক তাঁকে টাকা কাটার কথা জানিয়ে এসএমএস পাঠালেও, কারণ জানায়নি। শুভজিৎ বলেন, তিনি
এখন পুরুলিয়ায়। ব্যাঙ্কের কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে জানতে পারেন, প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বিমার প্রিমিয়াম দিয়েছেন তিনি। ক্ষুব্ধ শুভজিতের অভিযোগ, “একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক গ্রাহকের অনুমতি না নিয়ে কী ভাবে বিমা করাতে পারে! আমার নিজস্ব স্বাস্থ্যবিমা রয়েছে। জীবন জ্যোতির প্রয়োজন নেই। প্রতারণা করছে স্টেট ব্যাঙ্ক। এই হেনস্থার জন্য ওদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে যাব।’’
শুধু কস্তুরী বা শুভজিৎ নন, দেশের বৃহত্তম আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এই ধরনের প্রতারণার আরও অভিযোগ এসেছে বলে খবর। জানা গিয়েছে, আরও বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে এমন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের এক কর্মীই জানান, অটল বিমা, প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বিমা, প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বিমার মতো কেন্দ্রের প্রকল্পগুলি বিক্রির জন্য উপর মহলের চাপ রয়েছে। ব্যাঙ্কের কর্তারা শাখাগুলিকে সেগুলি বিক্রির লক্ষ্য বা টার্গেট বেঁধে দিচ্ছেন। ফলে তা পূরণ করতে গ্রাহককে না জানিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়ার মতো বেআইনি কাজে শামিল হচ্ছে একাংশ।
স্টেট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপার যোগাযোগ করা হলে, তাঁরা সাম্প্রতিক কালের এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। যদিও অতীতে যে এমন ঘটনা ঘটেছিল, তা কার্যত মেনে নেন। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, “ব্যাঙ্ক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওই ভাবে টাকা না কাটার নির্দেশ আগেই দিয়েছে। তা সত্ত্বেও অভিযোগ এলে, তা খতিয়ে দেখে সুরাহা করা হবে।’’ তবে এই প্রসঙ্গে ব্যাঙ্ক কর্মীদের সংগঠন ন্যাশনালাইজ়ড ব্যাঙ্ক অফিসার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দাস ও ব্যাঙ্ক বাঁচাও দেশ বাঁচাও মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক সৌম্য দত্ত বলেন, “বিজ্ঞপ্তি আছে ঠিকই। অতীতে এমন কিছু অভিযোগ ওঠার পরে তড়িঘড়ি জারি করে এসবিআই। কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর করা হচ্ছে না। সরকারি বিমা প্রকল্প বিক্রির জন্য লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মীকে। গ্রাহককে না জানিয়ে অন্যায় ভাবে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে তাঁকে সরকারি বিমার গ্রাহক দেখানো হচ্ছে। এই অনিয়মের বিরুদ্ধে আগেও প্রতিবাদ জানিয়েছি। কিন্তু ফল হয়নি।’’ সৌম্যবাবু বলেন, “রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরকেও বিষয়টি জানিয়েছি। এটা বন্ধ করতে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’
কস্তুরী বলেন, “এত দিন জানতাম ব্যাঙ্কে তৃতীয় পক্ষ প্রতারণা করে। এখন তো দেখছি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষই ওই কাজ করছেন। আমি টাকা কাটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে লিখিত অভিযোগ জানাতে ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের ঘরে সরকারি বিমা বিক্রির জন্য পাওয়া ট্রফি শোভা পাচ্ছে। কী ভাবে সেগুলি জেতা হল এখন বুঝতে পারছি।’’ কস্তুরী, শুভজিৎ-সহ সংশ্লিষ্ট সকলেই বলছেন, স্টেট ব্যাঙ্কের সমস্ত গ্রাহকের পাসবুক খতিয়ে দেখা উচিত। অনেকেই খেয়াল
করলে হয়তো দেখবেন এমন অনিয়মের শিকার হয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy