খাদ্য নয় এমন খাতে গ্রামে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে যাতায়াতের খরচ। —প্রতীকী চিত্র।
মূল্যবৃদ্ধির চাপে পড়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত আমজনতার। অত্যাবশ্যক পণ্য কিনতেই বেরিয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ টাকা। এই অবস্থায় সম্প্রতি প্রকাশিত স্টেট ব্যাঙ্কের সমীক্ষায় দাবি, ১২ বছর আগের তুলনায় এখন মানুষ খাদ্যপণ্যের পিছনে খরচ করছেন কম। বরং ব্যয় বেড়েছে খাবার নয় এমন সমস্ত পণ্যের পিছনে। শুধু তা-ই নয়। শহরে আগেও খাবারের চেয়ে অন্যান্য পণ্যে খরচ বেশি হত, এখনও তা-ই হচ্ছে। কিন্তু গ্রামে ছবিটা উল্টো। সেখানে খাবার বাদে অন্যান্য জিনিসের চাহিদা মাথা তুলেছে, ফলে সেগুলির খরচ ঊর্ধ্বমুখী। এই ছবিকে বদলে যাওয়া সময়ের সঙ্গে মানুষের পছন্দের পরিবর্তন হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। একই সঙ্গে জানাচ্ছেন, চাল-ডাল-গম-তেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পিছনে খরচ কমা আদতে চিন্তার বিষয়।
স্টেট ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ২০১১-১২ সালে গ্রাম ও শহরে খাদ্যপণ্যের পিছনে একটি পরিবার মাসে খরচ করত যথাক্রমে ৫২.৯% ও ৪২.৬২%। প্রায় ১২ বছর বাদে তা কমে হয়েছে যথাক্রমে ৪৭.০৪% ও ৩৯.৬৮%। উল্টে দু’জায়গাতেই বেড়েছে খাবার নয়, এমন পণ্যের খরচ। ২০১১-১২ সালে গ্রাম ও শহরে তা ছিল যথাক্রমে ৪৭% এবং ৫৭.৩৮%। এখন হয়েছে প্রায় ৫৩% ও ৬০.৩২%। তবে শেষ ১২ বছরে গ্রাম ও শহরাঞ্চলে দারিদ্রসীমার নীচে থাকা মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বলেও দাবি করেছে সমীক্ষা। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক রিপোর্টের সুরেই জানানো হয়েছে, দেশবাসীর আর্থিক হাল উন্নত হয়েছে। কমেছে শহর ও গ্রামের মধ্যে মাসিক খরচের ফারাক।
অর্থনীতিবিদদের একাংশের বক্তব্য, খরচের ধারা থেকে স্পষ্ট শহরে মানুষের চাহিদা-পছন্দ আগের মতোই রয়েছে। কিন্তু গ্রামে চাহিদা ও খরচের প্রবণতা বদলেছে। সমীক্ষা বলছে, এই সময়ের খাদ্যের মধ্যে খরচ সবচেয়ে বেশি কমেছে চাল, গমে। গ্রামে ১০.৬৯% থেকে নেমেছে ৪.৯৭ শতাংশে। শহরে ৬.৬% থেকে ৩.৭৫%। ডাল, মশলা, চিনি, নুন ও ভোজ্য তেলের পিছনে গ্রামে খরচ কমেছে প্রায় ১ শতাংশ বিন্দু। শহরে খানিকটা কম। তবে খরচ সবচেয়ে বেড়েছে পানীয় ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের। গ্রামে প্রায় ২ শতাংশ বিন্দু, শহরে ২.১১ শতাংশ বিন্দু।
পাশাপাশি, খাদ্য নয় এমন খাতে গ্রামে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে যাতায়াতের খরচ। ১২ বছরে বৃদ্ধি ৩.৪ শতাংশ বিন্দু। আর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যয় কমেছে সবচেয়ে বেশি। শহরে তা যথাক্রমে প্রায় ২ শতাংশ বিন্দু এবং ১.১ শতাংশ বিন্দু। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, গ্রাম ও শহরে এই প্রবণতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, খাদ্যপণ্যের দাম চড়া মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও চাল, ডাল, গম, তেলের খরচ এতটা কমা চিন্তার বিষয়। অন্য দিকে, জামাজুতো বা জ্বালানি খরচ কমাও নেতিবাচক। যা প্রমাণ করে মানুষ সেগুলির পিছনে যতটা সম্ভব কম ব্যয় করছেন। চড়া মূল্যবৃদ্ধিকেই এ জন্য কিছুটা দায়ী করছে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
অর্থনীতিবিদ অজিতাভ রায়চৌধুরী অবশ্য বলেন, “এই প্রবণতা নতুন নয়। এ থেকে স্পষ্ট মানুষের খাদ্যাভ্যাস বদলাচ্ছে। কারণ, কাজের ধরন বদলানোয় এখন ভাত-রুটির জায়গা নিচ্ছে তৈরি খাবার। ফলে তাতে বেশি খরচ হচ্ছে।’’ অপর অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের বক্তব্য, “এটাই অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়ম। এর মানে দেশের অগ্রগতি হচ্ছে। কারণ, আয় যত বাড়ে, খাবার খরচ তত কমে। একেই অর্থনীতির ভাষায় অ্যাঙ্গেলস ল বলে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy