মোদীর গুজরাতের মতো এ বার আদানিদের বিনিয়োগের পাখির চোখ কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য? ফাইল চিত্র।
প্রথমে রাজ্যের ভোজ্য তেল শিল্পে বিনিয়োগ। তার পরে তাজপুরে সমুদ্র বন্দর তৈরির দৌড়ে সম্ভাব্য লগ্নিকারী হিসেবে ভেসে ওঠে নাম। বর্ধমানের চালকল কেনার কথাও প্রকাশ্যে আসে। লজিস্টিক্স হাব তৈরিতে গোষ্ঠীর বিনিয়োগ সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে। আর এ বার ভারতমালা প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজেও সেই আদানি গোষ্ঠী। এমন নয় যে, রাজ্য তাদের এই দায়িত্ব দিয়েছে। কারণ, এটা কেন্দ্রের বরাত। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের ডাকা দরপত্রে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হয়েছে আদানিরা। কিন্তু রাজ্যের রাজনীতিতে তুফান এই জল্পনায়, যে গৌতম আদানিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ তকমা দেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী-সহ বিরোধীরা, আসন্ন বেঙ্গল গ্লোবাল বিজ়নেস সামিটে (বিজিবিএস) কি তাঁর গোষ্ঠীর ঝুলি থেকেই বেরোতে চলেছে আরও লগ্নি! মোদীর গুজরাতের মতো এ বার তাঁদের বিনিয়োগের পাখির চোখ কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য?
মুম্বইয়ে গত শিল্প সফরের পরেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নবান্নে গৌতম আদানির সাক্ষাৎ শিল্পমহলে জল্পনা বাড়িয়েছিল। তাজপুর বন্দরের জন্য আগ্রহপত্র প্রকাশের পরে গৌতম-পুত্র কর্ণ আদানি মমতার সঙ্গে দেখা করায় তা জোরালো হয়। রাজ্য শিল্প সম্মেলনের মুখে দাঁড়িয়ে সেই চর্চা কার্যত তুঙ্গে তাঁদের সড়ক পরিকাঠামোয় লগ্নির সূত্রে।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, পশ্চিমবঙ্গের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে বিজেপি-র আর এক ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি হিসেবে পরিচিত রিলায়্যান্স কর্তা মুকেশ অম্বানীও এসেছেন বিজিবিএসে। ঘোষণাও করেছেন কিছু। এই দফায় তাই আদানি থাকতেই পারেন। যিনি হালে তাঁর ব্যবসা ছড়াচ্ছেন ভারত জুড়ে। ইতিমধ্যেই অর্জন করেছেন এশিয়ার অন্যতম ধনী শিল্পপতির তকমা। শিল্প এবং প্রশাসনিক মহলের দাবি, আদানিরা বাংলায় লগ্নি করলে আখেরে লাভ রাজ্যেরই। তৈরি হবে কর্মসংস্থান। উজ্জ্বল হবে ভাবমূর্তি।
সূত্রের খবর, ভারতমালা প্রকল্পে সম্প্রসারণের কাজ হবে দেশের প্রায় ৩৫,০০০ কিলোমিটার জাতীয় সড়কে। এ রাজ্যের ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের আওতায় পানাগড় থেকে পালশিট প্রায় ৬৮ কিমি এবং পালশিট থেকে ডানকুনি প্রায় ৬৪ কিমি সড়ক বেড়ে ছ’লেনের হবে। এরই বড় অংশের দায়িত্বে আদানি গোষ্ঠী। প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, “দেশের অন্যতম বড় শিল্প গোষ্ঠীগুলি পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে আগ্রহ দেখালে রাজ্যের শিল্পমুখী ভাবমূর্তি অনেকটাই তুলে ধরা সম্ভব।”
তবে বরাবর মোদীর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি হিসেবে আদানিকে তুলে ধরেন বিজেপি বিরোধীরা। এ বার তাঁর গোষ্ঠীর সঙ্গে রাজ্য সরকারের যোগাযোগ প্রসঙ্গে কার্যত কটাক্ষ ছুড়ে দিচ্ছে বিজেপি। রাজ্যে দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, “যে যার দিকে খুশি ঝুঁকতে পারে। রাজ্যে শিল্পায়ন হোক আমরাও চাই। কিন্তু এখানে শিল্পনীতি, জমিনীতি, আইনশৃঙ্খলা কিছুই নেই। বর্তমান সরকারের আমলে তাই শিল্পায়ন হওয়া সম্ভব নয়।” জবাবে অর্থ দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের পাল্টা, “সব কিছু রাজনীতির চশমায় দেখা ঠিক নয়। ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্পে দেশের মোট ব্যবসায় রাজ্যের অবদান ১৪%। স্পষ্ট শিল্প এবং জমি নীতি রয়েছে। তাঁরা ব্যবসায়ী। এখানে বিনিয়োগের উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে বলেই এগিয়ে আসছেন। তাতে বিরোধীরা জ্বলছেন কেন? রাজনৈতিক ভাবে খারাপ ছবি তৈরির চেষ্টা চলছে।”
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, জাতীয় সড়ক ১৯ ছ’লেন হওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট পরিকাঠামোগুলিরও উন্নতি হবে। ফলে কলকাতা থেকে দিল্লি অভিমুখে যে কোনও গন্তব্যে সড়ক পথে পৌঁছনো যাবে আরও সহজে। শিল্প সম্মেলনের আগে এমন বার্তা জরুরি ছিল। কারণ, শিল্পপতি বা বিনিয়োগকারীরা আগে যোগাযোগ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। চুলচেরা হিসেব করেন পরিকাঠামো ক্ষেত্রে উন্নয়নের। তবে আদানিরা সব হিসাব আগে থেকেই কষে রেখেছেন কি না, তা স্পষ্ট হবে সম্মেলনের মঞ্চে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy