২২ নভেম্বর ২০২৪
Ayurved

শৈশব থেকে কৈশোর, সার্বিক বিকাশে সুবর্ণপ্রাশনের গুরুত্ব বহুমুখী, ‘কাশ্যপ সংহিতার’ এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আয়ুর্বেদিক পরিভাষায় জানাচ্ছেন আয়ুর্বেদাচার্য ডাঃ দেবব্রত সেন

‘কাশ্যপ সংহিতা’য় বর্ণিত সুবর্ণপ্রাশন একটি প্রাচীনতম এক সোনার ন্যানো ওষুধের প্রয়োগ। যার মূল লক্ষ্য হল শিশুদের মধ্যে স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধিমত্তা ও অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করা।

আয়ুর্বেদাচার্য ডাঃ দেবব্রত সেন

আয়ুর্বেদাচার্য ডাঃ দেবব্রত সেন

এবিপি ডিজিটাল ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো
শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৯:১৪
Share: Save:

আমরা সবাই জানি শৈশব থেকে কৈশোর শিশুর স্বাস্থ্য নির্ভর করে বেশ কিছুটা তার জিনের উপরে। হ্যাঁ, কথাটি সঠিক হলেও, আরও বেশ কয়েকটি বিষয় রয়েছে যেগুলি কোনও শিশুর স্বাস্থ্য তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন সংশ্লিষ্ট শিশুর ডায়েট, পুষ্টি, তাকে কোন পরিবেশে কী ভাবে বড় করা হচ্ছে ইত্যাদি। এই বিষয়গুলির দিকে গুরুত্ব না দিলে পরবর্তীকালে শিশুর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ব্যঘাত ঘটতে পারে। কিন্তু এই ব্যস্ত জীবনে শিশুর বৃদ্ধির সময়ে বেশ কিছু বিষয়ে খামতি থেকেই যায়। তা হলে উপায়!

উপায় রয়েছে আযুর্বেদে।বৃদ্ধ জীবক রচিত ‘কাশ্যপ সংহিতা’ কৌমারভৃত্যের প্রাচীনতম ও অন্যতম পাঠ্যপুস্তক। এর আটটি শাখায় মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের যত্ন নিয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই বইতেই তুলে ধরা হয়েছে এমন এক পদ্ধতির কথা, যা কোনও শিশুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে দৃঢ় করে তুলতে পারে। এই পদ্ধতিটি হল সুবর্ণপ্রাশন — অর্থাৎ সোনাতেই লুকিয়ে রয়েছে শিশু স্বাস্থ্যের গুঢ় রহস্য।

‘কাশ্যপ সংহিতা’য় বর্ণিত সুবর্ণপ্রাশন একটি প্রাচীনতম এক সোনার ন্যানো ওষুধের প্রয়োগ। যার মূল লক্ষ্য হল শিশুদের মধ্যে স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধিমত্তা ও অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভারতে সুবর্ণপ্রাশন থেরাপি ব্যপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরাও শিশু পুষ্টির নেপথ্য সুবর্ণপ্রাশনের কথা তুলে ধরেছেন। যার ফলও মিলেছে চোখে পড়ার মতো। দেশের বিভিন্ন আয়ুর্বেদ কেন্দ্র জুড়ে প্রতি মাসের একটি নির্দিষ্ট সময় পরিচালিত হচ্ছে এই সুবর্ণপ্রাশন। বহু অভিভাবক তাদের সন্তানের পুষ্টির ও সুস্থতার জন্য সাহায্য নিচ্ছেন এই পদ্ধতির।

এই সুবর্ণপ্রাশন আসলে কী? সুবর্ণ শব্দের অর্থ স্বর্ণ। প্রাশন অর্থাৎ ভোজন। অর্থাৎ সুবর্ণপ্রাশনের আভিধানিক অর্থ হল স্বর্ণভোজন। তবে আক্ষরিক অর্থে কি স্বর্ণ ভোজন করা সম্ভব। আসলে সুবর্ণপ্রাশন হল একটি রসায়ন চিকিৎসা। যেখানে কলয়েডাল সোনার ধাতব সুক্ষ্ম কণা সুবর্ণভস্মে ব্যবহার করা হয়। ক্লিনিক্যাল এবং ফার্মাকোলজিকাল স্টাডিজে এই সুবর্ণপ্রাশনা থেরাপির ইমিউনোমোডুলেটরি, নোট্রপিকের পাশাপাশি থেরাপিউটিক প্রভাব দেখানো হয়েছে।

আয়ুর্বেদ অনুসারে, কোনও মানুষের শরীর মাটি, বায়ু, আগুন, জল এবং আকাশের মৌলিক উপাদান দিয়ে গঠিত। এবং তাঁর স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য এই উপাদানগুলির অনুপাত শরীরের মধ্যে সমান হওয়া আবশ্যক। কিন্তু আমরা যে পরিবেশে, যেভাবে বসবাস করি, তাতে এই ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। জন্মের পরে শিশু দেহের সেই ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। সুবর্ণপ্রাশন পদ্ধতির মাধ্যমে সেই সমস্যাকেই দূর করা হয়। আয়ুর্বেদাচার্যরা মনে করেন, শিশুদের শারীরিক, মানসিক, বৃদ্ধিবৃত্তিক এবং আধ্যাত্মিক সুস্থতা, এবং সর্বোত্তম থেরাপিউটিক প্রভাব পেতে এটি ক্রমাগত পরিচালনা করা উচিত।

কী ভাবে তৈরি হয় সুবর্ণপ্রাশন? আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কাশ্যপ সংহিতায় ঐতিহ্যগতভাবে বিশুদ্ধ সুবর্ণকে ঘষার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর পরে সুবর্ণ ভস্মের সমান অনুপাতে মধু এবং ঘৃত মিশিয়ে একটি সুক্ষ্ম কলয়েডাল সাসপেনশন তৈরি করা হয়। এই কম ডোজ ইমিউন রেসপন্স ট্রিগার করে যা একটি শিশুকে ভিতর থেকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। সর্বোপরি বিভিন্ন টক্সিন এবং অ্যালার্জেনের বিরুদ্ধ শিশুদেহে অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করে।

ঘৃত, ব্রাহ্মী (Bacopa Monnieri), মন্ডুকপর্নী (Centella Asiatica), যষ্টিমধু (Glycyrrhiza Glabra), শঙ্খপুষ্পী (Convolvulus Pluricaulis), ভাচা (Acorus Calamus) এবং গুরুচী (Tinospora Cordifolia)র মতো মেধ্য ও রসায়ন ভেষজ সাধারণত সুবর্ণবিন্দু তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

তবে সুবর্ণপ্রাশনের নির্দিষ্ট একটি পদ্ধতি রয়েছে। যে পদ্ধতি অনুসরণ করলে, তার উপকারিতা অনেকাংশেই বৃদ্ধি পায়। স্বনামধন্য আয়ুর্বেদাচার্য দেবব্রত সেন সুবর্ণপ্রাশন খালি পেটে প্রদানের পরামর্শ দিচ্ছেন। তাঁর মতে —

  • সর্বাধিক শোষণ নিশ্চিত করতে খাবার খাওয়ার পরে অন্তত ২ ঘণ্টার ব্যবধান নিতে হবে।
  • জন্ম থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত সুবর্ণপ্রাশন দেওয়া যায়
  • যদিও কিছু অনুশীলনকারী এটি শুধুমাত্র ১২ বা ১৪ বছর পর্যন্ত দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
  • নুন্যতম থেরাপি ছ’মাস, এক বছর থেকে দু’বছর সুপারিশ করা হয়।
  • সর্বোত্তম পদ্ধতি হল কম ডোজ সুবর্ণপ্রাশন (স্বর্ণাভস্মের প্রতি ডোজ ০.২ মিলিগ্রামের কম) ৩ মাসের জন্য
  • যদি এই পদ্ধতিতে সম্ভব না হয়, তা হলে সুবর্ণপ্রাশনা প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ দিনের জন্য দেওয়া হয়। এই ধরনের ৬-১২টি চক্র হওয়া উচিত। সর্বোত্তম স্বাস্থ্য সুবিধা পেতে এর পুনরাবৃত্তি করা হয়।
আয়ুর্বেদাচার্য ডাঃ দেবব্রত সেন

আয়ুর্বেদাচার্য ডাঃ দেবব্রত সেন

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের মতে, সুবর্ণপ্রাশনের উপকারিতা বহুমুখী। বিশেষত শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বৃদ্ধিতে বহুলাংশে এই পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। এক নজরে দেখে নিন সুবর্ণপ্রাশনের ঠিক কী কী উপকারিতা রয়েছে —

  • সুবর্ণপ্রাশন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সাধারণ সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই ভাবে শিশুদের প্রায়ই অসুস্থ হওয়া থেকে বিরত রাখে।
  • এটি শিশুদের শারীরিক শক্তি, শরীরের সঠিক বৃদ্ধি তৈরিতে সাহায্য করে এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বাড়ায় এবং সর্বোপরি স্ট্যামিনা উন্নত করে।
  • সুবর্ণপ্রাশনের নিয়মিত ডোজ শিশুর বুদ্ধিমত্তা, উপলব্ধি করার ক্ষমতা, তীক্ষ্ণতা, বিশ্লেষণ ক্ষমতা এবং স্মরণশক্তিকে এক অনন্য উপায়ে উন্নীত করে।
  • এটি হজমশক্তিকে উন্নত করে এবং পাচন সংক্রান্ত সমস্যা কমায়
  • সুবর্ণপ্রাশন শিশুর খিদেও বাড়ায়
  • এটি কোনও শিশুর প্রাথমিক বিকাশের সময় সেই শিশুকে লালনে সাহায্য করে
  • এটি বাচ্চাদের মধ্যে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে যা ঋতু পরিবর্তন এবং অন্যান্য প্রচলিত সংক্রমণের কারণে রোগ এবং অভিযোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা ঢাল হিসেবে কাজ করে।
  • এটি শরীরকে যে কোনও অসুস্থতার ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে সাহায্য করে
  • উদ্বেগ, আক্রমণাত্মকতা, বিরক্তি, এবং মনোযোগ চাওয়ার আচরণ হ্রাস করে

বিশদে জানতে ক্লিক করুন - www.drdebabratasen.com

ক্লিনিকে অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য যোগাযোগ করুন এই নম্বরে 9830339339

এই প্রতিবেদনটি ‘আয়ুর্বেদাচার্য ডঃ দেবব্রত সেন’-এর সঙ্গে আনন্দবাজার ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।

অন্য বিষয়গুলি:

Ayurved
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy