থমকে থাকা শিল্প প্রকল্প জেটগতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে এ বার সেগুলি নজরদারির রাশ নিজের হাতে নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ঝিমিয়ে থাকা শিল্পোৎপাদনে প্রাণ ফেরাতেই প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ। সরকারি সূত্রে এই ইঙ্গিত দিয়ে জানানো হয়েছে, এ ধরনের বেশ কিছু বড় প্রকল্পে ১৮ লক্ষ কোটি টাকা বা ৩০ হাজার কোটি ডলার লগ্নি আটকে রয়েছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ‘প্রকল্প নজরদারি গোষ্ঠী’ বা ‘প্রজেক্ট মনিটরিং গ্রুপ’ (পিএমজি)-এর নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়েছেন মোদী।
আগে ওই গোষ্ঠী ছিল মন্ত্রিসভার সচিবালয়ের অধীনে। কিন্তু লগ্নির পথে বাধা কাটিয়ে কারখানার উৎপাদনকে টেনে তুলতে সব নিজেই দেখভাল করতে চান তিনি। পিএমজি-র নজরদারিতে এ রকম ১৮০টি প্রকল্পকে দ্রুত ছাড়পত্র দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। প্রধানমন্ত্রীর নজরে মূলত পরিকাঠামো প্রকল্পগুলি। যার মধ্যে আছে কয়লা, বিদ্যুৎ, ইস্পাতের মতো শিল্প। এ ক্ষেত্রে বহু সংস্থাই লগ্নি করতে নেমেও লাল ফিতের ফাঁসে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছে বলে অভিযোগ শিল্পমহলের।
অথচ লাল ফিতের ফাঁস নয়, লাল কার্পেট পেতে দেশি-বিদেশি শিল্পপতিদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন মোদী। আর সেই লক্ষ্যেই সেপ্টেম্বরে তিনি ঘোষণা করেন ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প, যার মূল কথা “আসুন, যাবতীয় পণ্য ভারতে তৈরি করুন। তা বিক্রি করুন এ দেশের বিশাল বাজারে। রফতানি করুন বাকি বিশ্বেও।” কিন্তু তিনি ক্ষমতায় আসার পরে কেটেছে ছ’মাসেরও বেশি সময়। অর্থনীতিকে এখনও তেমন চাঙ্গা করা যায়নি বলে ঘরে-বাইরে সমালোচনাও শুরু হয়েছে। শিল্পোৎপাদনও বাড়া তো দূরের কথা, অক্টোবরে তা সরাসরি কমেছে ৪.২ শতাংশ।
সব সমালোচনার জবাব দিতেই তাই সচিবালয়ের হাত থেকে প্রকল্প নজরদারির দায়িত্ব মোদী নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্র। মোদীর লক্ষ্য উপযুক্ত পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রথমে থমকে থাকা বিভিন্ন প্রকল্পে গতি ফেরানো এবং শিল্পের সামনে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা। বস্তুত নির্বাচনী ইস্তাহারে ‘শিল্প-বন্ধু’ হওয়ার প্রতিশ্রুতিই দিয়েছিলেন মোদী।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরের জনৈক অফিসার মনে করছেন, ‘মোদী’-র নামেই যে-‘জাদু’ আছে, তাতেই কাজ অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। ফলে আগে যে-ভাবে ঢিমেতালে কাজ এগোত, তার চেয়ে তফাত হবে অনেকটাই। সরকারি স্তরে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগও কমবে বলে আশা সংশ্লিষ্ট মহলে।
ওই সূত্রেরই খবর, মোদী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন যে-আমলা তাঁর আস্থাভাজন ছিলেন, তাঁকেই পিএমজি-র প্রধান করা হচ্ছে। নামমাত্র যে-কয়েক জন আমলার সঙ্গে বসে মোদী বড়সড় সিদ্ধান্ত নেন, তিনি তাঁদের অন্যতম। এমনকী মন্ত্রীদের অনেকের চেয়েও ওই আমলাকে তিনি পছন্দ করেন বলে ইঙ্গিত মিলেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে। ইতিমধ্যেই পিএমজি-র দ্বারস্থ হয়েছে দক্ষিণ কোরীয় ইস্পাত সংস্থা পস্কো। ওড়িশায় ১২০০ কোটি ডলারের প্রস্তাবিত প্রকল্পটিই দেশে এ পর্যন্ত বৃহত্তম বিদেশি লগ্নি। তবে প্রকল্প শুরু করতে ন’বছর অপেক্ষা করছে সংস্থা। টাটা পাওয়ার, আদানি পাওয়ারের মতো বেশ কিছু প্রথম সারির সংস্থার প্রকল্পও ছাড়পত্রের অপেক্ষায়।
প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন মনমোহন সিংহই পিএমজি গঠন করছিলেন, যাতে লাল ফিতের ফাঁস এড়িয়ে দ্রুত শিল্প প্রকল্প রূপায়ণ করা যায়। তৈরি হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৯৭টি থমকে থাকা প্রকল্প রূপায়ণে সাহায্য করেছে গোষ্ঠী।
প্রসঙ্গত, ঋণের অত্যধিক দায় মেটাতে গিয়েও বড়সড় পরিকাঠামো প্রকল্প যাতে থমকে না-যায়, সে জন্য ইতিমধ্যেই উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। সেই প্রয়াস সফল করার জন্য পরিকাঠামো ও ভারী শিল্পকে চাঙ্গা করতে তাদের নেওয়া পুরনো ব্যাঙ্কঋণের শর্ত চলতি সপ্তাহে সহজ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কও। ব্যবস্থা নিয়েছে এই শিল্পে ঋণ দিতে গিয়ে ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা যাতে না-বাড়ে, সে জন্যও। শীর্ষ ব্যাঙ্ক বলেছে, যে-সব দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্পে নেওয়া ব্যাঙ্কঋণের অঙ্ক ৫০০ কোটি টাকার বেশি, সেগুলিই এই সুবিধার আওতায় আসবে। এ ক্ষেত্রে ঋণটি অবশ্য ২৫ বছরের বেশি মেয়াদের হবে না। এ ধরনের ঋণকে ঢেলে সাজায় সায় দিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক।
এ বার তারই পরিপূরক হিসেবে বড় প্রকল্পকে দিনের আলো দেখানোর কাণ্ডারি হতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy