আমরা এখন অর্থবর্ষের অন্তিমলগ্নে। ২০২৩-২৪ শেষ হতে আর মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি। কর সংক্রান্ত কোনও কাজ বাকি থাকলে, শেষের এই মাসে সারতেই হবে। না হলে অনেক ক্ষেত্রে গুনতে হবে মাসুল। এক নজরে দেখে নেব, নিশ্চিন্ত মনে নতুন অর্থবর্ষে পা রাখার জন্য চলতি মার্চের মধ্যে কোন কোন কাজ সারা জরুরি—
- নতুন কর কাঠামোই এখন প্রধান। পুরনোটি হয়েছে বিকল্প। কেউ চাইলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে করছাড়ের প্রচুর সুবিধা যুক্ত পুরনো কাঠামো অনুযায়ী কর মেটাতে পারেন। আবার প্রায় ছাড়ের সুবিধাবিহীন কম হারে আয়করের নতুন কাঠামোয় নাম লেখানোর সুযোগও খোলা। হিসাব করে দেখে নিতে হবে, কোনটি বেশি লাভজনক। এখনও জানানো না হয়ে থাকলে, অবিলম্বে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা নিয়োগকর্তাকে জানাতে হবে। মার্চের বেতন থেকে কর কাটা হবে সেই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে।
- যাঁরা পুরনো কাঠামোয় থাকতে চান, কর ছাড়ের সুবিধা নেওয়ার কাজে মন দিতে হবে। দ্রুত লগ্নি সারতে হবে কর সাশ্রয়কারী এক বা একাধিক প্রকল্পে। যে সব খরচের মাধ্যমে কর বাঁচানো যায়, তা-ও মিটিয়ে ফেলতে হবে ৩১ মার্চের মধ্যে। যেমন, স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম দেওয়ার মতো বিষয়।
- বকেয়া অগ্রিম কর জমা করতে হবে ১৫ মার্চের মধ্যে। চাকরি ছাড়া অন্যান্য সূত্রে আয় হলে, তার উপর আনুমানিক কর ১০,০০০ টাকা ছাড়ালে অগ্রিম কর জমা দিতে হয় চারটি কিস্তিতে। ১৫ জুন, ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৫ ডিসেম্বর এবং ১৫ মার্চ। কিস্তি বাদ পড়লে তার উপরে সুদ বাবদ মাসুল গুনতে হবে। যে কিস্তিতে কর জমা করতে হয়, তা হল ১৫%, ৪৫%, ৭৫% এবং ১০০%। চাকুরিজীবীদের ক্ষেত্রে কর বেতন থেকে কেটে নেওয়া যায় বলে তাঁদের আগাম দিতে হয় না, যদি না অন্য সূত্র থেকে করযোগ্য আয় থাকে।
- শেয়ার এবং শেয়ার ভিত্তিক ফান্ড এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে রেখে বিক্রি করে লাভ হলে, তাতে দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভকর দিতে হয়। তবে এই লাভের প্রথম ১ লক্ষ টাকা থাকে করমুক্ত। এর বেশি হলে কর ১০%। লগ্নিকারীরা মার্চের মধ্যে কিছুটা বেচে করমুক্ত ১ লক্ষ টাকার সুবিধা নিতে পারেন।
- পিপিএফে বছরে সর্বাধিক ১.৫ লক্ষ টাকা জমা করা যায়। চলতি অর্থবর্ষে তা এখনও করা না হয়ে থাকলে, মার্চের মধ্যে করার কথা ভাবতে পারেন। এই জমার উপরে পুরনো কাঠামোয় ৮০সি ধারায় কর ছাড় মেলে। তা ছাড়া এই স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে সুদ ৭.১%, এটিও করমুক্ত।
- ব্যাঙ্কের পাসবই অথবা অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট ভাল করে পরীক্ষা করে দেখে বুঝতে হবে এই বছরে প্রাপ্য সব সুদ, ডিভিডেন্ড (কোম্পানির শেয়ারের লভ্যাংশ) ইত্যাদি সময়মতো জমা পড়েছে কি না। যদি কোনওটা জমা না হয়ে থাকে, তা হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থায় চিঠি লিখে বিষয়টি জানাতে হবে।
- বিমার প্রিমিয়াম, ঋণের কিস্তি ইত্যাদি বাকি থাকলে অর্থবর্ষ শেষ হওয়ার আগেই তা মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা জরুরি।
- ব্যাঙ্ক, ফান্ড, ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি জায়গায় এখনও নমিনি হিসেবে কারও নাম না দেওয়া হয়ে থাকলে, কাজটা অবিলম্বে সেরে ফেলা দরকার। যেখানে প্রয়োজন, সেখানে কেওয়াইসি সংক্রান্ত নথি জমা করে সব রকমের অ্যাকাউন্ট চালু থাকার ব্যাপারেও নিশ্চিন্ত হওয়া প্রয়োজন।
(মতামত ব্যক্তিগত)
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)