আজ প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন নরেন্দ্র মোদী। অর্থনীতির হাল ভুলে অতি আনন্দিত শেয়ার বাজার, যা শুক্রবারই ফের নতুন নজির গড়েছে। এ বার সূচকের চোখ কে কোন দফতর পাচ্ছে তার উপর। বিশেষ করে, বাজার অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রয়েছে অর্থ মন্ত্রকের দিকে। অর্থাৎ অর্থমন্ত্রীর পদে যিনিই আসুন না কেন, তার বড় প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা বাজারে। পাশাপাশি, মোদীর প্রথম এবং প্রধান কর্মসূচি কী হয়, সেটাও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখনও পর্যন্ত দেওয়া মোদীর সাক্ষাৎকার মনে ধরেছে বাজারের। তবে সে তো মসনদে বসার আগে। প্রধানমন্ত্রীর আসন গ্রহণ করার পর তাঁর চিন্তা-ভাবনা কোন খাতে বইছে, তা জানার জন্য অপেক্ষা করছে শিল্প, ব্যবসা, শেয়ার বাজার-সহ সকলেই। অর্থাৎ সব মিলিয়ে সোমবারও বেশ উত্তাল থাকারই সম্ভাবনা সূচকের।
১৬ তারিখ নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর থেকে তেতে আছে শেয়ার বাজার। এই তপ্ত বাজারে নতুন করে ঘি পড়ে শুক্রবার। সেনসেক্স ৩১৯ পয়েন্ট বেড়ে থামে সর্বকালীন উচ্চতায় (২৪,৬৯৩ পয়েন্ট)। ৯১ অঙ্ক বেড়ে নিফ্টি স্পর্শ করে ৭৩৬৭ পয়েন্ট। লাভ কমলেও স্টেট ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদ (এনপিএ) কমার খবর অতিরিক্ত শক্তি জোগায় বাজারকে, বিশেষ করে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শেয়ারকে। ব্যাঙ্কটির মুনাফা কমে গেলেও তা বাজারের আশঙ্কার তুলনায় ভাল হওয়ায় খুশি হন লগ্নিকারীরা। ফলে ফলাফল ঘোষণার পর স্টেট ব্যাঙ্কের শেয়ার দর ৯.৬৯ শতাংশ বেড়ে পৌঁছয় ২৭৫৫ টাকায়। এর প্রভাবে ভাল রকম বাড়ে অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শেয়ারও। স্টেট ব্যাঙ্ক ৩০০ শতাংশ অর্থাৎ প্রতিটি ১০ টাকার শেয়ারে ৩০ টাকা ডিভিডেন্ড সুপারিশ করেছে।
একই দিনে ফলাফল প্রকাশ করে অগ্রণী এফএমসিজি সংস্থা আইটিসি। নিট লাভ ১৮ শতাংশ বাড়লেও সংস্থাটির শেয়ারের দাম এই তেজি বাজারেও একদম বাড়েনি। এ বারের ‘বুল্ রানে’ যোগদান করেনি এফএমসিজি, তথ্যপ্রযুক্তি এবং ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি। বড় শেয়ারগুলি মাঝে মধ্যে থমকে দাঁড়ালেও ম্যারাথন ‘বুল্ রান’ চলছে মাঝারি এবং ছোট শেয়ারের দুনিয়ায়। অর্থাৎ এটি একটি বড় সুযোগ বহু দিন ঝুলিতে পড়ে থাকা খারাপ শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে আসার।
কেন্দ্রে পরিবর্তনের আশায় শেয়ার বাজার বাড়তে শুরু করেছিল গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে। কমবেশি ৮ মাসে বাজার উঠেছে ২৫ শতাংশেরও বেশি। এই উত্থান কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়েও চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছেন অনেকে। এই মেয়াদে অর্থনীতির কিন্তু তেমন কোনও উত্থান হয়নি। শিল্প থমকে আছে, বাগে আনা যায়নি মূল্যবৃদ্ধিকে। সুদের হার মোটেও অনুকূল নয়। এর মধ্যে চলতি খাতে ঘাটতি (ক্যাড) কমে আসাটাই একমাত্র যা ভাল খবর। বর্তমান জায়গায় দাঁড়িয়ে এই বাজারে নতুন করে লগ্নি করার ক্ষেত্রে কিন্তু ঝুঁকি থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। আসলে এ ধরনের ভুল ছোট লগ্নিকারীরা বেশির ভাগ সময়েই করে থাকেন। তলিয়ে যাওয়া বাজারে এঁরা মোটেও লগ্নি করেন না। বাজার অতি তপ্ত হয়ে ওঠার পরেই চড়া দামে লগ্নি শুরু করেন এবং ফাঁদে পা দেন। বরং এই বাজারে এসআইপি পদ্ধতিতে লগ্নি করলে ঝুঁকি কম থাকে।
একনাগাড়ে বিদেশি লগ্নিই বাজারের এত বড় উত্থানের অন্যতম প্রধান কারণ। এই পথে ডলার প্রবাহ চলতে থাকায় টাকার দাম অনেকটাই বেড়েছে। ডলারের দর নেমেছে ৫৮ টাকার ঘরে। এতে বিশেষ ভাবে উপকৃত হবে আমদানি নির্ভর শিল্প। অন্য দিকে আয় কমবে তথ্যপ্রযুক্তির মতো রফতানি নির্ভর শিল্পে। ডলার নামায় অনেকটাই দাম কমেছে পাকা এবং গয়নার সোনায় (২২ ক্যারেট)। হলমার্ক যুক্ত গয়নার সোনার দাম গত শনিবার নেমে এসেছে ২৭,১৪৫ টাকায়। হলমার্ক না থাকলে দাম ২৬ হাজারের ঘরে। অর্থাৎ গয়নায় লগ্নির জন্য সময়টা মন্দ নয়। ঝুঁকিও নেই শেয়ার বাজারের মতো। সুতরাং কিছু শেয়ার বিক্রি করে গোল্ড ই টি এফ কেনার কথা ভাবা যেতে পারে এই বাজারে। বাজারে পড়ে থাকা লাভকে সোনায় রূপান্তর করা কিন্তু মন্দ ভাবনা নয়। লাভের টাকা রাখা যেতে পারে এফ এম পি অথবা শর্ট টার্ম বন্ড ফান্ডেও।
সম্প্রতি করা একটি সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগ ব্রোকার মনে করছেন এই বুল্ রান চলবে। কিন্তু সাবধানীরা সতর্ক হয়ে চলারই পরামর্শ দিচ্ছেন এই চড়া বাজারে। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে স্থির আয়যুক্ত প্রকল্প, সোনা অথবা স্থাবর সম্পত্তিতে লগ্নি করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে মনে করছেন এই শ্রেণির মানুষ। তবে সব বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনাকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy