নোট বাতিলের জেরে গত নভেম্বরেই জোরালো ধাক্কা খেয়েছিল দেশের গাড়ি শিল্প। এ বার তা আরও বেশি টের পাওয়া গেল পরের মাস, অর্থাৎ ডিসেম্বরের বিক্রির হিসাবে। যেখানে ১৬ বছরের তলানিতে নেমে গিয়েছে সামগ্রিক গাড়ি বিক্রি। গত ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় তা নেমে গিয়েছে ১৮.৬৬%।
মঙ্গলবার গাড়ি সংস্থাগুলির সংগঠন সিয়াম জানিয়েছে, ডিসেম্বরে যাত্রী গাড়ি, স্কুটার, মোটরসাইকেল-সহ প্রায় সব কিছুর বিক্রিই মার খেয়েছে। যার জন্য দায়ী মূলত গাড়ি কেনার চাহিদায় ভাটা পড়া। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২,০০০ সালের ডিসেম্বরের পরে বিক্রি এতখানি পড়েনি। সে বার ওই হার ছিল ২১.৮১%।
সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, প্রধানমন্ত্রী পাঁচশো, হাজারের নোট বাতিল করার পরে নগদের টানাটানিতে জেরবার সকলেই। ফলে যদিও গাড়ি মূলত ঋণ নিয়েই কেনেন বেশির ভাগ মানুষ, তবুও খুঁটিনাটি খরচ চালানোর মাথাব্যথা নিয়ে তা কেনার কথা ভাবার অবস্থাতেই নেই প্রায় কেউ। আর এই নেতিবাচক মনোভাবের প্রকাশই গাড়ি বিক্রির হিসাবে পরিষ্কার বলে মনে করছে সিয়াম।
সিয়ামের পরিসংখ্যান অনুসারে, ডিসেম্বরে দেশে যাত্রী গাড়ির বিক্রি কমেছে ৮.১৪%। দাঁড়িয়েছে ১,৫৮,৬১৭। তবে সবচেয়ে বেশি ভুগেছে দু’চাকার গাড়ি। এগুলির বিক্রি ২২.০৪% কমে হয়েছে ৯,১০,২৩৫। ১৯৯৭ সালে সিয়াম পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে শুরু করার পর থেকে এত বেশি পড়তে দেখা যায়নি এগুলির বিক্রি। শুধু মোটরসাইকেলই গত আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বিক্রি হয়েছে এ বার। তবে এরই মধ্যে একমাত্র আশার রুপোলি রেখা দেখিয়েছে হাল্কা বাণিজ্যিক গাড়ি। এগুলির বিক্রি ১.১৫% বেড়ে হয়েছে ৩১,১৭৮টি।
সিয়ামের ডিরেক্টর জেনারেল বিষ্ণু মাথুরের দাবি, ‘‘দু’চাকার গাড়ির বেশির ভাগটাই বিক্রি হয় গাঁ-গঞ্জে। নোট বাতিলের জেরে যেখানকার অর্থনীতি বিরাট ধাক্কা খেয়েছে। আর তার ফলেই কপাল পুড়েছে গাড়ি শিল্পের।’’
যদিও বিক্রির এই মলিন ছবিটাকে সাময়িক বলেই মনে করছেন মাথুর। তাঁর মতে, ভাল বর্ষা ও সপ্তম বেতন কমিশনের সুফল এখনও পায়নি গাড়ি শিল্প। এই অবস্থায় আগামী দিনে গাড়ি বিক্রি কতটা বাড়বে, তা নির্ভর করছে বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর। এর মধ্যে প্রথমে আছে বাজেট। যে দিকে তাকিয়ে প্রায় সকলেই। ক্রেতা-চাহিদাকে চাঙ্গা করার জন্য সেখানে কী পদক্ষেপ করেন অর্থমন্ত্রী, সেটা দেখে নেওয়ার জন্যই গাড়ি কেনার পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত রেখেছেন অনেকে। দ্বিতীয়টি হল, খরচ করার জন্য ক্রেতাদের হাতে থাকা আয় আরও বাড়া। এবং তৃতীয়, সার্বিক ভাবে অর্থনীতির উন্নতি।
অনিশ্চয়তার কারণেই ডিসেম্বরে যত গাড়ি বিক্রি হয়েছে, তার বেশির ভাগটাই ছাড়ের উপর নির্ভরশীল ছিল বলে দাবি জানান মাথুর। সিয়াম মনে করছে এই সব শর্ত পূরণ হলে, তবেই আগামী দিনে বাড়তে পারে বিক্রি। আর না-হলে বিক্রি আরও কমলে ছোঁয়া যাবে না চলতি অর্থবর্ষে গাড়ি বিক্রির পূর্বাভাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy