ফাইল চিত্র।
এখনই লাগাম টানতে হবে। কোনও ভাবেই বেআইনি মজুতদারি ও কালোবাজারি করতে দেওয়া যাবে না— কালীপুজো-দীপাবলির সময় সর্ষের তেল-সহ সমস্ত ভোজ্য তেলের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কায় আজ মোদী সরকার ফের এ ভাবেই রাজ্যগুলিকে সক্রিয় হতে বলল। কিছু দিন আগেও অবশ্য দাম বাড়ার বিষয়টি অন্তত মুখে স্বীকার করতে নারাজ ছিল তারা। বরং আশ্বাস দিয়েছিল, দাম ক্রমশ কমে আসবে। তবে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সরকারের তরফে এই দাবিও করা হয়, দেশে তা চড়া ঠিকই, কিন্তু বিশ্ব বাজারের তুলনায় কম।
কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কলকাতায় সোমবার সর্ষের তেলের গড় দাম ছিল লিটার প্রতি ১৯০ টাকা। শিলিগুড়িতে তা ১৯৫ টাকা। যেখানে এক বছর আগে ঠিক এই দিনেই ওই তেল বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকায়। কেন্দ্র মুখে যা-ই বলুক উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ে যাওয়ার পরে এমন দরে যে অস্বস্তি বাড়ছে, সেটা তাদের পদক্ষেপে স্পষ্ট। যে কারণে কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রক গত সপ্তাহেও রাজ্যগুলিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল, দীপাবলির সময় দাম আরও বাড়তে পারে। অবিলম্বে মজুতদারিতে রাশ টানতে হবে। আজ সেই আশঙ্কা থেকেই সব রাজ্যের খাদ্য ও গণবন্টন দফতরের সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন খাদ্য মন্ত্রকের কর্তারা।
মন্ত্রকের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশ সরকার ইতিমধ্যেই সর্ষের তেল এবং ভোজ্য তেল মজুতের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বসীমা জারি করেছে। আজকের বৈঠকে উপস্থিত ২৩টি রাজ্যের মধ্যে ১৭টির তরফে জানানো হয়েছে, তারাও সর্ষের তেল মজুত করার সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দিয়েছে। কেন্দ্রের বলেছে, দীপাবলির সময় চাহিদা বাড়বে। ফলে দাম আরও বাড়তে পারে। তারা নিজেরাই তাই গত ১০ অক্টোবর ভোজ্য তেলের ব্যবসায়ীদের মজুতের উপরে ঊর্ধ্বসীমা বসানোর নির্দেশ দিয়েছিল। কোন রাজ্য কতখানি তেল জমা করার নির্দেশ দেবে সেই সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে তাঁদের বর্তমান ভাঁড়ার এবং কেনাকাটার উপরে। আজকের বৈঠকে কেন্দ্র তাদের জানিয়েছে, ব্যবসায়ী, মজুতদারদের জন্য সেই সীমা বেঁধে দ্রুত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হোক।
ভোজ্য তেলের দাম কমাতে মোদী সরকার এর আগে পাম, সোয়াবিন তেলের আমদানির উপরে শুল্ক কমিয়েছিল। খাদ্যসচিব সুধাংশু পাণ্ডের যুক্তি, আমদানি করা পাম, সোয়াবিনের দাম বাড়ছে বলেই সর্ষের তেলের দাম বাড়ছে। কিন্তু কেন্দ্রের চিন্তা হল, আমদানি শুল্ক কমানো হলেও বাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমছে না। এ দিনের বৈঠকে রাজ্যগুলিকে এ বিষয়েও পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। যাতে আমদানি শুল্ক ছাঁটাইয়ের সুরাহা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে।
সম্প্রতি আর্থিক উপদেষ্টা সংস্থা নোমুরা এক রিপোর্ট দিয়েছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যবৃদ্ধির হার ১ শতাংশ বিন্দু পর্যন্ত বাড়তে পারে। কেন্দ্রের বক্তব্য, ভোজ্য তেলের দাম কমলে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির মাত্রাও কমবে। যার ফলে সামগ্রিক ভাবে কমবে মূল্যবৃদ্ধির হার।
বিরোধীরা অবশ্য প্রায় নিয়মিত কেন্দ্রকে মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, পেট্রল-ডিজ়েলের দাম সেঞ্চুরি করে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে সর্ষের তেল-সহ বিভিন্ন ভোজ্য তেলের দরও ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে। পেঁয়াজের দাম হাফ সেঞ্চুরি (প্রতি কিলোগ্রাম ৫০ টাকা) পার। তার সঙ্গে এ বার ডালের দরও বাড়তে শুরু করেছে। প্রতি সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের কর্তাদের বৈঠক বসছে। রাজ্যগুলির সঙ্গেও নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। কিন্তু বাজারে দাম কমার বিশেষ লক্ষণ নেই। বরং সামনে দীপাবলির মরসুমে পেঁয়াজ, ডাল, থেকে সর্ষের তেল— সবেরই দাম ফের বৃদ্ধির আশঙ্কা। বিরোধীরা বলছেন, দরের ছেঁকায় ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ, আনাজ কোনও কিছুই ছোঁয়া দায়। তার উপরে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার হাজার টাকা ছুঁইছুঁই। সাধারণ মানুষ তা হলে খাবেন কী? যাতায়াতের খরচও এত চড়া যে সাধারণ রোজগেরেদের বাড়ি থেকে বেরোনোও কঠিন হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy